|
|
|
|
সংগঠনের রাশ কার হাতে, প্রশ্ন তৃণমূলের অন্দরে |
ব্লক সভাপতি থেকে জেলা নেত্রী, ভোট ময়দানে সকলেই
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কে নেই দৌড়ে? দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি থেকে জেলা কোর কমিটির সদস্য, ব্লক সভাপতি থেকে প্রাক্তন ব্লক সভাপতি, এমনকী মহিলা তৃণমূলের জেলা সভানেত্রীও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। যেন জেলা তৃণমূলের আস্ত কোর কমিটিটাই উঠে এসেছে প্রার্থী তালিকায়!
ফলে, নির্বাচনের পরে তৃণমূলের সাংগঠনিক হাল কী অবস্থা হবে, ব্লকে ব্লকে কারাই বা সংগঠনের নেতৃত্ব দেবেন, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু হয়েছে তৃণমূলেরই অন্দরেই। তা মানছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলা নেতাও। তাঁর কথায়, “অতীত অভিজ্ঞতা বলছে নির্বাচিত প্রতিনিধি হওয়ার পর অনেকেই সংগঠনের কাজ আর সে ভাবে দেখতে পারেন না। এই তো দলের এক সংগঠক বিধানসভার টিকিট পেলেন। বিধায়ক হওয়ার পর আর সে ভাবে গ্রামে গ্রামে গিয়ে কর্মিসভা করার সময়ই পান না! অথচ, বিধায়ক হওয়ার আগে প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিনটি কর্মিসভা করতেন।”
পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার হিড়িক মনোনয়ন পর্বের তালিকা থেকেই স্পষ্ট। জেলা পরিষদের মতো আসনেও তিন-চার জন করে মনোনয়ন দিয়েছেন। যা নিয়ে দল বুধবার পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েতের পরিস্থিতি আরও খারাপ। সেখানে আসনপিছু কোথাও কোথাও পাঁচ-ছ’জনও প্রার্থীও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
|
একনজরে মনোনয়ন |
জেলা পরিষদ |
আসন: ৬৭। মনোনয়ন: ৩৯৪।
তৃণমূল: ১৫৭, কংগ্রেস: ৫১, ফব ২, সিপিএম: ৭৭, সিপিআই: ৬, বিজেপি ৩৫, অনান্য ৬৬। |
পঞ্চায়েত সমিতি
|
আসন: ৭৯৮। মনোনয়ন: ২৩৭২।
তৃণমূল ১১৪৯, কংগ্রেস ২০৭, সিপিএম ৬০২, সিপিআই ৬৩, ফব ১০, বিজেপি ১০৪, অনান্য ২০৭। |
গ্রাম পঞ্চায়েত
|
আসন: ৩৮৪৬। মনোনয়ন ১০০৯০।
তৃণমূল ৫১০৮, কংগ্রেস ৭৭৮, সিপিএম ২৪৯৩, সিপিআই ২৬৮, ফব ৩৪, আরএসপি ১৪, বিজেপি ৩১৭, অনান্য ১০৭৮। |
|
প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে কে কে রয়েছেন? শুধু জেলা পরিষদের আসনের কথাই ধরা যাক। ডেবরা থেকে মনোনয়ন দাখিল করেছেন নির্মল ঘোষ, বিবেক মুখোপাধ্যায়, রতন দে প্রমুখ। নির্মলবাবু জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি। বিবেকবাবু দলের কোর কমিটির সদস্য। রতনবাবু দলের ব্লক সভাপতি। দাঁতন থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন শৈবাল গিরি। তিনিও দলের কোর কমিটির সদস্য। পিংলা থেকে অজিত মাইতি। সবং থেকে অমূল্য মাইতি। দু’জনেই কোর কমিটির সদস্য। কেশপুর থেকে তপন চক্রবর্তী, চিত্ত গড়াই, মইনুদ্দিন আহমেদ। তপনবাবু দলের ব্লক সভাপতি। চিত্তবাবু দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি। মইনুদ্দিন ব্লক কার্যকরী সভাপতি। চন্দ্রকোনা ১ থেকে উত্তরা সিংহ। উত্তরাদেবী মহিলা তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী। নারায়ণগড় থেকে সূর্য অট্ট। সূর্যবাবু দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি। তালিকাটা আরও লম্বা। একই ভাবে পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রেও স্থানীয় নেতাদের হিড়িক পড়েছে। প্রার্থী বাছাই নিয়ে জেলায় শাসক দলের মধ্যে দ্বন্দ্বও রয়েছে। তা মেটাতে মাঠে নেমেছেন তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। বার্তা দিয়েছেন, যে ভাবেই হোক দ্বন্দ্ব ভুলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের ঐক্যবদ্ধ চেহারা তুলে ধরতে হবে। ঠিক ছিল, জেলা পরিষদের আসনে কে প্রার্থী হবে, তা ঠিক করবেন রাজ্য নেতৃত্বই। জেলা থেকে প্রস্তাব যাবে রাজ্যে। সেই প্রস্তাবে চূড়ান্ত সিলমোহর দেবে রাজ্য। রাজ্য যাঁকে অনুমোদন করবে, তিনিই জেলা পরিষদের আসনে মনোনয়ন জমা দেবেন। তবে, এ নিয়ে এখনও ঐক্যমতে পৌঁছনো যায়নি। পরিস্থিতি দেখে শেষমেশ রাজ্য নেতৃত্ব বার্তা দেন, জেলা থেকে যাঁদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তাঁদের সকলে আপাতত মনোনয়ন জমা দিক। পরে জানানো হবে, কোন আসনে কে দলের প্রর্তীক পাবেন, আর কাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হবে। তৃণমূলের এক জেলা নেতার মন্তব্য, “বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হল বলেই এত জটিল হল। না হলে কখনই জেলা পরিষদের ৬৭ আসনে দলেরই ১৫৭ জনের মনোনয়ন জমা পড়ত না। বাড়তি ৯০টি মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো কম ঝক্কি নয়!”
প্রধান প্রতিপক্ষ সিপিএমে অবশ্য জেলা নেতাদের মধ্যে প্রার্থী হওয়ার এত হিড়িক নেই। জেলা পরিষদের আসনে প্রার্থী তালিকায় নাম উঠেছে দলের জেলা কমিটির এক সদস্যেরই। নাম গীতা হাঁসদা। তিনি সবং থেকে প্রার্থী হয়েছেন। আর জোনাল কমিটির মাত্র ১০ জন সদস্য প্রার্থী হয়েছেন। এ সব দেখে রাজনীতি সচেতন এক প্রবীণ মানুষের রসিক মন্তব্য, “বামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে ডানপন্থী দলগুলোর তো এটাই তফাৎ।” |
|
|
|
|
|