একশো দিনের কাজের প্রকল্প ঘিরে নয়া সঙ্কট তৈরি হয়েছে পুরুলিয়া জেলায়। টাকার অভাবে শুখা মরসুমে বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় মাসখানেক ধরে ওই প্রকল্পের কাজ কার্যত বন্ধ ছিল। এ বার কেন্দ্রীয় বরাদ্দ এলেও সেই টাকা ধার মেটাতেই চলে গিয়েছে। তাতেও ধার মেটেনি অনেক পঞ্চায়েতের। এই অবস্থায় জেলার বহু জায়গায় নতুন করে কাজ শুরু হচ্ছে না।
পঞ্চায়েতগুলির অভিযোগ, টাকার অভাবে গত এপ্রিল মাস থেকে এই জেলার অভিকাংশ জায়গায় একশো দিনের কাজ কার্যত থমকে গিয়েছে। কাজ না পেয়ে অনেকেই তাই পুব খাটতে গিয়েছেন। অন্য দিকে, শুখা মরসুমে পুকুর সংস্কারের মতো কাজও থমকে গিয়েছে। এর মধ্যে চলে এসেছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ফলে ফের কবে ওই এলাকার শ্রমিকদের কাজ দেওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সাঁতুড়ি, কাশীপুর, ঝালদার মতো বিভিন্ন ব্লকের কিছু পঞ্চায়েত প্রধানদের বক্তব্য, “টাকার অভাবে কাজ করার পরেও শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া যায়নি। নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করা ঠিকাদারদের বিলও দেওয়া যায়নি। তাই এপ্রিল মাস থেকে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।” প্রশাসন সূত্রের খবর, টাকার অভাবে একাধিক ব্লক প্রশাসন পঞ্চায়েতগুলিকে বকেয়া না মিটিয়ে নতুন প্রকল্প শুরু করতে মানা করেছিল। তবে একশো দিন কাজের প্রকল্পের জেলা আধিকারিক অরূপ দত্ত দাবি করেছেন, “গত আর্থিক বছরের শেষ ও চলতি বছরের গোড়ায় টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি টাকা এসেছে। ব্লকগুলিকে তাই কাজ শুরু করে দিতে বলা হয়েছে। কিছু ব্লক ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে।”
কিন্তু বাস্তব চিত্র অন্য।
সাঁতুড়ি ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত রামচন্দ্রপুর-কোটালডি পঞ্চায়েত লালগড় গ্রামে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে বড় আকারের ‘চেক ড্যাম’ তৈরির কাজ শুরু করেছিল। পঞ্চায়েতের একশো দিনের কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা তৃণমূলের স্থানীয় নেতা রাজকিশোর চক্রবর্তী বলেন, “ফ্রেবুয়ারি মাসে চেক ড্যামের কাজ শুরু হয়েছিল। একমাস কাজ হওয়ার পরে টাকার অভাবে বন্ধ করে দিতে হয়। সম্প্রতি কিছু টাকা এসেছিল। কিন্তু শ্রমিকদের বকেয়া মজুরী ও ঠিকাদারদের বিল দিতেই সব টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একই সমস্যায় পড়ে জঙ্গলমহলের বলরামপুর, আড়শা, বাঘমুণ্ডি, ঝালদার মতো বিভিন্ন ব্লকের পঞ্চায়েতগুলিও বর্ষার আগে জলাশয় সংস্কার করার কাজ শুরু করেও টাকার অভাবে তা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে।
কাশীপুরের তৃণমূল পরিচালিত বড়রা পঞ্চায়েতের প্রধান উজ্জল রাউৎ বলেন, “বকেয়া মেটানোর পরেও সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা ধার রয়ে গিয়েছে। নতুন করে কী করে কাজ শুরু করা যাবে?” সোনাইজুড়ির নির্দল প্রধান প্রভাকর বাউরি, সাঁতুড়ির সিপিএম পরিচালিত গড়শিকা পঞ্চায়েতের প্রধান চন্দনা হাড়িদেরও বক্তব্য, বরাদ্দ টাকায় তাঁরা ধার শোধ করছেন। নতুন করে কাজ করার টাকা নেই।” ঝালদা ২ পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেসের সদস্য ফনীভূষণ কুমার বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির ৯টি পঞ্চায়েতের মধ্যে চেকা ও বেগুনকোদর বকেয়ার সবটাই পেয়েছে। বাকি ৭টি পঞ্চায়েতের এখনও প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। নতুন কাজ করা সম্ভব নয়।”
পঞ্চায়েত নির্বাচন মিটতে মাস দেড়েক সময় বাকি। পঞ্চায়েত থেকে জেলা প্রশাসনের আধিকারিক-কর্মীরা নির্বাচনের কাজেই ব্যস্ত থাকবেন। ফলে নতুন করে বরাদ্দ এলেও কবে ফের একশো দিনের কাজ গতি পাবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে শ্রমিকদের মধ্যে। তাই তাঁদের ভরসা সেই পুবেই। |