চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি
বিদেশের পিচেও শিখরে উঠে জেতালেন ধবন
বার বোঝা গেল তো, বেশ কয়েক বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট গুছিয়ে খেলার পর দেশের জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নামলে কেমন সফল হওয়া যায়?
কার্ডিফে বৃহস্পতিবার শিখর ধবনের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি আর ভারতের ২৬ রানে জয় টিভিতে দেখার পর আমাদের দেশের সমস্ত ক্রিকেট শিক্ষার্থীদের এই কথাটাই বলতে ইচ্ছে করছে।
মোহালিতে জীবনের প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলীয় বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ও রকম একটা সাইক্লোন তুলে সেঞ্চুরি করার পরেও শিখর সম্পর্কে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, বিদেশের মাঠেও এমন ইনিংস দেখাতে পারবে তো? আমি নিশ্চিত, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচে ওর প্রথম ওয়ান ডে সেঞ্চুরির পর ওই প্রশ্নটাও আর উঠবে না। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দলে শিখর ধবন নামটা মনে হয় এ দিনই লিখে ফেলেছে সন্দীপ পাটিল অ্যান্ড কোং।
আমাদের দেশে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট যখন এক রকম এলেবেলে হয়ে উঠেছে। আইপিএল যখন ঘরোয়া ক্রিকেটের টুঁটি টিপে ধরেছে, তখন দিল্লির এই বাঁহাতি ওপেনার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে, তথাকথিত সেই ম্যাড়মেড়ে ঘরোয়া ক্রিকেটেরই কী অপার মহিমা!
ছ-ছ’টা বছর ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার পর শিখরের ভারতীয় দলের হয়ে এক দিনের ক্রিকেটে আবির্ভাব ২০১০-এ। জীবনের প্রথম টেস্ট তো খেলল মোটে এ’বছরই। ৮২টা প্রথম শ্রেণির ম্যাচে প্রায় ছ’হাজার রান। ১৭টা সেঞ্চুরি, ২৪টা হাফসেঞ্চুরি। প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতার কী বিশাল ঝুলি নিয়ে দেশের হয়ে মাঠে নামছে ছেলেটা, সেটা এক বার ভেবে দেখুন। সে জন্যই তো এত আত্মবিশ্বাস, এত সাহস ওর।
অনেককে বলতে শুনেছি, শিখরের ভারতীয় দলে ঢুকতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আমি তাঁদের সঙ্গে একমত নই। শিখর একেবারে ঠিক সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেছে। ন’বছর ধরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে অর্জন করা আত্মবিশ্বাস যে এক জন ব্যাটসম্যানের কাছে কত বড় সম্পদ, তা নিজে এক জন ক্রিকেটার হয়ে আমি খুব ভালই বুঝি। শিখরের এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠার ‘রেসিপি’ এটাই। জীবনের প্রথম টেস্টেই যেমন একশোর বেশি স্ট্রাইক রেট রেখে সেঞ্চুরি করেছিল, ইংল্যান্ডের মাঠে প্রথম ওয়ান ডে সেঞ্চুরিও তাই। প্রতিভার সঙ্গে অভিজ্ঞতা আর সঠিক আত্মবিশ্লেষণের মিশেলের নামই শিখর ধবন। আমার মতে, অন্যরাও যাতে অন্তত পাঁচ-ছ’বছর ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার পর দেশের হয়ে খেলার সুযোগ পায়, সেটাই দেখুন আমাদের জাতীয় নির্বাচকেরা। তাতে ভারতীয় দলেরই ভাল হবে।

