|
|
|
|
১০০ দিনের কাজে ‘কুয়ো-চুরি’, নালিশ |
অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
দিনেদুপুরে কুয়ো চুরি! এমনও হয় নাকি? এক পক্ষের অভিযোগ, অন্তত ২৫টি কুয়ো চুরি হয়েছে। অন্য পক্ষের দাবি, চুরি নয়, ১৫ কুয়ো নিয়ে ‘একটু গোলযোগ’ হয়েছে। কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যে তা নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার সরগরম জলপাইগুড়ির অরবিন্দ পঞ্চায়েতে। খবরটা একেবারে হেলাফেলার নয়। ওই অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। গ্রামে গিয়ে সব জায়গায় কুয়ো খুঁজে পায়নি সরকারি দল। যা কি না ১০০ দিনের কর্মসংস্থান প্রকল্পে তৈরি হয়েছে বলে খাতায়-কলমে রয়েছে।
কুয়ো উধাওয়ের প্রাথমিক রিপোর্ট পৌঁছেছে রাজ্য সরকারের কাছেও। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সমীরণ মণ্ডলও বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, “অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতে কুয়ো তৈরি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়ে। সেই অনুযায়ী ব্লক থেকে তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠানো হয়। কিছু কুয়োর হদিস মেলেনি। তার ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
কিন্তু কুয়োগুলি গেল কোথায়?
এর বাড়ির উঠোন, ওর বাড়ির গোয়াল ঘরের পেছনে গিয়ে সরকারি আধিকারিকরা মাসখানেক ধরে কুয়োর খোঁজ করেই চলেছেন। কিন্তু কিছুতেই মিলছে না হিসেব। সরকারি খাতায় লেখা রয়েছে গ্রামে কুয়ো তৈরি হয়েছে ২৩৬টি, তন্নতন্ন করে খোঁজ চালিয়েও ১৫ কুয়ো খুঁজে পায়নি সরকারি দল। তা নিয়েই তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে গ্রাম জুড়ে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার আবর্তিত হচ্ছে কুয়ো ঘিরেই।
কী অভিযোগ রয়েছে? গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রামে ২৩৬টি পাকা কুয়ো তৈরির জন্য প্রায় ৫৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেই প্রকল্পের বেশ কিছু কুয়ো এমন কিছু ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে, যাঁদের নাম সরকারি তালিকায় নেই। সব কটি কুয়ো বসানোর আগেই কাজ শেষ করার রিপোর্ট পঞ্চায়েতের তরফে জমা দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে প্রশাসন জানতে পারে, তালিকা মতো কুয়ো তৈরি হয়নি। পাশাপাশি, কুয়োর রিংয়ের যে মাপ ধার্য করা হয়েছিল, তার চেয়ে ছোট মাপের কুয়ো গ্রামে বসানো হয়েছে। কত টাকার অনিয়ম ও তাতে সরকারি অফিসার-কর্মীদের কার কী ভূমিকা ছিল তাও প্রাথমিক ভাবে খতিয়ে দেখেছে প্রশাসন।
বাম শরিক আরএসপি-সিপিআই দখলে থাকা পঞ্চায়েতের আরএসপি প্রধান শঙ্করী ঘোষ দাবি করেন, “বর্ষার সময়ে জল উঠে যাওয়ায় গত বছর ২৫-৩০টি কুয়ো বসানোয় দেরি হয়। আর কুয়ো বসাতে গিয়ে দেখা গেল কমবেশি ১৫ জনের বাড়িতে আগে থেকেই কুয়ো রয়েছে। তাই তাদের কুয়ো দিয়ে আর কী হবে, আশপাশের যাদের বাড়িতে কুয়ো নেই তাদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে দোষ কোথায়?” উল্টে প্রধানের পাল্টা প্রশ্ন, “মানুষকে জল দেওয়া কি অন্যায়?” প্রধানের যুক্তিকে কটাক্ষ করে তৃণমূলের সদর ব্লক সভাপতি হারাধন সরকার বলেন, “প্রধান মানুষকে জল দেননি। জল ঢেলেছেন হিসেবে। আর তাতেই প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার পুরোটাই ভেসে গিয়েছে। টাকা কোথায় গেল তা খতিয়ে দেখতে দ্রুত তদন্ত শেষ করে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি টাকা নয়ছয়ের অভিযুক্তদের ভোট না দেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে।” যদিও উপপ্রধান তথা সিপিআই নেতা তাপস বিশ্বাস বলেন, “সাধারণ মানুষ সব জানেন। অপপ্রচারে তারা বিভ্রান্ত হবেন না।” তবে প্রধান স্বীকার করেছেন, প্রয়োজনের খাতিরেই কিছু পরিবর্তন হলেও তা জেলা প্রশাসনকে বলা হয়নি। জলপাইগুড়ির সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “শুধু কুয়ো কেন, হিসেবের খাতা খুললে অনেক পুকুর, নদী সবই গ্রাস করার ব্যাপার ধরা পড়বে। আর এটা শুধু সময়ের অপেক্ষা।” |
|
|
|
|
|