টোলগে ওজবের পর পেন ওরজি। মোহনবাগানের পর ইস্টবেঙ্গলকেও চমকে দিল মহমেডান।
টোলগের সঙ্গে সবুজ-মেরুনের মতোই পেমেন্ট নিয়ে বনিবনা না হওয়ার কারণে পেনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল লাল-হলুদের। কিন্তু টোলগের মতো একেবারে ছাঁটাই হননি পেন। সে কারণে মর্গ্যান ব্রিগেডের নাইজিরীয় মিডফিল্ড জেনারেলকে সই করিয়ে ময়দান তথা ভারতীয় ফুটবলের চমক দেওয়ার পাশাপাশি বলা যায়, ইস্টবেঙ্গলকে কিছুটা ধাক্কাও দিল সাদা-কালো তাঁবু।
ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার অবশ্য সেটা মানতে নারাজ। “ইস্টবেঙ্গলে কেউ অপরিহার্য নয়। টোলগেও তো চলে গিয়েছিল। তাতে আমাদের কোনও ক্ষতি হয়নি।”
মঙ্গলবার দুপুরে মহমেডানের মাঠ-সচিব কামারুদ্দিনের অফিসে বসে চুক্তিপত্রে সই করেন পেন। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই মহমেডান তাঁবুতে এসে পেনের বিস্ফোরক মন্তব্য, “শুধুমাত্র টাকার জন্য আমি ইস্টবেঙ্গল ছাড়িনি। ইস্টবেঙ্গল তো আমাকে প্রস্তাবটাই ঠিক করে দেয়নি।”
পেনের এই মন্তব্যে লাল-হলুদের ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য অবশ্য ক্ষুব্ধ। বলে দিলেন, “এ সব ওর বাহানা ছাড়া কিছুই নয়। একই সঙ্গে আলোচনা করতে পেন, ওপারাকে আমরা ডেকেছিলাম। দু’দিন বাদে যখন ওপারা ইস্টবেঙ্গলে থাকার জন্য সই করল, তখনও আমরা পেনের সঙ্গে কথা বলেছিলাম।”
|
“হ্যালো ইস্টবেঙ্গল, আমি মহমেডানে।” নতুন ক্লাবের সামনে
দাঁড়িয়ে
কি ফোনে এ কথাই বলছেন পেন? ছবি: উৎপল সরকার |
এটা ঠিকই যে, পরের মরসুমের চুক্তি নিয়ে পেনের সঙ্গে গত কয়েক দিনে একাধিক বার আলোচনায় বসেছিলেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। তবে টাকার অঙ্কটা গত বারের তুলনায় অনেকটাই কম ছিল। পেন তাতে রাজি হননি। ইস্টবেঙ্গল অবশ্য আগেই পেন যে পজিশনে সাধারণত খেলেন, সেই জায়গার জন্য আর এক বিদেশি জাপানি সুয়োকা-কে সই করিয়েছে। এ সব মিলিয়েই ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার কথা ভাবতে শুরু করেছিলেন লাগোসের বাসিন্দা পেন। বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে কথাও চালাচালি করছিলেন গত ক’দিন যাবত। শেষমেশ সোমবার মাঝরাতে মহামেডানের সঙ্গে চূড়ান্ত কথা হয় পেনের। এবং মঙ্গলবার সরকারি ভাবে মহমেডানের চুক্তিপত্রে সই করেন তিনি।
ওয়াকিবহাল মহল সূত্রের খবর অনুযায়ী, বিদেশি অ্যালফ্রেডের জায়গায় পেনকে সই করাল মহমেডান। যদিও ক্লাব প্রেসিডেন্ট সুলতান আহমেদ এ দিন বলেন, “অ্যালফ্রেডকে ছাড়ার এখনই কোনও ভাবনা নেই আমাদের।” কিন্তু একটি সূত্র আবার জানাচ্ছেন, অ্যালফ্রেডকে নাকি ডেকে বলে দেওয়া হয়েছে অন্য ক্লাব খুঁজে নিতে। তাঁকে পরের মরসুমের জন্য অ্যাডভান্স টাকা দিয়েছিল মহমেডান। কিন্তু পেনকে পেয়ে যাওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দিচ্ছে। এমনকী অন্য ক্লাব পেয়ে গেলে ওই টাকা অ্যালফ্রেডকে ফেরত দিতে বলা হয়েছে মহমেডানের তরফে।
মহমেডান শিবিরের খবর অনুযায়ী, ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তাবের তুলনায় অনেক বেশি টাকায় সাদা-কালোয় সই করেছেন পেন। শোনা যাচ্ছে, এক বছরের জন্য ষাট লাখের বেশি টাকায় পেন সই করেছেন মহমেডানে। সই করার পরই নাইজিরীয় মিডফিল্ডারের হুঙ্কার, “এক মরসুম পর আমার আর টোলগের জুটি আবার মাঠে আগুন ঝরাবে।”
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের না হোক, পেনকে হারানোয় মন খারাপ লাল-হলুদে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু উগা ওপারার। মঙ্গলবার নাইজিরিয়ায় ছুটি কাটাতে যাওয়ার আগে ওপারা বললেন, “পেনকে খুব মিস করব। তবে আমরা সবাই পেশাদার ফুটবলার। লড়াইটা মাঠের মধ্যে ৯০ মিনিটের জন্য। বাইরে তো আমরা বন্ধুই থাকব। নতুন ক্লাবে নতুন ইনিংস শুরু করতে চলেছে পেন। ওর জন্য শুভেচ্ছা থাকল।”
পেন অবশ্য লাল-হলুদকে অতীত করে প্রথম দিন থেকেই যেন মহমেডান নিয়ে ডুবে গিয়েছেন। “তিন বছরে আটটা ট্রফি আমি লাল-হলুদে ফেলে এসেছি। তার বেশি কিছু নয়। আমার কাছে এখন মহমেডানই সব। এই ক্লাব, এই তাঁবু, এই ড্রেসিংরুম নিয়েই এখন ভাবতে চাই।”
ইস্টবেঙ্গলকে এএফসি কাপ কোয়ার্টার ফাইনালে তোলার পেছনে পেনের অন্যতম ভূমিকা ছিল। কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটা কি তিনি মিস করবেন না? “মহমেডানের হয়ে পরের এএফসি কাপ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলব,” যেন ইস্টবেঙ্গলকে শুনিয়ে বললেন সদ্য প্রাক্তন হওয়া লাল-হলুদের মিডফিল্ড জেনারেল।
|