দাউদের নির্দেশেই চলছিলেন শ্রীসন্তরা, কোর্টে দাবি পুলিশের
দালতে পৌঁছনোর আগেই খবর পেয়েছিলেন, জামিন মঞ্জুর হয়েছে গুরুনাথ মইয়াপ্পন ও বিন্দু দারা সিংহের। দু’আঙুলে ‘ভিকট্রি’ দেখাতে দেখাতে প্রিজন ভ্যান থেকে নেমেছিলেন শান্তাকুমারন শ্রীসন্ত। কলঙ্কিত পেসার তখন নিজের জামিন নিয়েও প্রবল আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু বেরিয়ে যখন এলেন, তখন তাঁর মাথায় ঝুলছে দাউদ ইব্রাহিম-ছোটা শাকিলের আজ্ঞাবহ হওয়ার ভয়ঙ্করতম অভিযোগ। এই অভিযোগেই ধৃত তিন ক্রিকেটার-সহ অভিযুক্ত ২৬ জনের বিরুদ্ধে ‘মকোকা’ (মহারাষ্ট্র কন্ট্রোল অফ অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যাক্ট) প্রয়োগের আর্জি জানিয়েছে পুলিশ। ১৮ জুন পর্যন্ত তিহাড় জেলই ফের ঠিকানা হয়েছে শ্রীসন্তের।
এত দিন বলা হচ্ছিল আকারে-ইঙ্গিতে। আজ আদালতে সরাসরি দাউদ-শাকিলের নাম তোলে দিল্লি পুলিশ। বলা হয়, এই দু’জনের নির্দেশেই আইপিএলে স্পট ফিক্সিং করেছেন শ্রীসন্তরা। টেলিফোনে আড়ি পেতে এর অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। কোর্টে পুলিশের আরও বক্তব্য, আইপিএলে বেটিং এবং ফিক্সিং নিয়ন্ত্রণ করে ডি-কোম্পানি। তাদের টাকা আসে হাওয়ালা মারফত। সেই টাকাই খাটে আইপিএলে।
মকোকা-য় শ্রীসন্তদের বিচারের আর্জি জানাতে গিয়ে পুলিশ বলে, “বিদেশে বসে থাকা দাউদ ইব্রাহিম ও ছোটা শাকিলের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের পুরনো রেকর্ড রয়েছে। অভিযুক্তরা যেহেতু তাদের নির্দেশেই চলত, তাই তাদের বিরুদ্ধে মকোকা-য় অভিযোগ দায়ের করতে চাওয়া হচ্ছে।” যুগ্ম কমিশনার (স্পেশ্যাল সেল)-এর সম্মতিক্রমেই শ্রীসন্তদের বিরুদ্ধে মকোকা-র ৩ ও ৪ নম্বর ধারা প্রয়োগ করতে চায় দিল্লি পুলিশ। অভিযুক্তদের আইনজীবীরা স্বভাবতই তার বিরোধিতা করেছেন। এখন এই আইনেই শ্রীসন্তদের বিচার হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। তার আগে অন্ধকার জগতের সঙ্গে অভিযুক্তদের যোগাযোগের প্রমাণ দিতে হবে পুলিশকে।
সত্যিই যদি মকোকা-য় চার্জ গঠন হয়, তা হলে কিন্তু শ্রীসন্তদের জন্য অপেক্ষা করে থাকছে স্রেফ অন্ধকার। বিতর্কিত এই আইনে জামিন হয় না। সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা। পুলিশের এক কর্তা বলেন, “অন্ধকার জগতের পাণ্ডা, বুকি, ক্রিকেটার সব মিলিয়ে একটা সংগঠিত চক্র রয়েছে। খেলোয়াড়দের অনেক সময়েই ভয় দেখিয়ে রাজি করানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য অভিযুক্তরাও আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছেন।” পরে দিল্লি পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার বলেন, “আমরা বুকিদের কাছ থেকেই জানতে পেরেছি যে, আইপিএলে হাওয়ালা মারফত টাকা খাটাত ডি-কোম্পানি। অনেক টাকা উদ্ধারও করেছি আমরা।” একই দিনে বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক মহম্মদ আশরাফুলকে গড়াপেটার জন্য নির্বাসনে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
