বামেদের পা-ই পড়ল না ‘সন্ত্রস্ত’ অর্ধেক আসনে
ক সময়ে বর্ধমানে সিপিএমের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি ছিল কেতুগ্রাম। এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেখানেই, কেতুগ্রাম-১ ব্লকে প্রায় অর্ধেক গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া কেউ নেই।
কেতুগ্রামে ‘পরিবর্তন’ শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই। সিপিএমের দু’টি লোকাল কমিটি-সহ চারটি দলীয় দফতর প্রায় চার বছর ধরে তালাবন্ধ। সিপিএম নেতারাও এলাকা ছেড়ে কাটোয়া ও মুর্শিদাবাদের সালারে থাকছেন। সিপিএমের দাবি, সন্ত্রাসের কারণেই সব আসনে প্রার্থী দেওয়া যায়নি। তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য, প্রার্থী দেওয়ার মতো লোকই তাদের নেই।
আজ, শুক্রবার স্কুটিনির পরেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া কতগুলি আসন দখল করছে তৃণমূল। আপাতত যেটা পরিষ্কার, কেতুগ্রাম ১ ব্লকের ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫টিতেই ক্ষমতা দখল করতে পারে তৃণমূল। ১১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনের মধ্যে ৫৬টি আসনে তারা ছাড়া আর কেউ প্রার্থী দেয়নি। কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির ৭টি আসনেও শুধু তৃণমূলের প্রার্থীরাই মনোনয়ন জমা করেছেন।
বৃহস্পতিবার গোটা এলাকা ঘুরে সিপিএম বা কংগ্রেসের কোনও পতাকা চোখে পড়েনি। কেতুগ্রামের নিরোল ছাড়িয়ে কোমরপুর হাটতলা, কোমরপুর, ব্লক সদর কান্দরাতেও রাজনীতি নামক বস্তুটি যেন ‘উবে’ গিয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়েও কেউ রাজনীতি নিয়ে কোনও কথা বলতে রাজি নন। সিপিএম জানাচ্ছে, ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তারা ব্লকের ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছিল। কিন্তু ২০০৯-এ লোকসভা ভোটের পরেই পঞ্চায়েতগুলির শাসনক্ষমতা কার্যত তৃণমূলের হাতে চলে যায়।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে সিপিএমের বিক্ষোভ পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে।—নিজস্ব চিত্র।
সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সদস্য ফারুক মির্জার অভিযোগ, “লোকসভা ভোটের পর থেকে যে সন্ত্রাসের সূচনা হয়েছিল, তা-ই চূড়ান্ত রূপ পেল পঞ্চায়েত নির্বাচনে। কোথাও প্রকাশ্যে, কোথাও গোপনে সন্ত্রাস চালিয়েছে তৃণমূল।’’ তাঁদের অভিযোগ, কান্দরার চৌরাস্তা মোড় ও কান্দরা স্টেশন এলাকায় তৃণমূল শিবির করে থাকায় বিরোধীরা ব্লক দফতরে গিয়ে মনোনয়নপত্র পেশ করতে পারেনি। স্থানীয় আনখোনা, আগড়ডাঙা, বেরুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম প্রার্থী দিয়েছে। সিপিএমের ওই জোনাল কমিটির অন্যতম সদস্য তপন কাজির অভিযোগ, “প্রার্থীদের মুর্শিদাবাদের সালার হয়ে কাটোয়া মহকুমাশাসকের দফতরে নিয়ে গিয়ে মনোনয়ন জমা করাতে হয়েছে।”
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে সিপিএম মাত্র ৩৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেস ও নির্দল মিলিয়ে ৪৪টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে। এ ছাড়া, রাজুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৫টির মধ্যে ৩টি, কান্দরায় ১৫টির মধ্যে ২টি, পাণ্ডুগ্রামে ১৪টির মধ্যে ৬টি, পালটিয়াতে ১৩টির মধ্যে ৩টি ও মুড়গ্রাম গোপালপুরে ১৬টির মধ্যে ৬টিতে প্রার্থী রয়েছে। ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “এই পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল পেয়েই গিয়েছে বলা যায়। তৃণমূল-বিরোধী বলে যারা দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের একটা বড় অংশই নির্দল। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে পারেন।”
সিপিএমের হয়ে মনোনয়নপত্র পেশ করা রেজাউল শেখ, তুফান পালেদের অভিযোগ, “ধারাবাহিক ভাবে ব্লক জুড়ে সন্ত্রাস চলছে। প্রার্থী ঠিক করলেই হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। সেখানে আমাদের মতো কয়েক জন মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছি। কত ক্ষণ টেকা যাবে জানি না।” সিপিএম সূত্রের খবর, বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রতিটি আসনে প্রার্থী দেওয়া যায় কি না, তার একটা শেষ চেষ্টা করা হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতারা পিছু হটেন।
কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে প্রায় ২৪টি আসনে। তাদের নেতারা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ। কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “তৃণমূলের লাগামছাড়া সন্ত্রাসে প্রার্থী দেওয়া যায়নি। যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।” বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) তথা প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথের পাল্টা অভিযোগ, “জেলা জুড়ে বিরোধীরা সন্ত্রাস চালাচ্ছে। সশস্ত্র হয়ে আক্রমণ করছে। আমাদের কর্মীরা খুন হচ্ছেন। যেখানে সিপিএম বা কংগ্রেস প্রার্থী পাচ্ছে না, সেখানেই তারা আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছে।” তাঁদের নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন বলেও তিনি দাবি করেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.