কিছুটা কৌশল, বাকিটা কোন্দল এক আসনে বহু প্রার্থী তৃণমূলের
শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া পড়ল ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নেও। জেলার ৩১টি ব্লকের কোথাও ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রার্থী দিতে পারল না তৃণমূল। অনেকগুলি আসনেই দলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেওয়ায় উদ্বিগ্ন দলের রাজ্য নেতারা।
‘এক আসন এক প্রার্থী’ নীতি মেনে সমাধানসূত্র খুঁজে বের করতে বৃহস্পতিবারই রাজ্য ও জেলার দায়িত্বে থাকা নেতারা কলকাতায় তৃণমূল ভবনে বৈঠকে বসেছেন। সেখান থেকেই বর্ধমানের দলীয় পরিদর্শক অলোক দাস বলেন, “আমরা সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেছি। রয়েছেন মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মলয় ঘটক, সুব্রত বক্সীদের মতো নেতারা। বিভিন্ন আসনে দাঁড়িয়ে পড়া দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা হচ্ছে।”
তৃণলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ বলেন, “এই অতিরিক্ত প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে ভাল। অন্যথায় দল হয়তো তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।” তবে দলেরই এক রাজ্য নেতার আশঙ্কা, এই প্রার্থীদের একটা বড় অংশ নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটের ময়দানে থাকতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ওই সব আসনে সিপিএমের জয়ের পথই প্রশস্ত হবে।
পঞ্চায়েত ভোটে বর্ধমান জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিভিন্ন আসনে প্রার্থী-তালিকা তৈরির জন্য বর্ধমান ও দুর্গাপুরে পর্যায়ক্রমে বৈঠক করেছিলেন। তার পরে তিনি বলেছিলেন, “দলের নিচুতলাতেই প্রার্থী স্থির হচ্ছে। আমাদের প্রার্থীদের মধ্যে কোথাও অনৈক্য নেই। এক মাত্র আউশগ্রামের কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন ছাড়া অন্য কোথায় কে ভোটে দাঁড়াবেন, তা স্থির করতে সমস্যা হয়নি।”
কিন্তু গত বুধবার মনোনয়ন-পর্ব চুকতেই দেখা গিয়েছে, অনেক আসনে তৃণমূলের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। কোনও কোনও পঞ্চায়েতে আসন-সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। কিছু জেলা পরিষদ আসনেও রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। এর একাংশ যদি কৌশল হিসেবে মনোনয়ন জমা করেও থাকেন, অন্য অংশ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে ব্যস্ত বলে মেনে নিচ্ছেন তৃণমূলের নেতারা। শিল্পাঞ্চলের তুলনায় গ্রামীণ এলাকাতেই আবার এই এক আসনে একাধিক মনোনয়ন দেওয়ার মাত্রা বেশি।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, রানিগঞ্জে গ্রাম পঞ্চায়েত আসন-সংখ্যা ৭৪। তৃণমূলের প্রার্থী ৮৯ জন। ওই ব্লকের ২টি জেলা পরিষদ আসনেও রয়েছেন দলের ৩ প্রার্থী। বারাবনি ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ৯২টি। মনোনয়ন দিয়েছেন ১০৩ জন দলীয় প্রার্থী। পঞ্চায়েত সমিতির ২১টি আসনে রয়েছেন ২৬ জন প্রার্থী। সালানপুরে ৯৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে ১০৪টি, পঞ্চায়েত সমিতির ২৩টি আসনে ২৯ জন প্রার্থী রয়েছেন ওই দলের। জামুড়িয়ায় ৯৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে তৃণমূল প্রার্থীর সংখ্যা ১৩০।