কার্ডিফে ধবন। ৯৪ বলে ১১৪ রান। ছবি: এএফপি
শুরুতে শিখরের ৯৪ বলে ১১৪, রোহিতের ৬৫ আর ডেথে জাডেজার ৪৭ নটআউট ইনিংস তিনটেই ভারতকে ৩৩১ রানের যে বিশাল পুঁজি এনে দিল, তাতেই জয় এল। না হলে ভারতের পেসাররা এ দিন যে রকম জঘন্য বোলিং করল, তাতে আমাদের ব্যাটসম্যানরা এই রানটা না পেলে জয় দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু করা বোধহয় ধোনির হত না।
শিখরের সঙ্গে এ দিন শুরুতেই রোহিত শর্মাকে ব্যাট করতে পাঠানোর সিদ্ধান্তটা ধোনির ‘মাস্টারস্ট্রোক’। সত্যি বলতে কী, ওপেনার হিসেবে মুরলী বিজয় আর রোহিতের মধ্যে যদি এক জনকে বাছতে বলেন, তা হলে আমি দশ বারের মধ্যে দশ বারই রোহিতকে বাছব। নিজের দিনে ওর চেয়ে ভাল ব্যাটসম্যান আর কেউ নেই। কিন্তু রোহিতের সমস্যাটা হল, ওর এই ‘নিজের দিন’-টা নিয়মিত আসে না। ধারাবাহিকতার অভাব। রোহিত এই সমস্যাটা মিটিয়ে ফেলতে পারলে ওদের ওপেনিং জুটিটা কিন্তু দাঁড়িয়ে যাবে।
কার্ডিফের উইকেট অনেকটা উপমহাদেশের উইকেটের মতোই। এ ধরনের পিচে বেশি শর্ট বল দিয়েছ কী মরেছ। দক্ষিণ আফ্রিকান পেসাররা সেই ভুলটাই করল আর সেটাকে মিডল ওভার্স-এ সামান্য কিছুক্ষণ সময় বাদে সারাক্ষণ দারুণ কাজে লাগাল ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। স্টেইন না থাকলে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পেশাদার আর আধুনিক দলের বোলিংয়েরও যে কী দশা হয়, বোঝা গেল এ দিন। স্টেইনের সঙ্গে ওদের অন্য বোলারদের অনেকটাই তফাত। স্টেইন থাকলে যেটা চট করে ধরা পড়ে না।
ভারতীয় বোলাররাও তো পাল্লা দিয়ে বাজে বল করে গেল। বিশেষ করে উমেশ যাদব। ফিল্ড প্লেসিং এক রকম, বোলিং হচ্ছে অন্য রকম! এ রকম ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বোলিংয়ে প্রাথমিক ভুল করলে তো সর্বনাশ! ইশান্তরা সেটাই করে গেল। নেহাত ব্যাটসম্যানরা প্রচুর রান তুলে নিয়েছিল বোর্ডে। আর একটু কম রান হলেই ম্যাচটা হাত থেকে বেরিয়ে যেত হয়তো। কিন্তু যে দিন ধোনির দল বোর্ডে বেশি রান রাখবে না, সে দিন ইশান্তদের কী হবে ভেবে কিন্তু আতঙ্কিতই লাগছে আমার।
ভারতের ইনিংসের শেষ দিকে জাডেজা ওই মারকাটারি ইনিংসটা না খেললে ভারত তিনশোর গণ্ডি পেরোত না। এ দিন ভারতের ২১০-১ থেকে আচমকা ২৬০-৫ হয়ে যাওয়া দেখে ২০১১-র বিশ্বকাপে নাগপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারতের ২৬৭-১ থেকে ২৯৬-এ অলআউট হয়ে যাওয়ার ঘটনা মনে পড়ছিল। এ দিনের আগে সেটাই ছিল দু’দেশের ওয়ান ডে-তে শেষ মুখোমুখি হওয়া। তফাতের মধ্যে একটাই। সে দিন সচিন তেন্ডুলকরের সেঞ্চুরি সত্ত্বেও ধোনিরা হেরেছিল। এ দিন ধোনিরা জিতল। কারণ, কার্ডিফে শিখর ধবনের সঙ্গে সঙ্গে একটা রবীন্দ্র জাডেজাও (২৯ বলে ৪৭ নটআউট আর বল হাতে ৯ ওভারে ২-৩১) যে ছিল!

