|
|
|
|
|
|
কুবের উবাচ |
রজত সেন (৩৫)
• স্ত্রী সোনালি (৩০) • কন্যা (৪ মাস) • বাবা (৭১) • মা (৬০)
• বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সহ-অধ্যাপক
• স্ত্রী সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা
• বাবার পেনশন আছে • প্রধান শিক্ষিকা মা দাঁড়িয়ে অবসরের মুখে
• নিজের বাড়ি • গাড়ি কেনার ইচ্ছে তেমন নেই • আগ্রহ নেই ঝুঁকির বিনিয়োগেও
• সদ্য ঘরে আসা মেয়ের ভবিষ্যত্ সুরক্ষিত করতে চান • লক্ষ্য, সচ্ছল অবসর |
|
|
মাসে নিট আয় |
রজত: ৪০,০০০ |
সোনালি: ২৭,০০০ |
|
টাকা রাখেন (বছরে) |
• পিএফ (দু’জনের) |
৩,২৮০ |
• পিপিএফ |
৫,৮৩৩ |
• জীবন বিমা (৪টি, মোট বিমা মূল্য ৫ লক্ষ) |
২,২৫০ |
• রেকারিং ডিপোজিট |
১০,০০০ |
• এসআইপি |
৬০,০০০ |
খরচ (মাসে) |
• সংসার চালাতে |
১০,০০০ |
• স্বাস্থ্যবিমা (বছরে) |
২০৮ (রজত)
৮৩ (সোনালি) |
সম্পদ |
• ফিক্সড ডিপোজিট
|
৩,০০,০০০ |
• নগদ সঞ্চয় |
২,০০,০০০ |
|
|
|
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
শৈবাল বিশ্বাস |
|
সঞ্চয়-কৌশল সাজানোর পরামর্শ দিয়ে নয়। আজ এই লেখা বরং শুরু করব রজত আর সোনালিকে অভিনন্দন জানিয়ে। মাত্র মাস চারেক হল, তাঁদের ঘরে এসেছে ফুটফুটে কন্যাসন্তান। আমাদের সঙ্গে সেই আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। তা জানতে যখন পেরেইছি, তখন দেখি, রজতদের সঙ্গে সেই ছোট্ট মেয়েটিরও আর্থিক ভবিষ্যত্ সুরক্ষিত করা যায় কী ভাবে। |
ভিত শক্ত |
রজতদের পরিবারের সকলেই শিক্ষকতার পেশায় যুক্ত। এই মুহূর্তে তাঁদের অবস্থা সচ্ছল। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই রোজগেরে। বাবা-মাও আর্থিক ভাবে তাঁদের উপর নির্ভরশীল নন। বাবা মাস গেলে পেনশন পান। মা প্রধান শিক্ষিকা। সব থেকে বড় কথা, রজত আর সোনালির বয়স কম। তাই অবসরের আগে নিজেদের আয় আর সঞ্চয়কে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁদের দু’জনের সামনেই বিস্তীর্ণ সময় পড়ে রয়েছে। শুধু সেই খোলা মাঠে দৌড়নোর আগে একটু কৌশলী হতে হবে। যাতে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ভুল পথে দৌড়ে সঞ্চয় দমছুট না-হয়। |
আপত্তি আছে জানি |
এখনও পর্যন্ত শেয়ার বাজার কিংবা মিউচুয়াল ফান্ডে রজতরা কোনও টাকা রাখেননি। চিঠিতেও রজত স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, তিনি এতে বড় একটা আগ্রহী নন। বরং ঝুঁকি থেকে শত হস্ত দূরে। বেশ তো, টাকা সব সময় খাটানো উচিত সেই প্রকল্পেই, যেখানে আপনি স্বচ্ছন্দ। কষ্টের সঞ্চয় কোথায় ঢালবেন, সেই সিদ্ধান্তও একান্ত আপনাদের। পরামর্শদাতা হিসেবে আমার কাজ সামনে খোলা থাকা বিভিন্ন পথ তুলে ধরা। তার মধ্যে কোনটায় হাঁটলে ভবিষ্যত্ মসৃণ হবে, সব বুঝে-শুনে সেই পছন্দ করতে পারেন আপনারা। এর পর আসি সম্পদ তৈরির প্রসঙ্গে। রজত ও সোনালির এখনকার জমা-খরচের একটি তালিকা তৈরি করলে দেখা যাচ্ছে সব কিছুর পরেও তাঁদের হাতে সব মিলিয়ে ৩৮,৬২৫ টাকা থাকছে। মনে রাখতে হবে রজত আর ২৫ বছর পর অবসর নেবেন। অর্থাত্ এই সময়ের মধ্যেই তাঁকে প্রয়োজনীয় সঞ্চয় করতে হবে। |
