কোই নেহি বাচেগা।
ষষ্ঠ আইপিএল শুরুর আগে এটাই ছিল ক্যাচলাইন। ১৬ই মে’র পর থেকে কাশ্মীর থেকে কোচির রান্নাঘরে ঢুকে গিয়েছে এমন একটা শব্দবন্ধ, আক্ষরিক ভাবেই যার বিস্তার থেকে বাঁচতে পারেনি কেউই। স্পট ফিক্সিং। এই হাওয়াকে কাজে লাগাচ্ছে বিজ্ঞাপন জগৎও।
পুরনো জিনিসপত্র বিক্রির একটি ওয়েবসাইট বিজ্ঞাপনে কৌতুকের মোড়কে ব্যবহার করেছে স্পট ফিক্সিং-বিতর্ককে। তাতে দেখা যাচ্ছে এক পুলিশকর্মী আবেদন করছেন, “টাকার জন্য বাড়ির পুরনো জিনিসপত্র বিক্রি করুন, নিজেকে বিক্রি করবেন না।” আইপিএল ফাইনালের দিন টিভিতে মুক্তি পেতেই বিজ্ঞাপনের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। ইউটিউবে আসার এক সপ্তাহের মধ্যে বিজ্ঞাপনটি দেখেছেন সাড়ে সাত লক্ষেরও বেশি মানুষ।
“সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও ভিডিওটা তুমুল জনপ্রিয় হয়েছে। প্রত্যেক দিন অসংখ্য মানুষ সেটি ‘লাইক’ ও ‘শেয়ার’ করছেন”, বলছেন বিজ্ঞাপনটির লেখক এবং নির্মাতা সংস্থার কর্ণধার মুম্বইয়ের রঘু ভট্ট। |
বিজ্ঞাপনে সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতির ব্যবহারের ধারা অবশ্য নতুন নয়। আধা শতাব্দী ধরে এই ধারা বজায় রেখেছে আমুল। পঞ্চাশ বছরে সাম্প্রতিক বহু বিষয় নিয়েই এসেছে আমুলের ‘ওয়ান লাইনার’। ১৯৯৬-এ দেবগৌড়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে আমুলের বিজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছিল, দৌড় প্রতিযোগিতায় তিন জনকে পিছনে ফেলে জিতছেন দেবগৌড়া। উপরে প্রশ্ন, ‘লম্বে রেস কা গৌড়া?’ তলায় ব্র্যান্ডনেমের নীচে ক্যাচলাইন, ‘পাওয়ার দ্যাট লাস্টস।’ ২০১১-য় স্পট ফিক্সিংয়ের ঘটনা প্রথম জানাজানি হতে আমুলের বিজ্ঞাপনেই দেখা যায় তার বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার সবুজ জার্সি পরা এক ক্রিকেটারের মুখোমুখি টস করার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আমুল-বালিকা। মাঠে টসের জায়গায় এক প্লেট মাখন রুটি। পাশে লেখা, ‘দিস স্পট ইজ ফিক্সড ফর আমুল বাটার’। এ বারের আইপিএলও ব্যতিক্রম হয়নি। আমুলের ফেসবুক পেজেই নজরে পড়ছে এই সংক্রান্ত একাধিক পোস্টার।
বিজ্ঞাপনের সঙ্গে সমাজের এই সম্পর্কের প্রতিফলন দেখা গিয়েছে চায়ের বিজ্ঞাপনে ‘জাগো রে’ এবং পাখার বিজ্ঞাপনে ‘হাওয়া বদলানোর’ ক্যাচলাইনেও। সময়ের সঙ্গে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বদলেছে বিজ্ঞাপনের ধরনও। কলকাতার একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্ণধার শৌভিক মিশ্র জানালেন, “একাধিক সংস্থাই নানা সচেতনতামূলক বিষয়কে ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় ক্যাম্পেন করেছে। পরিভাষায় এগুলোকে বলা হয় ‘এনগেজমেন্ট ক্যাম্পেন’। এই ধরনের ক্যাম্পেনের লক্ষ্য হল আমজনতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ।” শৌভিক জানান, আশি-নব্বইয়ের দশকের তুলনায় জনগণ এখন বেশি সক্রিয়। তাঁর কথায়, “সোশ্যাল মিডিয়ার জনতাকে নিজের কথা সকলকে জানানোর মঞ্চ দিয়েছে। যে কোনও প্রাসঙ্গিক সামাজিক বিষয়ে, বিতর্কেই সে সক্রিয় ভাবে যোগ দিতে চায়। বিজ্ঞাপনে তারই প্রকাশ ঘটছে।” |
কোনও সাম্প্রতিক বিষয়ের উপর বিজ্ঞাপন নির্মাণ করলে তা করতে হয় অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে। না হলে তার প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখা কঠিন হয়। আমূলের বিজ্ঞাপনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত বই, ‘আমুল’স ইন্ডিয়া’তে সে কথা জানান আমুলের বিজ্ঞাপনের অন্যতম পথিকৃৎ সিলভেস্টার ডাকুনহা। স্পট-ফিক্সিং বিতর্ক নিয়ে তৈরি সাম্প্রতিক বিজ্ঞাপনী ভিডিওটির ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। পরিচালক নরেন মূলতানি বললেন, “বিজ্ঞাপনটা নিয়ে চিন্তাভাবনা থেকে শুরু করে সেটি টিভিতে যাওয়া পর্যন্ত পুরো ব্যাপারটা করেছি ৩৬ ঘণ্টায়।”
বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক ঘটনাকে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করাটা বিপণনেরই সুবিধে করে দেয়। রঘু বলছেন, “সব ব্র্যান্ডই চায় বিজ্ঞাপনের গণ্ডি ছাড়িয়ে আমজনতার অন্দরমহলে ঢুকে পড়তে। স্পট-ফিক্সিং বিতর্ক গোটা দেশের মুখে মুখে ফিরছে। তাই সেটা ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন করাতে বিজ্ঞাপনটা স্বাভাবিক ভাবেই, লোকজনের চর্চার বিষয় হয়, ব্র্যান্ডও জনপ্রিয় হয়।”
বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞ রাম রায় দেখেছেন স্পট ফিক্সিং বিতর্ক নিয়ে বিজ্ঞাপনের ভিডিওটি। তিনি বললেন, “আমার কাজটা ভালই লেগেছে। এই ধরনের বিষয় ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করা হলে বিজ্ঞাপনী জনপ্রিয়তা ও জনমত গঠন, দুটোর পক্ষেই ভাল।” |