জুহু চার্চ রোডের ওই এলাকার ল্যান্ডমার্ক সঞ্জয় খানের বাড়ি। লোকে ওখানে গেলে চারতলা বাড়িটা (যার নাম ‘সঞ্জয় হাউস’) দেখতে যায়। না হলে যায় উল্টো দিকের ইতালীয় রেস্তোরাঁয় খেতে।
মঙ্গলবার দুপুর থেকে ওই সরু রাস্তাটার ওপর পাঁচ-ছ’টা ওবি ভ্যান দেখে সবাই বোধহয় ভাবছিল, হয় সঞ্জয় খানের বাড়িতে বিশেষ অতিথি এসেছেন। না হলে রেস্তোরাঁয় কোনও সেলিব্রিটি পার্টি দেওয়া হয়েছে। পাড়ার লোকেরাও তা-ই ধরে নেন। কেউ বুঝতেই পারেননি যে, তাঁদের প্রতিবেশীদের মধ্য থেকেই বিন্দু দারা সিংহকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে।
মূল রাস্তা থেকে ভেতরের দিকে সরু গলিটায় ‘দারা ভিলা’। এখন যার নাম ‘মমতা অ্যাপার্টমেন্ট। আগে পুরোটাই ‘দারা ভিলা’ ছিল। অবস্থার অবনতি ঘটায় অর্ধেকটা বিক্রি করতে হয়। এখন ‘মমতা অ্যাপার্টমেন্ট’-এর দুটো তলায় ‘দারা ভিলা’। একটা বিউটি সেলুন। ঘটনার ছ’ঘণ্টা বাদেও মিডিয়ার ভিড় এবং যাঁরা দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁরা হতবুদ্ধি। বলিউডের একাংশেরও সে রকম অবস্থা। বিশ্বাসই হচ্ছে না, শেষ পর্যন্ত আইপিএল-কেলেঙ্কারির রেশ তাঁদের ওপরে গিয়েও পড়ল! পুলিশের ধারণা, স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে বলিউডের আরও বেশ কিছু নাম উঠে আসবে অদূর ভবিষ্যতেই।
|
তিন বছর আগেও পুলিশ জেরা করেছিল বিন্দুকে। কিছুই প্রমাণ হয়নি। এবং কোটলায় যে দিন প্রথম প্লে-অফ ম্যাচ দেখতে দর্শক মাঠ ভরিয়ে এল, সে দিনই আইপিএলের ওপর জোড়া আঘাত। সহারা গোষ্ঠীর স্পনসরশিপ তুলে নেওয়াটা যদি বিশাল অর্থনৈতিক আঘাত হয়, তা হলে আত্মিক আঘাত বিন্দুর গ্রেফতার হওয়াটা। কারণ, টিভি চ্যানেলে বারবার দারা সিংহের ছেলেকে সাক্ষী এবং ধোনির এজেন্ট অরুণ পাণ্ডের পাশে বসে ম্যাচ দেখতে দেখা গেলেও বিন্দু আসলে অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজিরই ঘনিষ্ঠ। কেকেআর-সহ। কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যুক্ত মোরানি ব্রাদার্স-ও বিন্দুর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে। ক্রিকেটমহলে শোকটা বেশি, কারণ বিন্দুর গলায় ঝুলত আইপিএলের অদৃশ্য ‘অল অ্যাক্সেস কার্ড’। শুধু রাজীব শুক্লের আমলে নয়, ললিত মোদীর জমানাতেও। সেই বিন্দুর মধ্যে পচন ধরলে টিমগুলোর মধ্যে কী পরিমাণ পচন, ভেবে ক্রিকেটমহল আতঙ্কিত।
বিন্দুকে ২৪ মে পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের দাবি, বুকিদের সঙ্গে শুধু যে বিন্দুর যোগাযোগ ছিল তা-ই নয়, তিনি নিজেও বেটিং করতেন। জুপিটার ও পবন জয়পুর নামে দুই বুকির সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হত। মুম্বই পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) হিমাংশু রায় জানান, অল্পেশ পটেল ও প্রেম তানেজা নামে দুই বুকিকে তাঁরা গ্রেফতার করেছেন। ‘হাওয়ালা অপারেটর’ অল্পেশের কাছ থেকে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা নগদ উদ্ধার হয়েছে। ওই দু’জনই পুলিশকে জানিয়েছে, ধৃত ক্রিকেটার অজিত চান্ডিলা ও অঙ্কিত চহ্বাণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বিন্দুর।