রোহিতকে শুরুতে পাঠানো ধোনির মাস্টারস্ট্রোক

টার্নিং পয়েন্ট: দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের ৩১তম ওভারে উমেশ যাদবের শর্ট বলে ডে’ভিলিয়ার্সের ঠকে যাওয়া। দক্ষিণ আফ্রিকান ক্যাপ্টেনের ক্যাচ ফরোয়ার্ড স্কোয়ার লেগে জাডেজা ধরতেই ম্যাচ থেকে চূড়ান্ত হারিয়ে যাওয়া শুরু প্রোটিয়াদের।
সেরা শট: দক্ষিণ আফ্রিকার এ দিনের সেরা বোলার ম্যাকলারেনকে শিখরের ফ্লিক। শর্ট ফাইন লেগ দিয়ে বলটা চোখের নিমেষে মাঠের বাইরে চলে যায়।
সবচেয়ে বড় ভুল: তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে দু’প্লেসির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে ডেভিড মিলারের রান আউট হওয়া। মিলারের মতো ফিনিশারকে ভুল বোঝাবুঝিতে হারানোর মতো ধাক্কা যে সব সময়ই তার টিমের কাছে বিশাল।
মাস্টারস্ট্রোক: মুরলী বিজয়কে বসিয়ে রোহিত শর্মাকে দিয়ে ধোনির ওপেন করানো। রোহিত-শিখরের সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ শুরুতেই ব্যাকফুটে পাঠিয়ে দিয়েছিল ডে’ভিলিয়ার্সদের।
রবীন্দ্র জাডেজার বাঁহাতি স্পিন বোলিং ঠিক সময়ে ব্যবহার করাটাও। দুমিনির মতো ওয়ান ডে স্পেশ্যালিস্ট ব্যাটসম্যানকে আউট করে দক্ষিণ আফ্রিকার মিডল অর্ডারে আসল ধাক্কা দিয়েছিল জাডেজাই।
এক্স ফ্যাক্টর: শিখর ধবন। শুরুতে বড় ইনিংস খেলে ইনিংসের ভিত গড়ার দায়বদ্ধতা রয়েছে। বিলেতের মাঠে শর্ট বল করে ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপকে বধ করার যে স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা তা ভেস্তে গেল শিখরের কাট আর পুলেই।

ভারত
রোহিত ক পিটারসন বো ম্যাকলারেন ৬৫
ধবন ক অতিরিক্ত (ফাঙ্গিসো) বো দুমিনি ১১৪
কোহলি ক আমলা বো সোতসোবে ৩১
কার্তিক ক ডে’ভিলিয়ার্স বো ম্যাকলারেন ১৪
ধোনি ক দু’প্লেসি বো সোতসোবে ২৭
রায়না ক দুমিনি বো ম্যাকলারেন ৯
জাডেজা নঃআঃ ৪৭
অশ্বিন রান আউট ১০
ভুবনেশ্বর নঃআঃ ০
অতিরিক্ত ১৪
মোট ৫০ ওভারে ৩৩১-৭।
পতন: ১২৭, ২১০, ২২৭, ২৪০, ২৬০, ২৯১, ৩২৩।
বোলিং: মর্কেল ৬.৫-০-২৭-০, সোতসোবে ১০-০-৮৩-২,
ক্লেনভেল্ট ১০-০-৮১-০, ম্যাকলারেন ১০-০-৭০-৩,
পিটারসন ৩.১-০-২৪-০, দুমিনি ১০-০-৪২-১।

দক্ষিণ আফ্রিকা
আমলা ক ধোনি বো উমেশ ২২
ইনগ্রাম ক রায়না বো ভুবনেশ্বর ৬
পিটারসন রান আউট ৬৮
ডে’ভিলিয়ার্স ক জাডেজা বো উমেশ ৭০
দুমিনি এলবিডব্লিউ জাডেজা ১৪
দু’প্লেসি নঃআঃ ১৭
মিলার রান আউট ০
ম্যাকলারেন নঃআঃ ৭১
ক্লেনভেল্ট ক ধোনি বো ইশান্ত ৪
সোতসোবে বো জাডেজা ৩
মর্কেল বো ভুবনেশ্বর ৮
অতিরিক্ত
মোট ৫০ ওভারে ৩০৫।
পতন: ১৩, ৩১, ১৫৫, ১৮২, ১৮৪, ১৮৮, ২৩৮, ২৫১, ২৫৭।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৭-০-৪৯-২, উমেশ ১০-০-৭৫-২, ইশান্ত ৮-০-৬৬-২,
অশ্বিন ১০-০-৪৭-০, জাডেজা ৯-১-৩১-২, রায়না ৬-০-৩৬-০।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.