সাতষট্টি হাজার টাকা দিয়ে হেলিকপ্টারের টিকিট কেটে গ্যাটংক থেকে ইউমথাং পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল শ্রীরামপুরের কুখ্যাত দুষ্কৃতী দীপু সিংহ ওরফে হুলো ও তার ছয় শাগরেদের। কিন্তু হেলিপ্যাড থেকে আর হেলিকপ্টারে চড়া হল না। বৃহস্পতিবার শ্রীরামপুর থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল তারা। হেলিপ্যাড থেকে গাড়িতে দুষ্কৃতীরা গাড়িতে পালানোর চেষ্টাও করে। কিন্তু পাহাড়ি পথে পুলিশের গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি। পুলিশ নিশ্চিত, ওই দুষ্কৃতীদের কাছ থেকেই সপ্তাহ খানেক আগে নিখোঁজ শ্রীরামপুরেরই দুই যুবকের সম্পর্কে জানা যাবে। আজ, শুক্রবার ধৃতদের ট্রানজিট রিমান্ডের জন্য গ্যাংটকের আদালতে তোলা হবে।
সম্প্রতি শ্রীরামপুরের পি কে দাস লেনের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ কুণ্ডু এবং সুমন্ত চক্রবর্তী নামে ওই দুই যুবক নিখোঁজ হন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই দুই যুবকের সঙ্গে হুলো, তার ভাই কেলো এবং তাদের দলবলও গা-ঢাকা দিয়েছে। নিখোঁজ সুমন্তের স্ত্রী দেবমিতা চক্রবর্তী পুলিশকে জানান, এলাকার এক যুবকের সঙ্গে নিখোঁজ দিন কয়েক আগে তাঁ স্বামীর বচসা হয়। এর পরেই তাঁর স্বামী এবং তাঁদের বন্ধুদের সঙ্গে ওই যুবকের চাপান-উতোর চলছিল। পুলিশ জানতে পারে, নিখোঁজ ওই দুই যুবক রীতিমতো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ওই যুবককে শাসাতে যায়। ওই দুই যুবক দু’টি লগ্নিকারী সংস্থার হয়ে কাজ করেন। আনিস ভঞ্জ নামে জেলে থাকা এলাকার এক দুষ্কৃতীর সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ ছিল। ওই দুষ্কৃতী জেলে থাকায় তার হয়ে তোলাবাজিরও অভিযোগ রয়েছে বিশ্বজিৎ এবং সুমন্তের বিরুদ্ধে।
পুলিশের অনুমান, তাঁর সঙ্গে সুমন্ত ও বিশ্বজিৎ টক্কর নেওয়ায় ওই যুবক হুলো-কেলোর শরণাপন্ন হন। এর পরেই সুমন্ত ও বিশ্বজিৎকে অপহরণ করা হয়। তল্লাশির মুখে পড়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয় হুলো-কেলোরা। কিন্তু কেন এ ভাবে শ্রীরামপুরে সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে?
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “শ্রীরামপুরে সমাজবিরোধীদের সঙ্গে তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেস সব দলের নেতাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করলেই তাদের ছাড়ানোর জন্য সুপারিশের লম্বা তালিকা আসতে থাকে। আর সমাজবিরোধী দমনে এটাই সবচেয়ে বড় বাধা।”
রাজনৈতিক নেতারা সমাজবিরোধীদের ‘বাড়বাড়ন্তে’ একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় যোগসাজশের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন দুষ্কৃতীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, “কার নামে কে টেন্ডার নিল তা জানা আমার কাজ নয়। বেনামে পুরসভার টোল ট্যাক্সের একটা বরাত ওরা নিয়েছিল। পুলিশ নিষেধ করায় আমি বন্ধ করে দিই।”
এলাকার তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায় বলেন, “পুলিশ কেলোকে ধরে ভাল কাজ করেছে। কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান এবং তাঁর দলেরই এক প্রাক্তন কাউন্সিলর মনু দত্তের সঙ্গে ওই সমাজবিরোধীর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। কংগ্রেসের টিকিটে ওদের পরিবারেরই এক কাউন্সিলর রয়েছেন। মান্নান সাহেবরাই তো ওদের টিকিট দিয়েছিলেন।”
অভিযোগ উড়িয়ে আব্দুল মান্নান বলেন, “শ্রীরামপুরে সমাজবিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ কাদের, তা সবাই জানেন। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার দরকার নেই। আমাদের শ্রীরামপুরের এক প্রাক্তন কাউন্সিলরের সঙ্গে সমাজবিরোধীদের যোগ ছিল। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।” মনুবাবুর দাবি, “হুলো-কেলোকে চিনি না। মান্নানবাবু যাই বলুন, আমি এখনও দলের সাধারণ সম্পাদক।” |