নিয়মের গলদে অনিয়মের রমরমা
বিধিকে তুড়ি, নেট-বাজারে দিব্যি বিকোচ্ছে চটকদার মোবাইল নম্বর
সুরাটের বিশাল লাখানি নিজের মোবাইল ফোনের নম্বরটি বিক্রি করতে চান। দর হেঁকেছেন পাঁচ হাজার টাকা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন জিনিস চটজলদি বেচা-কেনার যে সব সাইট রয়েছে, তারই একটায় প্রকাশিত হয়েছে বিশালের বিজ্ঞাপন। যোগাযোগের ফোন নম্বর সমেত।
কিন্তু হাত বাড়ালেই যেখানে বিভিন্ন সংস্থার মোবাইল সংযোগ হাজির, সেখানে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কেউ বিশালের নম্বর কিনতে যাবেন কেন?
যাবেন, কারণ ওঁর মোবাইল নম্বরটি যে আর পাঁচটার মতো নয়! তার দশটি ‘ডিজিট’ এমন ভাবে সাজানো, যে এক বার শুনলেই মনে গেঁথে যেতে বাধ্য। ঠিক যেমন জেমস বন্ডের ০০৭, কিংবা অমিতাভ বচ্চনের ‘বিল্লা নম্বর’ ৭৮৬।
সাধারণত এই জাতীয় ‘প্রাইম নম্বরের’ সংযোগ মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলোই বিক্রি করে থাকে, সামান্য বাড়তি টাকা নিয়ে। আইন অনুযায়ী, পরিষেবা সংস্থা থেকে পাওয়া সেই নম্বর গ্রাহক কাউকে বেচতে পারেন না। টেলিকম পরিষেবায় কেন্দ্রীয় নজরদার ‘টার্ম সেল’-এর ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল অতনু ঘোষের দাবি, কেউ এমনটা করলে তা সম্পূর্ণ বেআইনি। সেলের মতে, গ্রাহক তাঁর নম্বর বিক্রির অধিকার পেলে মোবাইল ফোনের অপব্যবহারের প্রভূত সম্ভাবনা থেকে যায়।
অথচ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিশাল লাখানির মতো প্রচুর লোক প্রাইম নম্বর কেনা-বেচায় নেমে পড়েছেন। সূত্রের খবর: এ ধরনের তাক-লাগানো (উদাহরণ হিসাবে ধরা যাক, ৭৮৭৮৭৮৭৮৭৮) নম্বরের সিম হাতে থাকলে বড় দাঁও মারার সুযোগ রয়েছে। কেননা নজরকাড়া নম্বরের বিনিময়ে লাখ টাকা ঢালতেও অনেকে তৈরি। শুধু শখ মেটাতে নয়, বেটিং চক্রগুলোও মুখিয়ে থাকে বলে পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে। পুলিশ-কর্তাদের বক্তব্য, খুব সহজে মনে রাখা যায় বলে জুয়াড়িদের কাছে এই সব ফোন নম্বরের বিস্তর কদর। তাই তারাও চড়া দাম দিচ্ছে।
ফলে বেআইনি কাজটাই এখন প্রকাশ্যে চলছে জাঁকিয়ে। ইন্টারনেটে রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে বিকোচ্ছে মোবাইল ফোনের হরেক চমকদার নম্বর। কী কৌশলে? টেলিকম-সূত্রের খবর: নতুন নিয়মে গ্রাহক চাইলে তাঁর মোবাইল ফোনের নম্বর এক রেখে অন্য সংস্থার পরিষেবা নিতে পারেন। যেমন, বিএসএনএলের কোনও গ্রাহক তাঁর ফোন নম্বর না-পাল্টে ভোডাফোন কিংবা এয়ারটেলে চলে যেতে পারেন, যাকে বলা হচ্ছে নাম্বার পোর্টেবিলিটি। ‘অসাধারণ’ নম্বর বিক্রির জন্য এরই অবাঞ্ছিত সুযোগ নেওয়া হচ্ছে বলে টেলিকম-কর্তাদের দাবি। দেখা যাচ্ছে, নম্বর বিক্রেতারা সবার আগে বদলে ফেলছেন পরিষেবা সংস্থা। আর এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে গলদটা। কী রকম?
সূত্রের ব্যাখ্যা: পোর্টেবিলিটির আবেদন করলে নতুন পরিষেবা সংস্থার কাছ থেকে একটা বিশেষ ‘কোড’ পাওয়া যায়। সেই কোড ও সিমকার্ড নিয়ে গিয়ে যে কেউ পরিচয়পত্র দেখিয়ে তাঁর নামে নতুন সংস্থার সংযোগ চালু করতে পারেন। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে বিশাল লাখানি যদি মনোমতো খদ্দের পান (ধরা যাক ক বাবু), তা হলে তিনি পরিষেবা সংস্থা পাল্টানোর আবেদন করে প্রাপ্ত কোড আর সিম ক বাবুকে দিয়ে দেবেন। নতুন সংস্থার জানার কোনও উপায় নেই, নম্বরটি আদতে কার নামে ছিল। কারণ, বিশালের নাম তাদের হাতে আসছে না, আসছে শুধু একটা কোড। তারই সুবাদে বিশালের প্রাইম নম্বর নথিভুক্ত হয়ে যাবে ক বাবুর নামে। “এটা আমাদের পদ্ধতির গলদ।” মানছেন অতনুবাবু।
আপাতত গলদের ফাঁক দিয়ে দিব্যি জমে উঠেছে অবৈধ কারবার। এ ভাবেই চলবে?
অতনুবাবুর আশ্বাস, “এমন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যাতে গ্রাহক পরিষেবা সংস্থা বদলালে তাঁর নামেই আগের নম্বর সক্রিয় করবে নতুন সংস্থা। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অন্য কেউ নম্বরের দাবিদার হয়ে এলে তাঁর নামে এফআইআর করা হবে।”
অর্থাৎ ভবিষ্যতে বিশাল লাখানির নম্বর নিতে ক বাবু যেতে পারবেন না। বিশালকেই যেতে হবে। নতুন বিধি কবে বলবৎ হয়, সেটাই এখন দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.