সম্পাদকীয় ১...
অনধিকার
থ্যের অধিকার আইনের দার্শনিক ভিত্তিটি কী? রাষ্ট্র কোন পথে চলিতেছে, নাগরিক চাহিলে যাহাতে সেই প্রশ্নের উত্তর পান, তাহা নিশ্চিত করিবার জন্যই এই আইনটি তৈরি হইয়াছিল। ভারতের ন্যায় বিপুলায়তন দেশে এই আইন প্রকৃতার্থে কার্যকর করিবার কিছু পরিকাঠামোগত সমস্যা আছে বটে, কিন্তু আইনটির উদ্দেশ্য সাধু। সমস্যা হইল, রাষ্ট্রের সহিত জনপরিসরের ফারাকটি অনেক সময় চোখ এড়াইয়া যায়। ভারতের কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের যেমন, সম্ভবত, গিয়াছে। সম্প্রতি কমিশন ঘোষণা করিল, রাজনৈতিক দলগুলি তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় পড়িবে। অর্থাত্‌, কেহ ইচ্ছা করিলেই তাহাদের হরেক প্রশ্ন করিতে পারিবেন, এবং দলগুলি সেই প্রশ্নের উত্তর করিতে আইনত বাধ্য থাকিবে। এই বিচিত্র নির্দেশের মূলে জনপরিসরকে রাষ্ট্রের সহিত গুলাইয়া ফেলিবার ভ্রান্তিটি রহিয়াছে। স্মরণে রাখিতেই হইবে যে রাজনৈতিক দলগুলি রাষ্ট্রের অংশ নহে। সেগুলি স্বতন্ত্র সংগঠন। কোন দল কাহাকে প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করিবে, তাহার অর্থের জোগান কোন উত্‌স হইতে আসিবে— এই সব বিষয়ে তাহাদের জবাবদিহি করিতে বাধ্য করিবার সিদ্ধান্ত নিতান্তই অগণতান্ত্রিক। বস্তুত, দলের অর্থের উত্‌স, প্রার্থীর ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ইত্যাদি নির্বাচন কমিশনকে জানাইতে দলগুলি বাধ্য। অর্থাত্‌, রাষ্ট্রের নিকট সেই তথ্য আছে। যদি সংশয় হয় যে কোনও দল বা কোনও প্রার্থী মিথ্যা তথ্য দাখিল করিতেছেন, তবে তদন্ত সম্ভব। সংশয় প্রমাণিত হইলে আইনানুগ ব্যবস্থা করিতেও বাধা নাই। কোনও যুক্তিতেই তথ্যের অধিকার আইনের এই সম্প্রসারণ প্রয়োজনীয় নহে।
কেহ বলিতে পারেন, জনপরিসরে রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ, ফলে তাহাদের সম্বন্ধে জানিবার অধিকার সাধারণ্যের থাকা বিধেয়। মানুষের সেই অধিকার নাই, কে বলিল? রাজনৈতিক দলগুলির প্রভাব ও প্রতিপত্তি শেষ বিচারে জনগণের হাতেই বাঁধা। অতএব, মানুষ ক্ষমতাহীন নহেন। তাঁহারা প্রশ্ন করুন। কোনও দল যদি সেই প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়, তাহার জবাব ভোটের বাক্সে দেওয়ার সুযোগ কেহ কাড়িয়া লইতে পারিবে না। তাহার জন্য আইন চাপাইবার প্রয়োজন নাই। ভারতে অতি আইন-নির্ভরতার ব্যাধিটি ব্যাপক। তথ্য কমিশনের বর্তমান নির্দেশটির শিকড়ও সেই ব্যাধিতেই নিহিত। কমিশন তাহার সিদ্ধান্তটির পক্ষে কিছু বিচিত্র যুক্তির অবতারণা করিয়াছে। যেমন, কমিশনের মতে, যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলি প্রকৃত প্রস্তাবে প্রভাবের নিরিখে রাষ্ট্রের সমান হইয়া উঠে, অতএব রাষ্ট্রের জন্য যে নিয়ম প্রযোজ্য, দলগুলির জন্যও সেই নিয়মই চাই। সংবিধানে যাহার উল্লেখমাত্র নাই, সেই রাজনৈতিক দল যদি রাষ্ট্রের সমান হয়, তবে তাহা সমাজের এক গভীর অসুখের নির্দেশক। অবিলম্বে সেই প্রভাব খর্ব করা প্রয়োজন। কমিশন সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ পথে হাঁটিয়া সেই প্রভাবকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে ব্যস্ত। অতি বিপজ্জনক প্রবণতা।
কমিশনের যুক্তির সারমর্ম হইল, যে প্রতিষ্ঠানই সমাজকে প্রভাবিত করিবে, তাহাকেই জনসমক্ষে জবাবদিহি করিতে বাধ্য করিতে হইবে। এই যুক্তিটিকে পরিবর্ধিত করিলে তাহা এক অবাস্তব অবস্থানে পৌঁছায়। জনপরিসরে যাহা আছে, সবই সমাজকে কম-বেশি প্রভাবিত করে। সেই প্রভাবের কারণেই তাহাদের তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় আনিতে হইবে, তথ্য কমিশনও এমন দাবি করিবে কি? তাহা হইলে তো সংবাদমাধ্যম হইতে শুরু করিয়া স্কুলকলেজ অবধি সব কিছুকেই এই আইনের আওতায় আনিতে হয়। এমনকী, ভারতের ক্রিকেট দলে কোন কোন খেলোয়াড় নির্বাচিত হইলেন এবং কে বাদ পড়িলেন— সমাজের একটি অংশের নিকট এই প্রশ্নটিও অতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই প্রভাব, গুরুত্বের কারণে বিজ্ঞাপন সংস্থা, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বিসিসিআই-কে তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় আনিবার কথা ভাবিলে তাহা হাস্যকর হইবে। রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটিয়াছে। সিদ্ধান্তটির পুনর্বিবেচনা জরুরি। রাজনৈতিক দল ও তাহার চালকদের আচরণ সম্পর্কে সমাজের বহু প্রশ্ন থাকিতে পারে, সেগুলি সমাজই তাহাদের সরাসরি করুক, আইনের প্রয়োজন নাই। কমিশন স্পষ্টতই অনধিকারচর্চা করিতেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.