কৃষকদের থেকে আলু কেনার সরকারি টাকা নয়ছয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক গোবিন্দ রায়কে ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিল আদালত। প্রায় ৬ মাস ফেরার থাকার পরে মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ার আদালতের সহকারী মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রের সামনে আত্মসমর্পণ করেন গোবিন্দবাবু। অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে জেলা পুলিশের তরফেও আদালতে আবেদন করা হয়। দুপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার পরে জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক নীলাঞ্জন পালোধি। সরকারি আইনজীবী মহম্মদ রফি বলেন, “গোবিন্দবাবু টাকা নয়ছয়ের মূল পরিকল্পনা করেন। তাই তাঁর জামিনের বিরোধিতা করা হয়েছে।” এদিন আদালত চত্বরেই বাম আমলের আলু কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত গোবিন্দ বাবুর গলায় আলুর মালা পড়িয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিরক্ত গোবিন্দবাবু একটানে মালা ছিঁড়ে ফেলে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।” ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষের অভিযোগ, “আইনের তোয়াক্কা না করে তৃণমূলের ঝান্ডাধারী একদল দুষ্কৃতী আদালত চত্বরের মধ্যে পুলিশের উপস্থিতিতে যে ভাবে গোবিন্দ রায়কে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে তা অকল্পনীয়। |
আলিপুরদুয়ার আদালতে আলু-কাণ্ডে অভিযুক্ত গোবিন্দ রায়। —নিজস্ব চিত্র। |
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি ও দোষীদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”আদালত চত্বরে দাড়িয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক প্রবাল রাহা বলেন, “আইনের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। তৃণমূল নিজস্ব সংস্কৃতি অনুসরণ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। গোবিন্দবাবু অভিযোগ মুক্ত হওয়ার পরে আমরা ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নেব।”
কী অভিযোগ রয়েছে গোবিন্দ বাবুর বিরুদ্ধে? ২০১০ সালে কৃষকদের থেকে আলু কেনার বরাত পায় ফরওয়ার্ড ব্লকের তত্কালীন জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক এবং জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান গোবিন্দ বাবুর স্ত্রী সবিতা দেবীর ‘নবদিগন্ত সমবায় সমিতি’। অভিযোগ, ভুয়ো কৃষকদের নথি তৈরি করে আলু কেনা বাবদ প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা আত্মসাত্ করে গোবিন্দবাবুর স্ত্রী সবিতা রায়ের সমবায় সমিতি। বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের সইও জাল করার অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার মূল পরিকল্পনা গোবিন্দবাবুই করেন বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, সরকারি আইনজীবীর তরফে এদিন আদালতে জানানো হয়, সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান হিসেবে গোবিন্দ বাবু নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে ওই সমবায় সমিতিকে ব্যাঙ্ক থেকে অতিরিক্ত খাতে প্রায় ২ কোটি টাকা ঋণ পাইয়ে দেন।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর গোবিন্দ বাবু ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে সরকারি আলু কেনা নিয়ে প্রতারণা, ভুয়ো নথি তৈরি, নয়ছয়, সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আলিপুরদুয়ার থানায় অভিযোগ করেন গোবিন্দবাবুর দলেরই জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অলোক রায়। তারপর থেকেই গ্রেফতারি এড়াতে সস্ত্রীক ফেরার হন গোবিন্দবাবু। সুপ্রিম কোর্টে সবিতা দেবীর জামিনের আবেদন মঞ্জুর হয়। গোবিন্দবাবুর আবেদন নাকচ হয়। এর পরেই এ দিন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। |