কাঠফাটা রোদ, ঘামঝরা সকাল-দুপুরে আপনি চলেছেন কলেজ বা অফিসে। হাতের কাছে আরামদায়ক যা পেয়েছেন, সেটাই পরে ফেলে রওনা দিয়েছেন গুটি গুটি রওনা দিয়েছেন গন্তব্যের দিকে। তবে কি বিয়েবাড়ি-পার্টি-অনুষ্ঠান ছাড়া ফ্যাশন-ট্যাশন সব তাকে তোলা থাকবে? অফিস বা কলেজে যা হোক কিছু একটা পরলেই হল?
মোটেই না। বলছেন শহরের ডিজাইনাররা। তাঁদের মতে, এই গরমে রোজকার কলেজ-অফিসে আরামদায়ক পোশাক তো পরতেই হবে। তবে চাইলে সেটাই করা যায় দিব্যি ফ্যাশন মেনে।
ডিজাইনার কিরণউত্তম ঘোষের মতে, সবার আগে দরকার স্টাইলের একটা ভারসাম্য রক্ষা করা এবং বাস্তব বোধ। কোন পোশাকটা কাকে মানাবে সেটা যেমন খেয়াল রাখতে হবে, তেমনই স্রেফ ফ্যাশনে আছে বলে গরমের অনুপযোগী ফ্যাব্রিক পরে ফেলাটাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না মোটেই। নিওন কালার ফ্যাশনে ইন বলেই নিজের গায়ের রঙের তোয়াক্কা না করে সেটা পরে ফেলতে হবে কিংবা ফ্যাশনে থাকা পোশাকটা পলিয়েস্টারের হলেও এই গরমে সেটাই পরতে হবে, এমন যেন না হয়।
কিরণউত্তমের কথায়, “নিজের গায়ের রঙের সঙ্গে মানায়, এমন হাল্কা অথচ উজ্জ্বল রং বাছুন। সাদা, বেইজ, প্যাস্টেল শেড তো বটেই, পরা যায় হলুদ, গেরুয়া, লাইম গ্রিন বা ম্যাঙ্গো শেড্সও। তবে অফিসে যেতে হলে রঙের বাছাইটা যেন মানানসই হয়। সাদা, ধূসর বা সিলভার মেটালিক রঙের পোশাকের সঙ্গে রং পাল্টে পাল্টে নানা ধরনের গয়না, অন্য অ্যাকসেসরিজ পরা যায়। কলেজপড়ুয়ারা অবশ্য আরও অনেকটাই সাহসী হতে পারেন। একটা ওয়াইল্ড ব্যাগ কিংবা বোল্ড জুয়েলারিতেও ওঁদের দিব্যি মানাবে।” পাশাপাশিই তিনি মনে করিয়ে দিলেন, “সুতির পোশাক সাধারণত তাড়াতাড়ি ক্রাশ্ড হয়ে যায়, রং চটে যায়। তাই গরমে পরুন মিক্সড কটন বা মলমল জাতীয় ফ্যাব্রিক। পলিয়েস্টার জাতীয় ফ্যাব্রিক ঘামে ভিজে উল্টে সমস্যা তৈরি করে।”
সুতি, লিনেনের পোশাকেই এই গরমের মরসুমে ফ্যাশনিস্তা হয়ে ওঠার পরামর্শ দিচ্ছেন ডিজাইনার অভিষেক দত্তও। সুতির টিশার্ট, লিনেনের শার্ট, কটন ডেনিম, কুর্তি-লেগিংসের ক্যাজুয়াল লুকই এ সময়টায় আদর্শ তাঁর মতে। অভিষেকের কথায়, “কলেজের ছেলেমেয়েরা টিশার্টের সঙ্গে ক্যাপ্রি বা শর্টস পরতে পারেন। লিনেনের শার্ট, টিশার্ট, নানা রঙের প্রিন্টেড টপও পরা যায়। শার্ট কলার দেওয়া ঢোলা কুর্তি, লেগিংসেও ভাল দেখাবে। উজ্জ্বল রং, ফ্লোরাল প্রিন্ট রয়েছে কলেজপড়ুয়াদের এ মরসুমের ফ্যাশনে।” সেই সঙ্গেই এ কালের ব্যস্ত কর্পোরেটদের জন্য তাঁর পরামর্শ, “অফিসে পরা যায় সাদা লিনেনের শার্ট, লিনেন-কটন ব্লেন্ডের ট্রাউজার্স, পেন্সিল স্কার্ট। মেয়েরা ভারতীয় পোশাকে সাজতে চাইলে পরুন সাউথ কটন কিংবা চান্দেরি শাড়ি, সালোয়ার কামিজ কিংবা কুর্তি-লেগিংস। তবে রঙের বাছাই হোক হাল্কা প্যাস্টেল শেড। সঙ্গে হাল্কা গয়না আর সানগ্লাস। ব্যস!”
কলেজপড়ুয়াদের সাজে একটু সাহসী হতেই পরামর্শ দিচ্ছেন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল। তাঁর মতে, এখন ফ্যাশনে ‘ইন’ হল নিয়ন বা ফ্লুরোসেন্ট রং। তবে কিরণউত্তমের মতোই তাঁরও পরামর্শ, “ফ্যাশনে ইন মানে এই রঙের পোশাক পরা নয়। সাজে থাকুক এই রংগুলোর একটা ছোঁয়া। তা সে ব্যাগ, চটি, নেলপলিশ যাতেই হোক। মেয়েরা পরুক কটন প্রিন্টেড জাম্পস্যুট, একরঙা সামার ড্রেস, ঢোলা ম্যাক্সি ড্রেস, উজ্জ্বল রঙের হাঁটুঝুল পোশাক, টিউনিক। শর্ট স্কার্ট বা ধোতি প্যান্টও এখন ফ্যাশনে রয়েছে। আর কলেজপড়ুয়ারা ছেলেদের সাজ হোক গ্রাফিক প্রিন্টেড টিশার্ট আর জিন্স। চশমার ফ্রেম, কলার বা জামার পাইপিং-এ থাক একটু-আধটু ফ্লুরোসেন্ট রঙের ছোঁয়া। সেটাই তো এখন কুল লুক।”
অতএব? ফ্যাশনের সাত-সতেরো তো হাতের মুঠোয়। তা সে কলেজ হোক বা অফিস— এর পরেও কি যা-হোক কিছু পরেই রওনা দেবেন নাকি? |