রেকারিং ডিপোজিট ও স্থায়ী আমানত |
রজতের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানা গেল, তিনি প্রতি মাসে রেকারিং ডিপোজিটে যে টাকা জমান, মেয়াদ শেষ হলে সেই অর্থই স্থায়ী আমানতে রাখেন। এ ভাবেই তিনি এখনও পর্যন্ত ৩ লক্ষ টাকা জমিয়েছেন। তাঁদের এই প্রচেষ্টা খুবই প্রশংসাযোগ্য। আমার মতে আগামী দিনেও এই ভাবে সঞ্চয় চালিয়ে যাওয়া উচিত। |
স্বাস্থ্য বিমা |
রজত ও সোনালির স্বাস্থ্য বিমা থাকলেও, কভারেজ কম। পাশাপাশি, রজতের মেয়ের কথা মাথায় রেখে বলব আগামী দিনে তাঁদের তিন জনের অন্তত ৩ লক্ষ টাকার বিমা করে নিতে। যার বার্ষিক প্রিমিয়াম প্রায় ৭৫০০ টাকা (মাসে ৬২৫ টাকা)। |
জীবন বিমা |
রজতের চারটি জীবন বিমা প্রকল্প রয়েছে। জীবন আনন্দ, জীবন সরল, এনডাওমেন্ট এবং নিউ বিমা গোল্ড। প্রতিটিই ঋণপত্র নির্ভর বিমা প্রকল্প এবং অধিকাংশের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৪-’২৫ নাগাদ। তবে সব মিলিয়ে বিমা মূল্য অনেকটাই কম। তাই রজতের উচিত নিজের জন্য কমপক্ষে ২৫ লক্ষ টাকার টার্ম পলিসি করিয়ে নেওয়া। এই পলিসি করতে প্রিমিয়াম পড়বে বছরে প্রায় ৮,৭০০ টাকা (মাসে ৭২৫ টাকা)। |
সন্তানের জন্য সঞ্চয় |
রজতের মেয়ের বয়স মাত্র চার মাস। কিন্তু এখন থেকেই তার নামে অল্প অল্প করে টাকা জমাতে পারলে ভাল। বিমা সংস্থাগুলির আনা বিভিন্ন প্রকল্পে এখন টাকা লগ্নি না-করাই ভাল। বরং নিজের পছন্দের কোনও প্রকল্পে টাকা রাখতে পারেন। আপাতত দু’টি প্রকল্পের কথা বলতে পারি
১) মেয়ের নামে একটি রেকারিং ডিপোজিট খুলে টাকা রাখুন।
২) ‘এইচডিএফসি চিল্ড্রেন্স গিফ্ট প্ল্যান’ প্রকল্পটিতে সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি)-এর মাধ্যমে টাকা রাখুন। এতে শেয়ার ও ঋণপত্রের অনুপাত ২০:৮০। এখন থেকে এর যে কোনও একটি খাতে ৫,০০০ টাকা করে রাখা শুরু করুন। |
এসআইপি-র অন্দর মহলে |
রজতের শেয়ার বাজারে বা ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পে টাকা ঢালায় আপত্তি রয়েছে। কিন্তু তাঁকে একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, এই ক্ষেত্রে ঝুঁকি কিছুটা হলেও এড়িয়ে যাওয়ার অন্যতম উপায় দীর্ঘ দিন ধরে অল্প অল্প করে সঞ্চয় করা। যাতে লগ্নি ছড়িয়ে যেতে পারে। ফলে শেয়ার বাজার হঠাত্ করে পড়লেও সে রকম কোনও ক্ষতি হবে না। সে কারণেই আপনার জন্য উপযুক্ত হল এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি করা।
|
|
