কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশি হেফাজতে ধনেখালির তৃণমূল কর্মী কাজি নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু করল সিবিআই।
বৃহস্পতিবার বিকেলে এক ডিএসপি-র নেতৃত্বে সিবিআইয়ের ছ’জনের একটি দল ধনেখালিতে তদন্তে আসে। দলটি প্রথমে ধনেখালি থানায় যান। পরে জয়রামবাটি গ্রামে নিহত নাসিরুদ্দিনের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন ওই দলের প্রতিনিধিরা। তদন্তকারী দলটির এক অফিসার এ দিন বলেন, “আজ আমরা জায়গাটি চিনতে গিয়েছিলাম। লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। ফের ওখানে তদন্তে যাব।”
নিজের ছোট ট্রাক নিয়ে বেরিয়ে গত ১৮ জানুয়ারি রাতে ধনেখালির মদনমোহনতলায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন নাসিরুদ্দিন। গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাঁর বচসা বাধে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বচসা থেকে পুলিশের সঙ্গে নাসিরুদ্দিনের হাতাহাতি হয়। পুলিশকর্মীরা তাঁকে মারধর করে থানায় নিয়ে যান। থানায় গিয়েই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ধনেখালি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা নাসিরুদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। সেই সময়ে পুলিশের দাবি ছিল থানার শৌচাগারে অসুস্থ হয়ে ওই তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়। কিন্তু নাসিরুদ্দিনের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, পুলিশই তাঁকে পিটিয়ে মারে। এর পিছনে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের মদত ছিল বলেও তাঁরা অভিযোগ তোলেন। সেই অভিযোগ অবশ্য বিধায়ক মানেননি।
জেলা পুলিশের থেকে তদন্তভার নিয়ে সিআইডি ওই থানার তিন পুলিশকর্মীকে গ্রেফতার করে। থানার সিসিটিভি-র ফুটেজ-সহ নানা কাগজপত্রও বাজেয়াপ্ত করে। এ নিয়ে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়। সিআইডি তদন্ত সন্তুষ্ট করতে পারেনি কলকাতা হাইকোর্টকে। কয়েক সপ্তাহ আগে নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
সিবিআই অফিসাররা এ দিন ধনেখালিতে গিয়ে ভাষাগত সমস্যায় পড়েন। কারণ, তদন্তকারীদের প্রত্যেকেই ছিলেন হিন্দিভাষী। তাঁরা নাসিরুদ্দিনের স্ত্রী মনুজা বিবির কথা বুঝতে পারছিলেন না। পরে এক গ্রামবাসী হিন্দিতে তর্জমা করে দিলে অল্প কিছুক্ষণ তাঁরা কথা বলেন। ঘটনার দিন নাসিরুদ্দিন কখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, বাড়ির লোক কখন ঘটনার খবর পান, কেন পুলিশ তাঁর গাড়ি ধরেছিল এ সবই মনুজাকে জিজ্ঞাসা করেন গোয়েন্দারা। নাসিরুদ্দিনের এক বন্ধুর সঙ্গেও তাঁরা কথা বলেন। কয়েক জন গ্রামবাসীর থেকে ফোন নম্বর নেন। পরে সংবাদমাধ্যমের কাছে মনুজা বলেন, “স্বামীকে খুনের ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের যত দিন না শাস্তি হচ্ছে, তত দিন শান্তি পাচ্ছি না।”
|