বাজেট বৈঠকে পুরসভার গাড়ি ব্যবহার নিয়ে লাগাম ছাড়া তেল খরচ নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন ওঠায় তা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা পুরসভার যে গাড়ি ব্যবহার করতেন তাতে মাসে ৬০০ লিটার গাড়ির তেল খরচ করেছেন কী ভাবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস কাউন্সিলর সুজয় ঘটক। তিন মাসে ১ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা তাঁর গাড়ির তেল খরচ বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে শুধু রঞ্জনবাবুই নন পুরসভায় তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মেয়র পারিষদদের একাংশের গাড়ির খরচ লাগাম ছাড়া ছিল বলে প্রশ্ন ওঠায় তদন্ত দাবি করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। মাত্রাতিরিক্ত তেল খরচের ক্ষেত্রে তদন্তের দাবি তুলেছেন কংগ্রেস কাউন্সিলরদের একাংশও। বিজেপির দাবি, বাসিন্দাদের টাকা এ ভাবে গাড়ির পিছনে খরচ করা অপরাধ। তদন্ত করে পুরো বিষয়টি প্রকাশ্যে আনা উচিত।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “কোথাও কোনও অনিয়ম হলে মেয়রের তা দেখা উচিত। উনি তা দেখতেন না কেন সেটাই পরিষ্কার নয়। অবৈধ নির্মাণ নিয়ে ২৫০ টি অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই পড়ে রয়েছে। সে সব ক্ষেত্রে এখনও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সেই বিষয়টিও তদন্ত করা উচিত।” গৌতমবাবুর কথায়, শুরুতে বামেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পুরবোর্ড চালিয়েছে কংগ্রেস। সেই সময় থেকে বিভিন্ন বিভাগের কোথায় কী হয়েছে তদন্ত করুন মেয়র।
পুরসভা সূত্রে খবর, মেয়র পারিষদদের একাংশের গাড়ির খরচ মাত্রারিক্ত হওয়ায় তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ বিব্রত বোধ করেন। এমনকী গত ডিসেম্বর মাসে মেয়র পারিষদের বৈঠকে গাড়ির খরচে রাশ টানতে তাঁরা বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেন। তবে আখেরে জোটের ক্ষমতায় থাকা শিলিগুড়ি পুরবোর্ড তা চালু করতে পারেনি। খরচের রাশ টানা তাই সম্ভবও হয়নি। বাসিন্দাদের টাকা এ ভাবে নষ্ট করা ঠেকাতে গাড়ির তেল খরচের সীমা নির্ধারিত করার দাবিও তুলেছেন বাসিন্দাদের একাংশ। ডেপুটি মেয়র রঞ্জনবাবু অবশ্য বলেন, “সুজয়বাবু খরচের যে হিসাব দিচ্ছেন তা ঠিক নয়। তবে গাড়ির বিল ৩ মাসে যা এসেছিল তা আমিও সমর্থন করি না। গাড়ির চালককে ডেকে সতর্ক করাও হয়েছিল। তেল খরচ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আমি এক মাস গাড়ি ব্যবহারও করিনি।”
পুরসভারই একটি সূত্র জানিয়েছে, মেয়র পারিষদদের একাংশ পুরসভার কাজ ছাড়াও ব্যক্তিগত কাজে যথেচ্ছ গাড়ি ব্যবহার করতেন বলে অভিযোগ। মাছ ধরতে শিলিগুড়ি থেকে গজলডোবা যাওয়া, বড়শি ফেলে আসায় সেই গাড়িকেই ফের পাঠিয়ে বড়শি আনার মতো কাজ করেছেন কেউ। ব্যক্তিগত কাজে ডালখোলা বা অন্যত্র যেতে পুরসভার গাড়িও ব্যবহার করতেন তাঁরা। পুজোর চারদিন পুরসভার গাড়ি করে পরিবারের লোকদের নিয়ে পাশের জেলায় গিয়ে ঠাকুর দেখেছেন কেউ। বিজেপির জেলা সভাপতি নৃপেন দাস বলেন, “বাসিন্দাদের টাকা এ ভাবে নয়ছয় করার অধিকার কারও নেই। দায়িত্বে থাকা জনপ্রতিনিধিরা পুরসভার গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ পান বলে যা খুশি করতে পারেন না। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা উচিত। সাড়ে ৩ বছরে তারা মোট কত টাকা গাড়ি ব্যবহারের জন্য খরচ করেছেন তা খতিয়ে দেখা দরকার। বাসিন্দাদের তা জানার অধিকার আছে।” বিজেপির অভিযোগ, প্রথমে সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কংগ্রেস পুরবোর্ড গঠন করেছিল। তার পর তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে জোটের বোর্ড গঠন হয়। তাই তারা কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বামফ্রন্ট সকলকে ওই অভিযোগে সমান দোষী হিসাবে কাঠগড়ায় তুলেছেন।
পুরসভার পরিবহণ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ডিসেম্বর মাসে হিসাব থেকে দেখা গিয়েছে, তিন মাসে মেয়রের গাড়ির তেল খরচ গড়ে ৭০ হাজার টাকা। সে সময় বস্তি উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্বে থাকা মেয়র পরিষদ সঞ্জয় পাঠকের গাড়ির তেল খরচ হয়েছিল তিন মাসে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। তত্কালীন পূর্ত বিভাগ এবং বিল্ডিং বিভাগের দায়িত্বে থাকা মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল এবং সীমা সাহার গাড়ির তেল খরচ হয়েছে ৪৬ এবং ৪৯ হাজার টাকা। ৩ মাসে সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদের গাড়ির তেল খরচ গড়ে ৪৫ হাজার টাকা। এর পরেই ঠিক হয়, মেয়র, ডেপুটি মেয়র এবং চেয়ারম্যানের গাড়ির তেল খরচে কোনও নির্দিষ্ট সীমা করা হবে না। তাঁদের ছাড় দেওয়া হয়। বাকিদের মধ্যে সাফাই এবং পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদরা মাসে ২৫ হাজার টাকা করে তেল খরচ পাবেন। বাকি মেয়র পারিষদরা ১০ হাজার টাকা করে পাবেন। সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়রদের বাইকের তেল না দিয়ে মাসে ৫০০ টাকা করে দেওয়ার কথা ঠিক হয়। কিন্তু তা চালু করা হয়নি কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। |