প্রশ্নের মুখে পুলিশি তদন্ত
মিলল আকাশের বস্তাবন্দি দেহ
পহরণের তিন দিন পর বছর তিনেকের এক শিশুর বস্তাবন্দি দেহ মিলল বাড়ির অদূরের এক বাগানে। এই ঘটনায় জেলা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পুলিশের অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, কিছু সূত্রের ভিত্তিতে ঘটনার তল পেতে আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছিল। তদন্তের জন্য দক্ষ অফিসারদের নিয়ে দু’টি দলও গড়া হয়েছিল। তদন্ত এগোচ্ছিলও আশানুরুপ। তবু অপহরনকারীদের সন্ধান মেলেনি।
জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমন মিশ্র বলেন, “তদন্তের জন্য বিশেষ দল তৈরি হয়েছিল। আমি নিজে বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত গোটা ঘটনার তদারকি করেছি।” দাবি যাই হোক পুলিশ যে ব্যার্থ তা স্পষ্ট। স্থানীয় মানুষ ও শিশুটির পরিবারও পুলিশের সক্রিয়তার কথা মানতে পারছেন না।
মঙ্গলবার সকাল দশটা নাগাদ বাড়ি-সংলগ্ন মাঠে প্রতি দিনের মতো খুড়তুতো দিদিদের সঙ্গে খেলতে গিয়েছিল সৌমেন্দ্রনাথ বল ওরফে আকাশ। দিদিরা বাড়ি ফিরলেও, ফেরেনি আকাশ। দিনভর খোঁজাখঁুজির পরও সন্ধান না মেলায় সন্ধ্যা নাগাদ শিশুটির পরিবারের পক্ষে নাকাশিপাড়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। পরদিন, বুধবার দুপুর নাগাদ আকাশের জ্যাঠামশাই জগন্নাথ বলের মোবাইলে আড়াই লক্ষ টাকা মুক্তিপন চেয়ে ফোন আসে। নম্বরটি দেওয়া হয় নাকাশিপাড়া থানায়।

ছোট্ট আকাশ।

শোকার্ত মা।
পুলিশ জানতে পারে, ৩১ মে দেবগ্রামের এক মাছ ব্যবসায়ীর নামে নম্বরটি তোলা হয়েছে। পুলিশের ওই ব্যবসায়ীকে জেরা করে জানতে পারে, সিমটি তিনি তোলেননি। তাঁর নামে ভুয়ো নথি জমা দিয়ে তোলা হয়েছে। ‘টাওয়ার লোকেশন’-এ জানা যায়, ফোনটি এসেছে বেথুয়াডহরি স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে। অপহরণকারীদের কথা মতো আকাশের জ্যাঠা বাড়ির পাশের একটি ব্যাঙ্কের গলিতে টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে রাত দশটা থেকে তিনটে পর্যন্ত দাঁড়িয়েও থাকেন। এলাকা ঘিরে ফেলে সাদা পোশাকের বড় বাহিনী। অলিগলিতে ঘাপটি মেরে বসে থাকেন আকাশের পরিবারের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীরাও। কিন্তু এই পরিকল্পনার কথা আঁচ পায় দুষ্কৃতীরা। জগন্নাথবাবু বলেন, “ওরা পুলিশ ও প্রতিবেশীদের উপস্থিতি অনুমান করতে পেরেছিল। আমাকে ফোনে বলে, ‘এত লোকের আনাগোনা কেন?’ আমি অস্বীকার করলেও ওরা আমাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল।” এর পর অপহরণকারী টাকা নিতে আর আসেনি। ফোনেও ধরা যায়নি তাদের। রাত তিনটে নাগাদ পুলিশ থানায় ফেরে। বাড়ি ফিরে যায় অপহৃত শিশুটির পরিবারের লোকজনও।
এর পর বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি-লাগোয়া এক বাগান থেকে শিশুটির বস্তাবন্দি দেহ মেলে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানায়, জলে ডুবিয়ে মারা হয়েছে আকাশকে। জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমন মিশ্র বলেন, “ঘটনার দিনই শিশুকে খুন করা হয়েছে। বুধবার তল্লাশি শেষে পুলিশ এলাকা ছাড়ার পরই দেহটি বাগানের ভিতরে ফেলে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দু’জনকে আটক করা হয়েছে। অপরাধী সকলেই স্থানীয়। বুধবার রাত দশটা নাগাদ ফোনটি এসেছিল স্টেশনের আশপাশের একটি মিষ্টির দোকানের কাছ থেকে।” কিন্তু এই ঘটনায় বেশ কিছু অমীমাংসিত প্রশ্ন উঠে আসছে।
তদন্তকারী এক পুলিশ অফিসার বলেন, “মুক্তিপন আদায় করা উদ্দেশ্য থাকলে ঘটনার দিনই কেন শিশুটিকে খুন করা হল? তাছাড়া টাকা নেওয়ার জন্য অপহরনকারীরা যে জায়গার কথা বলে তা অত্যন্ত জনবহুল ও সংকীর্ণ গলিপথ। সেখান থেকে বার হওয়া দুষ্কর।” তাছাড়া টাকা চেয়ে বাবার পরিবর্তে জ্যাঠার কাছে ফোন গেল কেন? সে প্রশ্নেও ধন্দে রয়েছেন পুলিশ কর্তারা। আকাশের দাদু নির্মলকান্তি বল নদিয়া জেলা চেম্বার্স অফ কমার্সের চেয়ারপার্সন। তাঁর সন্দেহ, “রেল লাইনের ধারে দিনরাত হেরোইনের ঠেক বসে। টাকার জন্য সেই চক্রেরই কেউ হয়ত এই কাজ করেছে।”
পরিবারের দাবি, তদন্তের স্বার্থে কিছু বলা যাবে না বলে ‘চুপ’ করেই ছিল পুলিশ। তাঁদের দাবি, ছেলে যখন গেছে তখন পুলিশ কিঞ্চিত্‌ ‘সরব’ হয়ে এ বার অন্তত দুষ্কৃতীদের ধরুক।

নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.