দফায় দফায় সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে জখম হলেন ন’জন। বুদবুদের দেবশালা পঞ্চায়েতে বিলাসপুর গ্রামে বুধবার সন্ধ্যা থেকে গোলমাল শুরু হয়। পরস্পরের বিরুদ্ধে বাড়ি ভাঙচুর, তির-ধনুক ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলার অভিযোগ তুলেছে দু’পক্ষই। জখমদের মধ্যে রয়েছেন এক মহিলা ও এক বালিকা। জামুড়িয়াতেও বুধবার সন্ধ্যা থেকে সিপিএম প্রার্থী ও কর্মীদের হুমকি ও বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। গলসির গোহগ্রামে তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সমিতির মহিলা প্রার্থী ও তাঁর বাড়ির সদস্যদের সিপিএমের লোকজন মারধর করেছে বলে অভিযোগ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় দেবশালা পঞ্চায়েতের কিছু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বিলাসপুর গ্রামে গেলে বিবাদ বাধে। সিপিএমের লোকজনের সঙ্গে তাঁদের বচসা, তা থেকে মারপিট বেধে যায়। বেগতিক বুঝে ওই তৃণমূল কর্মীরা পালিয়ে যান। তৃণমূলের দাবি, তাদের কর্মীরা গ্রামে বৈঠক করতে যান। কিন্তু সিপিএমের লোকজন তাঁদের মারধর করে। যদিও সিপিএমের পাল্টা দাবি, তৃণমূলের লোকজন গ্রামে ঢুকে তাঁদের প্রার্থীদের হুমকি দিচ্ছিল। গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিবাদ করলে তারা পালিয়ে যায়। |
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের গণ্ডগোল শুরু হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, ‘শান্তি মিছিল’ করার নামে গ্রামে ঢোকে তৃণমূলের বেশ কিছু লোকজন। অভিযোগ, মিছিল থেকে কিছু সিপিএম সমর্থকের বাড়িতে হামলা হয়। সিপিএম প্রার্থী ও প্রস্তাবকদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দেওয়া হয়। স্থানীয় সিপিএম সমর্থকেরা বাধা দিতে গেলে মারামারি বাধে। তৃণমূলের অভিযোগ, গ্রাম থেকে বেরোনোর সময়ে সিপিএমের কিছু লোক তাড়া করে। কাদের মণ্ডল নামে এক তৃণমূল সমর্থক তিরবিদ্ধ হন।
সিপিএমের যদিও অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন গ্রামে ঢুকে তাদের কয়েক জন সমর্থককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। রুইদাস পাড়ায় ২০-২৫টি বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। স্থানীয় সিপিএম নেতা অলোক রানার দাবি, “বাসিন্দারা প্রতিরোধ গড়ে তুললে দু’পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। আমাদের দলের পাঁচ জন দুর্গাপুর হাসপাতালে ভর্তি।” কাঁকসার তৃণমূল নেতা দেবদাস বক্সী যদিও পাল্টা অভিযোগ করেন, এ দিন সকালে তাঁদের লোকজন ‘শান্তি মিছিল’ করতে গেলে সিপিএম হামলা চালায়। তৃণমূল সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আশপাশের গ্রাম থেকে কয়েক হাজার সিপিএম সমর্থক এসে এই হামলা চালায় বলে তাঁর দাবি। |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আহত ৯ জনকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তার মধ্যে চার জন তৃণমূল ও পাঁচ জন সিপিএম সমর্থক। হাসপাতালে ভর্তি কাকলি হালদারের অভিযোগ, “আমার সাত বছরের মেয়েকেও তৃণমূলের লোকজন মারধর করেছে। আমার স্বামী ও আমার মাথা ফাটিয়েছে।” হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কাদের মণ্ডলকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছিল। তাঁর গায়ে চারটি তির বিঁধেছিল। তবে পরে তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়েছে। পুলিশ জানায়, গ্রামে টহল রয়েছে। |
জামুড়িয়াতেও সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। দলের অজয় জোনাল সম্পাদক মনোজ দত্ত অভিযোগ করেন, বুধবার মনোনয়ন দাখিল করে বাড়ি ফিরতেই কেন্দা পঞ্চায়েতে তাঁদের এক প্রার্থীর প্রস্তাবক সুশীলা পোদ্দারের বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূল। এর পরে সিপিএম কর্মী প্রসেনজিৎ রুইদাসের বাবাকে মারধর করা হয়। আরও অভিযোগ, কেন্দার প্রধান শুক্লা বাউড়ির বাড়ির অ্যাসবেস্টসের চাল, একটি গাড়ি ভাঙচুর করে তৃণমূল কর্মীরা। শুক্লাদেবীর গলার হার ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। এ ছাড়া শ্যামলা পঞ্চায়েত, পড়াশিয়া-সহ নানা এলাকায় তাঁদের প্রার্থীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও সিপিএমের অভিযোগ। তৃণমূলের জামুড়িয়া ২ ব্লক সভাপতি তাপস চক্রবর্তীর যদিও দাবি, “সব অভিযোগ মিথ্যা।” |