আলু কেনার টাকা আত্মসাতের মামলায় মঙ্গলবার দুপুরে জলপাইগুড়ি জেলা আদালত থেকে জামিন পেলেও রাতেই অন্য একটি মামলায় ফের গ্রেফতার করা হল প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক গোবিন্দ রায়কে। জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে তাঁকে রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ দিন দুপুরে জামিনের পরে তাঁকে আলিপুরদুয়ার জেল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই তাঁর মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। যদিও জেল গেট থেকেই ফের তাঁকে ধরে পুলিশ। ৭ জুন ফের তাঁকে আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩১ জানুয়ারি জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ২০ লক্ষ টাকার একটি অনিয়মের অভিযোগ জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় দায়ের করেন। গত ২০০৮ সালে এক সংস্থাকে ২ লক্ষ টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হলেও খাতায় কলমে সেটিকে ২০ লক্ষ টাকা দেখানোর অভিযোগ ওঠে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাঙ্কের এক ম্যানেজারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই মামলায় তদন্তে সেই সময়কার ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান তথা ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা গোবিন্দবাবুর নাম উঠে আসে। |
গোবিন্দ রায়।—নিজস্ব চিত্র। |
বিকালে জেলা আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে ওই মামলাতেই গোবিন্দবাবুকে গ্রেফতার করার আবেদন জানানো হয় পুলিশের তরফে। সেই আবেদন মঞ্জুর করাতেই গোবিন্দবাবুকে ফের গ্রেফতার করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের একটি অনিয়মের অভিযোগে গোবিন্দ রায়কে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে আবেদন করে ওঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
এ দিনই জলপাইগুড়ি জেলা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় গোবিন্দবাবুর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। সরকারি সহায়ক মূল্যে আলু কেনার টাকা তছরুপের অভিযোগ ওঠে গোবিন্দবাবু-সহ তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁদের বিরুদ্ধে আলিপুরদুয়ার থানায় জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোবিন্দবাবুর স্ত্রী আগেই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান। গত ২৬ মার্চ গোবিন্দবাবু আলিপুরদুয়ার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। গত মাসে পুলিশ মামলার চার্জশিট জমা দেয়। মামলাটি আলিপুরদুয়ার থেকে জলপাইগুড়ি জেলা আদালতের বিশেষ কোর্টে পাঠানো হয়।
জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করা হয় সরকারি তরফে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশ চার্জশিট জমা দিয়ে দেওয়ায় মামলার শুনানি পর্ব শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি সরকারি তরফে গোবিন্দবাবুর বিরুদ্ধে সরকারি পদে থেকে নয়ছয় করার যে অভিযোগ করা হয়েছিল, তা এই মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলে আদালত জানিয়েছে। এদিন মামলাটি শুনানির জন্য আলিপুরদুয়ারের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৯ মে থেকে মামলার শুনানি হবে।
সরকারি আইনজীবী সোমনাথ পাল বলেন, “গোবিন্দবাবুর জামিনের বিরোধিতা করা হয়। তিনি জামিনে মুক্তি পেলে অনেক প্রমাণ নষ্ট করে দিতে পারেন বলে আমাদের আশঙ্কা। তবে তাঁর জামিন মঞ্জুর হয়। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন জানাব।” জামিন পাওয়ার পর প্রাক্তন বিধায়ক বলেছিলেন, “জামিন পেয়ে ভাল লাগছে। তবে এখনই কিছু বলব না।” আদালত চত্বরে গোবিন্দবাবুর সঙ্গে দেখা করেন ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক প্রবাল রাহা। গোবিন্দবাবুর আইনজীবী শুভ্রাংশু চাকির দাবি, “গোবিন্দবাবুর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণ করা যাবে না। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে।”
|