অভিযুক্ত ২৬ জনের মধ্যে শ্রীসন্তের বন্ধু অভিষেক শুক্ল এবং ক্রিকেটার অঙ্কিত চহ্বাণ আপাতত জামিনে মুক্ত। ৬ তারিখে আত্মসমর্পণ করার কথা অঙ্কিতের। বিন্দু-গুরুনাথের জামিনের প্রসঙ্গ টেনে অন্য অভিযুক্তদের আইনজীবীরা আজ দিল্লিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। শ্রীসন্তের আইনজীবী রেবেকা জন যেমন বলেন, জামিন দেবে না বলেই পুলিশ তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে মকোকা আনতে চাইছে। আবার বুকি চন্দ্রেশ পটেলের আইনজীবীর বক্তব্য, বিন্দু এবং গুরুনাথকেও মকোকা-র আওতায় ফেলতে চাইছে পুলিশ। কিন্তু তাঁরা মুম্বইয়ের আদালতে জামিন পেয়ে গেলেন, অথচ দিল্লির আদালত কাউকে জামিন দিল না। মকোকা-র বিষয়টি চলে আসায় এখন থেকে শ্রীসন্ত-সহ ১৬ অভিযুক্তের জামিনের মামলার শুনানি ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের পরিবর্তে হবে অতিরিক্ত দায়রা বিচারক সঞ্জীবকুমার জৈনের এজলাসে।
তিন ক্রিকেটার-সহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে মকোকা-র ৩ ও ৪ নম্বর ধারায় অভিযোগ আনতে চায় পুলিশ
কেন?
দাউদ-ছোটা শাকিলের নির্দেশে চলছিলেন শ্রীসন্তরা, ফোনে আড়ি পেতে নিশ্চিত প্রমাণ
হাওয়ালার মাধ্যমে আইপিএলে দাউদের টাকা খাটে, আদালতে জানাল দিল্লি পুলিশ

১৮ জুন পর্যন্ত জেলে শ্রীসন্তরা
‘মহারাষ্ট্র কন্ট্রোল অফ অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যাক্ট’। জামিন অযোগ্য। ভারতীয় দণ্ডবিধিতে এক বারে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের পুলিশ হেফাজত চাওয়া যায়, কিন্তু মকোকায় চাওয়া যায় ৩০ দিন পর্যন্ত। ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে হয়। মকোকায় সেই সময়সীমা ১৮০ দিন।
সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন, ৫ লাখ জরিমানা।
সর্বোচ্চ দশ বছর জেল, ১ লাখ জরিমানা, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তও হতে পারে
শ্রীসন্তদের নিয়ে মঙ্গলবার যেমন নতুন তোলপাড় শুরু হল ক্রিকেটমহলে, ঠিক ততটা না হলেও বোর্ড মহলে এ দিন কিছুটা নাড়া পড়ল বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট অরুণ জেটলির মন্তব্যে। যেখানে জেটলি একটি চ্যানেলকে বলে দিলেন, জগমোহন ডালমিয়া নন, বোর্ডের অন্তবর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রথম পছন্দ ছিলেন শশাঙ্ক মনোহর।
চেন্নাইয়ের রবিবাসরীয় বৈঠকের পর-পরই বিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এক দিকে ছিলেন শরদ পওয়ার, আইএস বিন্দ্রা, ললিত মোদী, শশাঙ্ক মনোহর। অন্য দিকে শ্রীনিবাসনের পরোক্ষ সমর্থনপুষ্ট গোষ্ঠী হিসেবে ছিলেন ডালমিয়া-জেটলি। কিন্তু মঙ্গলবার জেটলি বলেন, “ব্যক্তিগত ভাবে আমি শশাঙ্ক মনোহরকেই দেখতে চেয়েছিলাম। তাই ওঁর সম্মতি আছে কি না, না জেনেই মনোহরের নাম প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু শশাঙ্কের বোর্ডে ফিরে আসার কোনও রকম ইচ্ছে ছিল না। সদস্যদের অনেকেই ডালমিয়ার নাম মেনে নিয়েছিলেন। নাম নিয়ে বাছবিচার করার মতো পরিস্থিতি তখন আমাদের ছিল না।”
তবে ডালমিয়া নিয়ে অসূয়া দেখাননি জেটলি। বলেছেন, “উনি একজন দক্ষ প্রশাসক। অভিজ্ঞ। এবং ক্রিকেট নিয়ে প্রবল ভাবনাচিন্তা করেন। ডালমিয়া যে দক্ষতার সঙ্গেই কাজ ঠিকঠাক করতে পারবেন তা নিয়ে সন্দেহ নেই।”

পুরনো খবর ১:পুরনো খবর ২:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.