চান্ডিলা, চহ্বাণ ও শান্তাকুমারন শ্রীসন্তকে আজ আরও পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে দিল্লির আদালত। গ্রেফতার হওয়ার পর এই প্রথম প্রকাশ্যে মুখ দেখা গেল শ্রীসন্তের। আদালতে শুনানির সময়েও বিহ্বল দেখিয়েছে তাঁকে। আজই আবার শ্রীসন্তকে নিয়ে জয়পুরের ম্যারিয়ট হোটেলে ঘুরে আসে দিল্লি পুলিশ। জেরায় পুলিশের মনে হয়েছে, ওই হোটেল থেকেই চান্ডিলাদের সঙ্গে স্পট ফিক্সিং চালাতেন শ্রীসন্ত। জয়পুরে গিয়ে শ্রীসন্তের প্রেমিকা বলে পরিচিত এক মহিলাকে জেরাও করে পুলিশ। সেই মহিলার সামনেই শ্রীসন্ত অফিসারদের খোলসা করে জানান, ফিক্সিংয়ের টাকা তিনি কখনওই নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রাখতেন না। দেদার কেনাকাটা করে উড়িয়ে দিতেন। সেই কেনাকাটা দেখেও তাজ্জব পুলিশ। মুম্বইয়ে শুধু এক দিনেই শ্রীসন্ত ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকার কেনাকাটা করেন। তার বেশির ভাগটাই জামাকাপড়, সেই সঙ্গে ছিল প্রেমিকার জন্য আধুনিকতম মডেলের ব্ল্যাকবেরি। |
এত ডামাডোল সত্ত্বেও আইপিএল নিষিদ্ধ করতে নারাজ সর্বোচ্চ আদালত। স্পট ফিক্সিংয়ের জেরে আইপিএল বন্ধের আর্জি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন লখনউয়ের সুদর্শ অবস্তী। বিচারপতি বি এস চৌহান ও বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চ সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েও তদন্তে গয়ংগচ্ছ মনোভাবের জন্য তীব্র ভর্ৎসনা করেছে বিসিসিআই -কে। দু’সপ্তাহের মধ্যে বোর্ডের তদন্ত রিপোর্ট চেয়েছে কোর্ট।
ধাক্কার পর ধাক্কা! বোর্ডের একাংশের মতে, সহারার আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি তুলে নেওয়ার চেয়ে অনেক বড় আঘাত তাদের জাতীয় দলের স্পনসরশিপ তুলে নেওয়া। বোর্ডের ধারণা, বছরে ১৭০ কোটি দেওয়ার মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি না হোক, পুণের জায়গায় অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি তারা পেয়ে যাবে। সহারাকে নিয়ে এমনিতেও ঝামেলা চলছিল। যাদের স্টেডিয়ামে তারা হোম ম্যাচ খেলছিল, সেই মহারাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থাকেও তারা টাকা দিচ্ছিল না। খিটিমিটি লেগেই ছিল।
কিন্তু আসল সমস্যা জাতীয় দলের নতুন স্পনসর পাওয়া। নিয়ম হল, অ্যালকোহল বা সিগারেট কোম্পানিকে স্পনসর নেওয়া যাবে না। তা হলে এত টাকা কে দেবে? বোর্ডের হেড কোয়ার্টার শহর মুম্বই এই ব্যাপারটা নিয়েই এত বড় সমস্যায় পড়ে গিয়েছে যে, চেন্নাই-মুম্বই প্লে অফেকে জিতল, তাতে এখন আদৌ কিছু আসে যায় না।
|