মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়া প্রার্থীর উপরে হামলার অভিযোগ উঠল দক্ষিণ দিনাজপুরেও। বৃহস্পতিবার হরিরামপুরে। কংগ্রেসের অভিযোগ, আদিবাসী মহিলা প্রার্থীসহ কয়েক জনকে মারধর করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁর মধ্যে রেজাউল করিম নামে এক তৃণমূল কর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তৃণমূলের হরিরামপুরের নেতা তথা জেলা তৃণমূলের সম্পাদক সোনা পালের নেতৃত্বে হামলা হয় বলে ব্লক কংগ্রেস সভাপতি রুস্তম আলি অভিযোগ করেন। আক্রান্ত আদিবাসী মহিলা প্রার্থী মাইকো মুর্মু হরিরামপুর থানায় তৃণমূল নেতা সোনা পাল এবং মোবারক হোসেনের নামে মারধরের নালিশ করেন। গঙ্গারামপুর এসডিপিও স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “নালিশ পেয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
যদিও তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সোনা পাল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, “মিথ্যা অভিযোগ। এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। ভুটভুটি উল্টে দুর্ঘটনায় কয়েক জন আহত হন বলে খবর পেয়েছি।” হরিরামপুরের ব্লক কংগ্রেস সভাপতি রুস্তম আলি অভিযোগ করেন, “এ দিন পুন্ডরি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরাহার গ্রাম সংসদের আসনে দলের মহিলা প্রার্থী মাইকো মুর্মু সহ কর্মী সমর্থকরা মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছিলেন। হরিরামপুর ব্লক অফিসে যাওয়ার সময়ে তৃণমূল নেতা সোনা পাল হামলা চালিয়ে ভুটভুটি থেকে নামিয়ে মারধর করেন। মহিলা প্রার্থীর শাড়ি ছিঁড়ে যায়।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা হরিরামপুরের বিধায়ক বিপ্লব মিত্র বলেন, “সোনা পালের বদনাম রটাতে হরিরামপুরে কংগ্রেস সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এ সব শুরু করেছে। তদন্ত হলেই সব তথ্য সামনে আসবে।”
বুধবার কোচবিহারে মনোনয়ন জমা কেন্দ্র করে গোলমালের ঘটনায় কোচবিহার জেলায় ১৯ জন তৃণমূল সমর্থককে গ্রেফতার করল পুলিশ। বুধবার রাতে তাঁদের ১৮ জন জামিনে ছাড়া পান। তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে ৩ জন সিপিএম সমর্থককেও গ্রেফতারের পর রাতেই ব্যক্তিগত জামিনে থানা থেকে ছাড়া হয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “স্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জেলার নানা এলাকা থেকে ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়।”
যদিও পুলিশের ওই বক্তব্যে খুশি নন বামেরা। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “নাটক হচ্ছে।” এমতাবস্থায়, জেলা বামফ্রন্ট ঠিক করেছে, মহকুমাশাসকের দফতরে সব প্রার্থীর মনোনয়নের বন্দোবস্ত করা না হলে দিনহাটা ১ নম্বর, মেখলিগঞ্জ ও হলদিবাড়ি ছাড়া জেলার বাকি ৯টি ব্লকে শুক্রবারও মনোনয়ন জমা করা হবে না। শুক্রবার জেলাশাসকের দফতরে বিক্ষোভের কর্মসূচিও নিয়েছে বাম দলগুলি। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “প্রশাসন আশ্বাস দিলেও বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। কোচবিহার ১ নম্বর ব্লক অফিসে ঢোকার বিভিন্ন রাস্তায় এদিনও তৃণমূল আশ্রিতরা জমায়েত করে নজরদারি চালায়। যানবাহনেও বামেদের খোঁজে তল্লাশি হয়।” তৃণমূল অবশ্য পুলিশের ভূমিকায় খুশি। জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকে বামেরাই লাঠিসোটা নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে মনোনয়ন চলার সময়ে আমাদের প্রার্থীদের ওপর হামলা করে। সিতাই ও তুফানগঞ্জেও ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়েছে। পরাজয় সম্ভাবনা বুঝে নির্বাচন প্রক্রিয়া ভেস্তে দিতে এ সব করা হচ্ছে। পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবেই কাজ করছে।” এদিন কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী অবশ্য সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলেন, “এদিন থেকে মনোনয়ন জমা নিয়ে একশো শতাংশ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়েছে। কোচবিহার ১ ব্লকে ১৬ জন ও সিতাইয়ে ৫ জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ ভিডিও গ্রাফির মত আরও কিছু ব্যবস্থাও থাকছে। এসডিও অফিসে মনোনয়নের ব্যবস্থার দাবির বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে।” |