সন্ধের দিকে ইন্টারনেট ঘাঁটতে-ঘাঁটতে দেখছিলাম, প্রচুর টুইট, ফেসবুক পোস্টে বলা হচ্ছে, যে কোটলাতেই আইপিএল ফাইনালটা কী রকম হতে যাচ্ছে আন্দাজ পাওয়া যাবে। কথাটা এক দিক থেকে ঠিক। আমি নিজেও বিশ্বাস করি, ইডেনে আগামী রবিবার মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আর রোহিত শর্মাই টস করতে নামবে। আজ পার্ট ওয়ান-টা হল। ইডেনে পার্ট টু। আর কেন জানি না ম্যাচটা দেখার পর মনে হচ্ছে, শুধু দুই ফাইনালিস্ট নয়, একইসঙ্গে চ্যাম্পিয়নকেও দেখে নিলাম!
কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন যে, এত তাড়াতাড়ি কী ভাবে কথাটা বলে ফেলছি? কিন্তু আমার সামান্য ক্রিকেটীয় বোধবুদ্ধি বলছে, এই চেন্নাইকে হারানো দুঃসাধ্য না হলেও প্রচণ্ড কঠিন। কোনও সন্দেহ নেই, মুম্বই নয়, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরাই টুর্নামেন্টের সেরা টিম। আর ওদের একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে। টুর্নামেন্ট যত এগোয়, তত যেন ওরা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। গত পাঁচটা আইপিএলে দেখেছি, এ বারও দেখছি।
চেন্নাইয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধাটা কী জানেন? ওরা ছ’বছরে টিম খুব বেশি পাল্টায়নি। মোটামুটি একই সব প্লেয়ার ধরে রেখেছে। যেটা আইপিএলের মতো লম্বা টুর্নামেন্টে বিরাট ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। যেমন হাসিকে এখন আর ক্রিজের উল্টো দিকে হেঁটে রায়নাকে বলে আসতে হয় না, তুমি চালাও, আমি শিট অ্যাঙ্করের কাজটা করছি। বা উল্টোটা। তা ছাড়া ওদের টিমটাও বড্ড ভাল। আইপিএলের আর কোন ফ্র্যাঞ্চাইজিতে এত জন ম্যাচ উইনার আছে? আর সবাইকে দেখুন, ঠিক সময়ে দুর্ধর্ষ ফর্মে। মাইক হাসি থেকে সুরেশ রায়না, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি থেকে ডোয়েন ব্র্যাভো, রবীন্দ্র জাডেজা (এ দিন মোক্ষম সময়ে ৩ উইকেট) কাকে ছেড়ে কাকে ধরবেন? ওদের দেখলে মনে হয়, টুর্নামেন্টটা মোটেও তিপান্ন দিন, বা চুয়াত্তরটা ম্যাচের নয়। আইপিএলটা দু’ম্যাচের, মাত্র চার-পাঁচ দিনের। মানে প্লে অফ থেকে ওদের টুর্নামেন্ট শুরু হয়, বলতে চাইছি আর কী! |
ধোনিদের আরও একটা ব্যাপার আমাকে মুগ্ধ করে। ওরা চরম চাপের মধ্যেও কিন্তু নার্ভ হারায় না। আজকের ম্যাচকেই ধরুন। ১৯৩ তাড়া করতে নেমে ডোয়েন স্মিথ এমন মার-মার কাট-কাট ব্যাটিং চালু করেছিল যে, মনে হচ্ছিল ম্যাচটা বোধহয় আঠারো ওভারেই শেষ হয়ে যাবে! ঘটনাচক্রে হলও তাই, ম্যাচ আঠারো ওভারেই শেষ হল, কিন্তু জিতল চেন্নাই।
মুম্বই কিছুই করতে পারেনি আমি বলব না। সিএসকে ম্যাচটার রিমোট কন্ট্রোল একদম শুরু থেকে নিয়ে নিয়েছিল। মাইক হাসিকে মিস্টার ক্রিকেট বলে গোটা দুনিয়া চেনে। কিন্তু সেটা ওর টেস্ট ক্রিকেটের পারফরম্যান্সের জন্য। এর পর আইপিএলে ওর পারফরম্যান্স দেখে যদি ওকে নতুন উপাধি দেওয়া হয়, অবাক হব না। ভাবুন তো চল্লিশ বছর বয়সে একটা লোক ৫৮ বলে ৮৬ করে যাচ্ছে, কুড়ি ওভারেও কেউ আউট করতে পারছে না! রায়নার সঙ্গে স্ট্রাইকরেটে পাল্লা দিচ্ছে, যে কিনা প্রায় ওর অর্ধেক বয়সি!
আর রায়নাও পারে বটে। আইপিএলে শুরুর দিকে একেবারে ফর্মে ছিল না। আর এখন এমন খেলছে যে, আগের লাইনটা লোকে ভুলেই যাবে। মঙ্গলবার ওর ফিল্ডিংটাও এক বার মনে করে দেখুন। জনসনের যে ক্যাচটা অনেকটা দৌড়ে এসে নিল, সেটা বোধহয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ডাগআউটে বসে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকান নিলেও গর্বিত বোধ করতেন। জন্টি রোডসের কথা বলছি।
দশ আস্কিং রেট ঘাড়ে ব্যাট করতে নামলে, ক্রিকেটীয় দক্ষতার সঙ্গে একটু ভাগ্যও লাগে। মুম্বই সেটাও পায়নি। দীনেশ কার্তিক দেখছিলাম যা মারছে, কাট হোক কিংবা ড্রাইভ সোজা ফিল্ডারের হাতে যাচ্ছে। পোলার্ড ফ্লিক করল একটা, সোজা স্কোয়্যার লেগের হাতে চলে গেল। ধোনিও দুর্দান্ত ক্যাপ্টেন্সি করেছে। কার্তিকের একটা স্বভাব আছে যে আটকে গেলে পেসারকে স্টেপ আউট করে ফেলে দিতে চায়। আজ দেখলাম, ওকে স্টেপ আউটের চেষ্টায় যেতে দেখেই ধোনি স্টাম্পের আরও কাছে এগিয়ে এসে কিপ করা শুরু করল। মানে, পা জায়গায় না থাকলেই নির্ঘাৎ স্টাম্পিং। কার্তিকও ব্যাপারটা দেখে ঘাবড়ে গেল।
যা দেখছি, ফাইনালে শেষ পর্যন্ত উঠলে চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে মুম্বইকে দু’টো জিনিস করতে হবে। এক, বড় ম্যাচে টেম্পারামেন্ট হারালে চলবে না। দুই, রান তাড়া করায় উন্নতি ঘটাতে হবে।
মুম্বই একটা ব্যাপার নিয়ে স্বস্তিতে থাকতে পারে। ফাইনালে উঠলে ওরা হয়তো সচিনকে পাবে। আজও টিম লিস্টে সচিন তেন্ডুলকর থাকা না থাকায় মানসিকতার তফাতটা যে কী রকম হয়, কোটলায় কিন্তু পরিষ্কার বোঝা গেল।
|