হাওড়ায় হারের শিক্ষা
সংগঠনই শক্তি, পুরনো মন্ত্রেই আস্থা আলিমুদ্দিনের
শুধু হাওয়ায় দল হয় না! জনসমর্থনের ভিতে ইমারত গড়তে সংগঠন লাগে। হাওড়া উপনির্বাচনের ফল থেকে উৎসাহ পেয়ে এই গোড়ার শিক্ষাতেই ফেরত যাচ্ছে সিপিএম। সামনে তাদের লক্ষ্য পঞ্চায়েত এবং তার চেয়েও আরও বেশি করে লোকসভা ভোট।
গত পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রথম বামেদের জনসমর্থনে ধস কিছুটা ঠেকাতে পেরেছে হাওড়া। এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানাতেই বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সিপিএমের ভোট সামান্য ১%-এর কাছাকাছি বেড়েছিল। কিন্তু হাওড়া লোকসভার উপনির্বাচনে ৪.৭% (২০১১-র তুলনায়) ভোটবৃদ্ধিকে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছে আলিমুদ্দিন। হাওড়া ‘মডেল’ অনুসরণ করেই জেলায় জেলায় একেবারে স্থানীয় স্তরে মানুষের দোরে দোরে যাওয়ার জন্য কর্মীদের পরামর্শ দিচ্ছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। পরামর্শ দিচ্ছেন ভয় না পেতেও। এখানেও তাঁদের হাতের কাছে বড় উদাহরণ উত্তর হাওড়া ও বালির অভিজ্ঞতা।
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত বিগত অন্তত ২৫ বছর উত্তর হাওড়া, বালি ছিল সিপিএমের প্রায় মৃগয়া ক্ষেত্র! কিন্তু ২০১১ সালের ভোটের পর থেকেই ওই দুই বিধানসভা এলাকায় তারা একেবারে কোণঠাসা। এ বার উপনির্বাচনের সময় বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে কিছু কর্মীকে বালি-উত্তর হাওড়ায় সংগঠনের কাজে নামানো গিয়েছিল। শাসক দলের আক্রমণের হাত থেকে তাঁরা রেহাই পাননি। কিন্তু দিনের শেষে বালিতে তৃণমূলের ‘লিডে’র বহর ২৮০০ ভোট! উত্তর হাওড়ায় ৬ হাজারের কিছু বেশি। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “দু’বছর ধরে বালি, উত্তর হাওড়ায় আমাদের পার্টি অফিস খোলার লোক ছিল না। বহু কর্মী ঘরছাড়া। এ বার কোনও মতে কিছু লোককে এলাকায় এনে ভোটের কাজ করানো হয়েছিল। তৃণমূলের মারদাঙ্গার পরেও যা ফল দেখা যাচ্ছে, আরও সাহস করে সংগঠন করতে পারলে ওই ব্যবধানটাও মিটিয়ে দেওয়া সম্ভব।” লোকসভা ভোটের আগে ঠিক সেটাই করতে চাইছে সিপিএম।
হাওড়ার বুথওয়াড়ি ভোটের হিসাব প্রাথমিক বিশ্লেষণ করে আরও কিছু ‘ইতিবাচক’ লক্ষণ খুঁজে পাচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব। গত অক্টোবরে জঙ্গিপুর লোকসভার উপনির্বাচনে কিছু বুথে শূন্য পেয়েছিল সিপিএম!
দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “ঠিক ওই রকম অবস্থা এখানে হয়নি। কিন্তু বালি, উত্তর হাওড়ার প্রায় ৭৫টি বুথের হিসাব ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, যেখানে আমাদের ৩৫০ ভোট আছে, সেখানে ৫০ পড়েছে! সব মানুষ ঠিকমতো ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে ওই দুই জায়গা থেকেই আরও হাজারদশেক ভোট শ্রীদীপ ভট্টাচার্যের বাক্সে পড়ত। তা হলে ফলটাও অন্য রকম হত!” এর পর থেকে বালি, উত্তর হাওড়ার মতো রাজ্যের অন্যত্রও গুটিয়ে থাকা এলাকায় সংগঠনের কাজে কর্মীদের ফিরতে বলছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
বস্তুত, রাজনৈতিক সংগঠনের বিশ্লেষণে ভোট দু’রকম। বাঁধা (কমিটেড) ভোট এবং ভাসমান (ফ্লেক্সিবল) ভোট। গত কয়েক বছরে ভাসমান ভোটের বেশির ভাগটাই চলে গিয়েছিল মমতার দিকে। তার পরে ভাঙন ধরেছে সিপিএমের বাঁধা ভোটেও। রাজনৈতিক নেতাদের মতে, সংগঠনের আদর্শ কাজ হচ্ছে, সম্ভাব্য সমর্থক মানুষকে বুথ পর্যন্ত টেনে নিয়ে আসা। বেশি হইচইয়ে না-গিয়ে, অলিতে-গলিতে ঘরোয়া প্রচারে হাওড়ায় সেই কাজটাই অনেকটা সফল ভাবে করতে পেরেছেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্রীদীপবাবু। এলাকা ধরে ধরে রাজনৈতিক ইতিহাস-ভূগোলও সম্যক জানা ছিল হাওড়ার প্রাক্তন জেলা সম্পাদকের। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীরই এক সদস্য বলছেন, “হাওড়ায় বিরাট হইচই করে আমরা কিছু করিইনি। শ্রীদীপবাবু হাওড়ায় যেটা করেছেন, সেটাই সর্বত্র পঞ্চায়েতে করব। হাঙ্গামার জন্য পঞ্চায়েতে অবশ্য অনেক জায়গায় কাজ করা যাবে না। কিন্তু পঞ্চায়েতটা মিটলেই লোকসভার জন্য একই কায়দায় নেমে পড়ব। তার প্রাথমিক নির্দেশও রাজ্য কমিটির মাধ্যমে আগেই দেওয়া হয়ে গিয়েছে।”
নিচু তারে বাঁধা প্রচারেই মমতার সঙ্গে বিজেপি-র ‘সখ্যে’র তত্ত্ব মহল্লায় মহল্লায় ছড়িয়ে দিতে চাইছে সিপিএম। লক্ষ্য সংখ্যালঘু ভোট। এবং এখানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে আব্দুর রেজ্জাক মোল্লারও কোনও মতের ফারাক নেই!
রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “সব ভোটে তো ওঁরা বিজেপি-কে ম্যানেজ করে জিতবেন না! কিন্তু লোকসভা ভোটের পরে তৃণমূল নেত্রী আবার কী করবেন, এই নিয়ে সংখ্যালঘুদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়ে গিয়েছে।” হাওড়ার পরে সেই সংশয় উস্কে দেওয়াই আলিমুদ্দিনের উদ্দেশ্য এবং সেই কাজেও ভরসা সংগঠন!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.