|
|
|
|
আসন ফাঁকা পড়ে গড়বেতায় |
বিরোধী নেই, তবু প্রার্থী দিতে পারল না তৃণমূল |
সুমন ঘোষ • গড়বেতা |
বিরোধীরা কোণঠাসা। প্রার্থীই দিতে পারেনি।
কিন্তু শাসকদল? প্রার্থী পদ নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর পারস্পরিক মনোমালিন্য, চোখ রাঙানি আর ধমক-ধামকে শেষ পর্যন্ত গড়বেতা-১ পঞ্চায়েত সমিতির বেনাচাপড়া আসনে প্রার্থী দিতে পারল না তৃণমূল।
সিপিএম বা কংগ্রেসে পঞ্চায়েত সমিতির ওই আসনে মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি। শাসকদলও প্রার্থী দিতে না পারায় ওই আসনে আপাতত নির্বাচনই থমকে গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ক্ষেত্রে ফের নির্বাচন করতে হবে। তবে, এখনই নয়, পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ হওয়ার ছ’মাসের মধ্যে গড়বেতার ওই আসনে নির্বাচন পর্ব সারতে হবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন ব্লকে একটি আসনে একই দলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, এমন ঘটনা বিরল নয়। এ ব্যাপারে এগিয়ে রয়েছে শাসকদলই। গড়বেতার বেনাচাপড়ায় ফাঁকা মাঠেও গোল দিতে পারল না তারা। কেন?
দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা: এর প্রথম এবং শেষ কারণ, গোষ্ঠী কোন্দল। তৃণমূলের বেনাচাপড়া অঞ্চল কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই আসনে প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে মে মাসের মাঝামাঝি থেকেই একাধিকবার বৈঠক করেছিলেন স্থানীয় নেতৃত্ব।
ওই অঞ্চল কমিটির এক প্রভাবশালী নেতা বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির
ওই আসনটির জন্য প্রার্থী বাছতে গিয়ে রাতের ঘুম চলে গিয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে সাত জনকে বাছাই করা হলেও তাঁদের এক জনের বিরুদ্ধে অন্য
জনের অভিযোগে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন অঞ্চল কমিটির নেতারা।”
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শেষ পর্যন্ত সাত জনের মধ্যে থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দু’জনের নাম ঠিক করা হয়। ২৬ মে ওই দু’জনের মধ্যে থেকে প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত করতে গিয়ে ফের বিপাকে পড়েন নেতৃত্ব। অঞ্চল কমিটির এক নেতা বলেন, “দুই প্রার্থীই পরস্পরের বিরুদ্ধে সিপিএম ‘ঘনিষ্ঠতা’র অভিযোগ তুলে চোখ রাঙাতে থাকেন। এ অবস্থায় ফের ভেস্তে যায় প্রার্থী নির্বাচন।”
প্রার্থী বাছার দায়িত্ব এ বার সঁপা হয় ব্লক নেতৃত্বকে। ব্লক স্তরের এক নেতা বলেন, “ভুলটা আমাদেরই। আমরা ভেবেছিলাম, শেষ মুহূর্তে ওই দু’জনের মধ্যে কোনও এক জনকে বেছে দেব। তার পরে একেবারে শেষ পর্বে গিয়ে তাঁর মনোনয়ন জমা দিয়ে দেওয়া হবে। যাতে অন্য জন পাল্টা মনোনয়ন জমা দেওয়ার সুযোগ না পান।” কার্যত শেষ লগ্নে বাজিমাত করতে গিয়েই বিপত্তি ডেকে আনেন তাঁরা। বেনাচাপড়ার তৃণমূল নেতা তথা এ বারের গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী শিবু বাগ বলেন, “পঞ্চায়েত স্তর থেকে যে প্রার্থীর নাম পাঠানো হয়, ব্লক তা মানেনি। মনোনয়নের শেষ দিনে ব্লক নেতৃত্ব মমতা লোহার নামে এক জনকে প্রার্থী করতে উদ্যোগী হন। কিন্তু তাঁরা যতক্ষণে ব্লক অফিসে পৌঁছন, ততক্ষণে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় পেরিয়ে গিয়েছে।”
গড়বেতা-১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী স্থানীয় তৃণমূল নেতা শ্যামল বাজোরিয়াও বলেন, “এ ব্যাপারে আমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।” কিন্তু সাত দিন ধরে মনোনয়ন জমা নেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও পঞ্চায়েত সমিতির মতো গুরুত্বপূর্ণ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে কেন শেষ দিনটি বেছে নেওয়া হল তা নিয়ে এখন দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে।
অথচ, গড়বেতা-১ ব্লকে সিপিএম এখন প্রায় অস্তিত্বহীন। গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬২টি আসনের মধ্যে একটি আসনেও প্রার্থী দিতে পারেনি তারা। পঞ্চায়েত সমিতির ৩৫টি আসনের মধ্যে তাদের প্রার্থী রয়েছে মাত্র তিনটিতে। দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের অভিযোগ, “শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর কেন, রাজ্য জুড়েই তো সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে কি প্রার্থী দেওয়া যায়? বেনাচাপড়াতেও প্রার্থী দিতে গিয়ে আমাদের শাসকদলের চোখরাঙানির সামনে পিছু হটতে হয়েছে।”
তবে শুক্রবার এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে, বিরোধীদের বাজার-ফাঁকা করে দেওয়া শাসকদলের এখন মাথাব্যথা নিজেদের নিয়েই। তৃণমূলের অধিকাংশ গোষ্ঠীর নেতারাই নিজের অনুগামীদের প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন। আর তা করতে গিয়েই এক-একটি আসনে একাধিক মনোনয়ন জমা পড়েছে। গড়বেতা-১ ব্লকের ১৬২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনের জন্য তৃণমূলের ২২৪ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। পঞ্চায়েত সমিতির ৩৫ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা পড়েছে ৫৮টি। এমনকী, ব্লক সভাপতি দিলীপ
পালের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত সমিতিতে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন দলেরই এক পরিচিত কর্মী। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা কোনও রাখঢাক না রেখেই
তাই বলছেন, “প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে কোনও গোষ্ঠীই সহমত না হওয়ায় ব্লক নেতৃত্ব প্রবল চাপে পড়ে গিয়েছেন।
সে চাপ এতটাই যে, বেনাচাপড়া পঞ্চায়েত সমিতি আসনের জন্য
প্রার্থী বাছাইয়ের কথা কারও খেয়ালই ছিল না।”
|
পুরনো খবর: প্রায় তিনশো আসনে বিরোধীশূন্য তৃণমূল |
|
|
|
|
|