মনোনয়ন ঘিরে সংঘর্ষ, ঝরল রক্ত |
জমায়েত হটাতে লাঠি ধরলেন মহকুমাশাসক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বিডিও অফিসে মনোনয়ন জমা দেওয়া যাচ্ছে না। বিরোধীদের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মহকুমাশাসকের অফিসে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন। তাতেও থামছে না অশান্তি।
মঙ্গলবার মেদিনীপুর শহরে সদর মহকুমাশাসকের দফতরে দেখা গেল শাসকদলের দাপাদাপি। তৃণমূলের লোকজনের জমায়েত হঠাতে পুলিশের সঙ্গে পথে নামতে হল মহকুমাশাসককেও। লাঠি হাতে তেড়ে যেতে দেখা যায় তাঁকে। পুলিশ দুই তৃণমূল কর্মীকে আটক করলে পরিস্থিতি জটিল হয়। তৃণমূল সমর্থকেরা পথ অবরোধ করেন। ঘেরাও করা হয় মহকুমাশাসককের অফিস। পুলিশ গিয়ে কোনও রকমে মহকুমাশাসককে বের করে আনেন। তারপরেও ঘেরাও ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত আটক দু’জনকে ছেড়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত বলেন, “অফিসের সামনে কিছু লোক অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছিল। তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়।” জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতির বক্তব্য, “প্রথমে একটা সমস্যা হয়েছিল। পরে তা মিটে গিয়েছে।” |
 |
শালবনিতে আহত তৃণমূল কর্মী। —নিজস্ব চিত্র। |
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কোতয়ালি থানার হাতিহল্কায় তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষ বাধে। আগুন লাগানো হয় ৩টি বাড়িতে। দু’দলের প্রায় ১০ জন জখম হন। তাঁদের মধ্যে দুই তৃণমূল সমর্থক মাঞ্জারুল দালাল ও জহুরা বিবিকে তিরবিদ্ধ অবস্থায় মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। তৃণমূল বিধায়ক মৃগেন মাইতির অভিযোগ, “আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা মনোনয়ন দিতে মেদিনীপুর এসেছিলেন। গ্রামে দলের কেউ ছিল না বললেই চলে। সেই সুযোগে সিপিএম নেতা তাইবুল আলি বিশ্বাসের নেতৃত্বে আমাদের সমর্থকদের মারধর করা হয়, বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।” সিপিএম নেতা তাইবুল অবশ্য অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, “তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ওদের এই ঘটনা। আমার ভাই আসিফ আলি বিশ্বাস-সহ তিন জনের বাড়িতেও আগুন দিয়েছে। মারধর করেছে। তির ছুড়েছে।” আগুন নেভাতে গ্রামে যায় দমকল। পুলিশও পৌঁছয়। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। এলাকায় টহল চলছে।
হামলার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধেও। মঙ্গলবার শালবনির বাসিন্দা অসিত ঘোষ বৌমা কবিতাকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন জমা দিতে বিডিও অফিস গিয়েছিলেন। অভিযোগ, বিডিও অফিস থেকে বেরোনোর পরেই সিপিএমের লোকজন হামলা চালায়। মেরে অসিতবাবুর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। মৃগেনবাবুর অভিযোগ, “সিপিএম অতর্কিতে হামলা চালিয়ে আমাদের কর্মীকে মারল। আমরা অবশ্য কর্মীদের বলে দিয়েছি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো শান্ত থাকতে।” যদিও সিপিএম নেতৃত্ব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছেন, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে অসিতবাবু আহত হয়েছেন। |
 |
শালবনিতে আহত তৃণমূল কর্মী। |
জেলা জুড়ে মনোনয়নে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল, মনোনয়নের প্রথম দিন থেকে এই অভিযোগ করছিল বিরোধীরা। তার জেরে জেলার ৮টি ব্লকের মনোনয়ন মহকুমাশাসকের অফিসেও দেওয়া যাবে বলে জানায় কমিশন। মঙ্গলবার সেই তালিকায় আরও ২টি ব্লক সংযুক্ত হল মেদিনীপুর সদর ব্লক ও শালবনি। এ দিন সকাল থেকেই মেদিনীপুর শহরে সদর মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে ভিড় করেছিলেন বিভিন্ন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। এক সময় সিপিএম ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে বচসা শুরু হয়। দু’পক্ষের সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিলে মহকুমাশাসক নিজেই লাঠি হাতে আসরে নামেন। মৃদু লাঠিচার্জও করা হয় বলেও অভিযোগ।
মেদিনীপুর মহকুমাশাসকের অফিসে মনোনয়ন জমা দিয়ে বেরিয়ে আসার পর বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয় প্রত্যাহারের জন্য তৃণমূল হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ। সিপিআইয়ের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী গুরুপদ মুর্মুু, ছবি রায়, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী দিলীপ হেমব্রম, বাবুলাল হেমব্রমদের এই মর্মে মুচলেকা লেখানো হয় বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণা। |
 |
সাংবাদিকদের স্মারকলিপি জেলাশাসককে। |
এ দিকে, সোমবার মনোনয়ন ঘিরে গোলমালের ঘটনার খবর করতে গিয়ে তৃণমূলের লোকজনের হাতে সাংবাদিকরা আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। মার খান এবিপি আনন্দের চিত্র সাংবাদিক-সহ বেশ কয়েকজন। এ দিন তার প্রতিবাদে জেলার সাংবাদিকেরা মেদিনীপুরে জেলাশাসকের দফতরে ডেপুটেশন দিতে যান। জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত সাংবাদিকদের সামনেই পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেন। পঞ্চায়েত ভোটের সময় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেন। পরে জেলাশাসকও আশ্বস্ত করেন সাংবাদিকদের। নিশ্চিন্তে কাজ করতে বলেন সাংবাদিক-চিত্র সাংবাদিকদের।
|
—নিজস্ব চিত্র। |
পুরনো খবর: মনোনয়নে গোলমাল, আক্রান্ত সাংবাদিকরাও |
|