|
|
|
|
বন্যা হলে ভোট হবে কী ভাবে, উদ্বেগে কর্তারা
সুমন ঘোষ ও অভিজিৎ চক্রবর্তী • মেদিনীপুর |
ঘোষণা হয়ে গিয়েছে ভোটের নির্ঘণ্ট। এ বারের ত্রি-স্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে চলেছে ভরা বর্ষায়। আর তাতেই উদ্বেগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। গোদের উপর বিষফোড়ার মতো চলতি নিম্নচাপ প্রশাসনের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। কারণ, এই নিম্নচাপের জেরেই জেলার একাধিক জায়গা জলমগ্ন হয়েছে। ইতিমধ্যেই জলের তোড়ে ভেসে মৃত্যু হয়েছে এক যুবকেরও। বিশেষত, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল ও সবং সামান্য বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়। বেশি বৃষ্টি হলে জেলার অর্ধেক ব্লকই বন্যা কবলিত হয়। প্রশাসনকে ত্রাণ শিবির খুলে মানুষকে আশ্রয়, খাবার দিতে হয়। হিমশিম খেতে হয় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায়। কখনওবা সেনা নামাতে হয়। মানুষ যেখানে নিজের প্রাণ বাঁচাতেই জেরবার সেখানে ভোট নেওয়া কী ভাবে সম্ভব? এই আশঙ্কা থেকে ইতিমধ্যেই সতর্ক হয়েছে জেলা প্রশাসন। উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনকেও। ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারীর কথায়, “আমরা সব সম্ভাবনার কথা ভেবে প্রস্তুত হচ্ছি। অল্প বৃষ্টি বা কোনও এলাকা সামান্য জলমগ্ন হলে সেখানে ভোট করাতে খুব একটা অসুবিধা হবে না। কিন্তু বৃষ্টি বেশি হলে কী হবে, তা নিয়ে চিন্তা থাকছেই।” পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তা বলেন, “আমরা সব রকমের পরিস্থিতির কথা ভেবেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
ভরা বর্ষায় ভোট করাতে প্রশাসন কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?
প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রায় এক মাস আগে থেকেই সেচ দফতরের সঙ্গে এই বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। তা ছাড়া নদীবাঁধ সংস্কারের কাজ যেমন চলছে তেমনি বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মীকে আনার ব্যবস্থা হয়েছে। একাধিক স্পিড বোট, মোটর চালিত নৌকা ও সাধারণ নৌকা মজুত রাখা হচ্ছে। এ ছাড়াও আলোর জন্য উঁচু জায়গায় জেনারেটরের ব্যবস্থা, মোমবাতি প্রভৃতি মজুত রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, একসঙ্গে অনেক এলাকা জলমগ্ন হলে কী হবে? সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিও এ নিয়ে চিন্তিত। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সম্পাদক দীপক সরকারের কথায়, “বামপন্থীরা সব রকমের পরিস্থিতির সঙ্গেই নিজেদের মানাতে পারে।” কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক স্বপন দুবে বলেন, “এটা চিন্তার বিষয়। নিশ্চই কমিশন ও প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।” একই রকম উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতিও।
অতি সামান্য বৃষ্টিতেও জলমগ্ন হয় ঘাটাল, সবং, পিংলা, কেশপুর, ডেবরা, নারায়ণগড়ের একাংশ-সহ খড়্গপুর গ্রামীণ ব্লকের একাধিক জায়গা। একটু বেশি বৃষ্টি হলে কেশিয়াড়ি, দাঁতন, গোপীবল্লভপুর, সাঁকরাইল, মেদিনীপুর সদর ব্লক, গড়বেতা-সহ একাধিক এলাকায় বন্য পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রশাসন সূত্রে খবর, এখনও ভারী বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এটা ঠিক যে, বৃষ্টি ও বন্যা হবে এটা ধরে নিয়ে এগিয়ে চলেছে প্রশাসন। তাই যে সমস্ত এলাকার রাস্তা প্লাবিত হয়, বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায় সেই ব্লকগুলিকে ট্রাক্টর রাখতে বলা হয়েছে। যাতে বাস বা ছোট গাড়ি না পেলেও ভোটকর্মীরা ট্রাক্টরে যাবতীয় সরঞ্জাম বুথে পৌঁছতে পারেন। কিছু নৌকোও রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে নৌকোতে করে ভোটকর্মীদের বুথে পৌঁছে দেওয়া যায়। কিন্তু যদি বুথেই গলা সমান জল থাকে, তখন? জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “তখন মানুষকে বাঁচাব না ভোট করব। যদি ভোট করাতেই হয় তখন নৌকোর উপরেই ভোট করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বুথে সুযোগ থাকলে ভাল, না থাকলে অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় নৌকোর উপরেই ব্যালট বক্স নিয়ে থাকবেন ভোটকর্মীরা। যিনি আসবেন তিনি ভোট দেবেন।” বুথের স্থান পরিবর্তন হলে ভোটারদের তা জানাবেন কী করে? তাঁর কথায়, “বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে তা সম্ভব হবে না। তখন জলমগ্ন মানুষকে উদ্ধার করা বেশি জরুরি। ভোট নয়।” |
|
|
|
|
|