ঋণপত্রের জগত্: রজতের যেহেতু বিষয়টি নিয়ে সংশয় রয়েছে, তাই প্রথমে তাঁকে বলব ঋণপত্র নির্ভর কম ঝুঁকির কোনও মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পে এসআইপি করুন। এখানে মাসে ১০,০০০ টাকা করে রাখুন। ঋণপত্রের কথা বলার আরও একটা কারণ, আগামী দিনে মূল্যবৃদ্ধি কমলে ব্যাঙ্কে সুদ কমবে। ফলে ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডগুলির তুলনায় ভাল রিটার্ন দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চাইলে মেয়াদ শেষে সেই টাকা আবার স্থায়ী আমানতে রাখা যেতে পারে।
শেয়ার বাজারের জগত্: ঝুঁকি এড়িয়ে যেতে ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডগুলি সাহায্য করলেও, আমার মতে এগুলি পুরোপুরি সুরক্ষিত নয়। কারণ আজ যা ভাল রিটার্ন মনে হচ্ছে, হঠাত্ মূল্যবৃদ্ধি বাড়লে দেখতে পাবেন, কিছুই প্রায় হাতে রইল না। ফলে আমার মতে বেশি সময় ধরে লগ্নি করতে চাইলে শেয়ার বাজার নির্ভর ফান্ডগুলির দিকেও তাকিয়ে দেখুন। ৩১ বছরের হিসাব দেখলে বোঝা যায় বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের অধীনে থাকা শেয়ার সূচক (সেনসেক্স) গড়ে প্রায় ১৭% রিটার্ন দিয়েছে। অন্য যে কোনও লগ্নি ক্ষেত্রের থেকে যা অনেকটাই বেশি। বেশি দিন ধরে লগ্নির জন্য এই বাজার যে উপযুক্ত, তা এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট।
তাই রজতের প্রতি আমার পরামর্শ, ইক্যুইটি নির্ভর কোনও প্রকল্পে এসআইপি পদ্ধতিতে রাখুন মাসে ৫,০০০ টাকা। এতে যেমন ঝুঁকি কমবে, আবার মূল্যবৃদ্ধির চাপ এড়ানোও সম্ভব হবে। পাশাপাশি, ছড়িয়ে যাবে লগ্নিও। ১৯৮০ সালের পর থেকে কী ভাবে রিটার্ন বেড়েছে, তা বোঝার জন্যই সঙ্গে একটি তালিকা দিলাম। যার থেকে কিছুটা হলেও তিনি এস আই পি-র রিটার্নের আভাস পেতে পারেন।
এ বার দেখে নিই এই সব লগ্নির পর তাঁদের জমা খরচের তালিকা কী রকম দাঁড়াচ্ছে—
|
মোট আয়
সংসার খরচ
রেকারিং ডিপোজিট
পিপিএফ
জীবন বিমা
স্বাস্থ্য বিমা (রজতের)
স্বাস্থ্য বিমা (সোনালির)
স্বাস্থ্য বিমা (পরিবারের)
টার্ম পলিসি
এসআইপি (ঋণপত্র)
এসআইপি (শেয়ার)
রেকারিং/এসআইপি (মেয়ের) |
৬৭,০০০
১০,০০০
১০,০০০
৫,৮৩৩.৩৩
২,২৫০
২০৮.৩৩
৮৩.৩৩
৬২৫
৭২৫
১০,০০০
৫,০০০
৫,০০০ |
মোট খরচ |
৪৯,৭২৫ |
হাতে থাকছে |
১৭,২৭৫ |
|
নগদ জমা
সেভিংস অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা রাখার সুবিধা যে রয়েছে, তা নিয়ে আমি রজতের সঙ্গে এক মত। তাই সেখানে টাকা রাখতেই পারেন। তবে আমার পরামর্শ, তিনি হাতে থেকে যাওয়া ১৭,২৭৫ টাকা থেকে সেভিংস অ্যাকাউন্টে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রাখুন। তার পর সেখানে যে টাকা জমবে, তা আপনা থেকেই যাতে স্থায়ী আমানতে পরিবর্তিত হয়ে যায়, সে ব্যবস্থা করতে পারেন। তাতে তিনি সেভিংস অ্যাকাউন্টের থেকে সুদও বেশি পাবেন, আবার প্রয়োজনে নগদের জোগানও বজায় থাকবে। অনেক ব্যাঙ্কই এই সুবিধা দিচ্ছে।
আশা করব আমার এই পরামর্শ রজতকে ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে।
|
অনুরোধ মেনে নাম ও পদবী পরিবর্তিত |
|
|
|
|
|