দুর্গাপুর মহকুমায় কাঁকসা ব্লকে ১৩২টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে তৃণমূলের প্রার্থীর সংখ্যা ১৫৬। পঞ্চায়েত সমিতির ২১ আসনে দলীয় প্রার্থী ২৬ জন। অন্ডালের ১৪৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের প্রার্থীর সংখ্যা ২১০। ২২টি পঞ্চায়েত সমিতি আসনে প্রার্থী ৩২। গলসি-১ ব্লকের ১৪১টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে রয়েছেন তৃণমূলের ১৯৫ জন। ২৭টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে তাঁদের সংখ্যা ৩৯। পাণ্ডবেশ্বরে ১১২টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে রয়েছেন ১৩৫ জন প্রার্থী। ১৮টি পঞ্চায়েত সমিতি আসনে তাঁদের সংখ্যা ২৩।
এর তুলনায় অনেকটাই বেশি বাড়াবাড়ি হয়েছে বর্ধমান, কালনা ও কাটোয়া মহকুমায়। বর্ধমানের রায়না-১ ব্লকের ১৩৯ গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে রয়েছেন ২৫৬ জন দলীয় প্রার্থী। ২৪টি পঞ্চায়েত সমিতি আসনে দলের প্রার্থীর সংখ্যা ৫৩। এমনকী ৩টি জেলা পরিষদ আসনেও তৃণমূলের পাঁচ প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। মেমারি-১ ব্লকের ১৭১টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে ২৪৬ জন এবং মেমারি-২ ব্লকের ১১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে ১৭৯ জন তৃণমূল প্রাথর্ীর্ রয়েছেন। খণ্ডঘোষে ১৪৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে ২৫৭ জন এবং জামালপুরে ২০৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে ২৮৮ জন তৃণমূল প্রার্থী রয়েছেন। ওই দুই ব্লকে যথাক্রমে ২৯ ও ৩৯টি পঞ্চায়েত সমিতি আসনে রয়েছেন ৫৯ ও ৫১ জন দলীয় প্রার্থী। বর্ধমান-১ ও ২ ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনসংখ্যা যথাক্রমে ১৬২ ও ১১৬। ওই দুই ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রার্থী-সংখ্যা ১৯৭ ও ১২৫। গলসি-২ ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতে ১১৬ আসনে রয়েছেন তৃণমূলের ১৭৮ জন প্রার্থী। আউশগ্রাম-১ ব্লকে ৯২টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে ১৯৮ জন দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে কাকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হবে, তা স্থির করতে এ দিনের বৈঠকে কার্যত হিমশিম খেয়েছেন নেতারা।
কাটোয়া মহকুমার কাটোয়া-১ ব্লকের ১২৯ ও মঙ্গলকোটের ১৯৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে রয়েছেন যথাক্রমে ১৫৫ ও ২১৮ জন তৃণমূল প্রার্থী। কালনা-১ ও ২ ব্লকে ১৫৫ ও ১২৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে দলীয় প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ১৭৭ ও ১৩১। কালনা-২ ব্লকের ২টি জেলা পরিষদ আসনে রয়েছেন তৃণমূলের তিন প্রার্থী। মন্তেশ্বরের তিনটি জেলা পরিষদ আসনে দলের প্রাথর্ীর্র সংখ্যা ৬। তৃণমূলের এক নেতার দাবি, “দলের জেলা নেতাদের এক জন জেলা পরিষদের আসন বেচে দিয়েছেন এই ব্লকে। তার প্রতিবাদেই দলের অনেকে জেলা পরিষদের প্রার্থী হয়েছেন।” ওই ব্লকে ১৭৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে রয়েছেন ১৯৭ জন দলীয় প্রার্থী। স্বপন দেবনাথের এলাকা বলে পরিচিত পূর্বস্থলীর দু’টি ব্লকেও ছবিটা পাল্টায়নি। পূর্বস্থলী-১ ব্লকের ১৫৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে ও পূর্বস্থলী-২ ব্লকের ১৫৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে যথাক্রমে ১৫৬ ও ১৬৬ জন দলীয় প্রার্থী রয়েছেন। পূর্বস্থলী-১ ব্লকে আবার জেলা পরিষদের তিনটি আসন থাকলেও সেখানে রয়েছেন মাত্র এক জন তৃণমূল প্রার্থী। অবশ্য নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়েছেন আরও তিন জন। পূর্বস্থলী-২ ব্লকে ৩টি জেলা পরিষদ আসনে দলের প্রার্থীর সংখ্যা ৪।
সোমবার, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনের মধ্যে তৃণমূল ঘর সামলাতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.