তাঁর বিরুদ্ধে সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের অভিযোগ ঝেড়ে ফেলতে সংস্থার ব্যবসায়িক কৌশল নিয়ে মুখ খুললেন অরিন্দম দাস ওরফে বুম্বা।
সারদার বারুইপুর অফিসের ডিভিশনাল ম্যানেজার বুম্বা মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের জেরার মুখে জানান, ব্যবসা পরিচালনার জন্য পাঁচ জনের একটি ‘কোর গ্রুপ’ তৈরি করেছিলেন সুদীপ্ত। সেই দলে ছিলেন রাজ্যের এক প্রাক্তন পুলিশকর্তা, অন্য এক পুলিশকর্তা ও তাঁর স্ত্রী, বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি এবং সারদার অন্যতম কর্ত্রী দেবযানী মুখোপাধ্যায়।
জেরায় বুম্বা পুলিশকে বলেছেন, ওই পাঁচ জনই সারদার পরিচালন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জমি কেনাবেচা এবং বিভিন্ন ব্যবসায় লগ্নির বিষয়টি দেখভাল করতেন ওই দলের প্রাক্তন পুলিশকর্তা। শাসক দলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলেও বুম্বা তদন্তকারীদের জানান।
কিন্তু আমানতকারীদের জমা রাখা টাকা কোথায় সরালেন সুদীপ্ত?
বুম্বা পুলিশকে জানিয়েছেন, শুধু সংবাদ চ্যানেল চালাতেই সুদীপ্ত মাসে প্রায় ৭০ কোটি খরচ করতেন। প্রায় আড়াই বছর ধরে মাসে মাসে এই বিপুল পরিমাণ টাকা ওই চ্যানেলে ঢেলেছেন তিনি।
শুধু সংবাদ চ্যানেল নয়, সংবাদপত্রের ব্যবসাতেও মাসে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হত বলে জেরায় জানিয়েছেন বুম্বা। তদন্তকারীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, সর্বত্রই লোকসান হয়েছিল। তা সত্ত্বেও সুদীপ্ত সংবাদমাধ্যম থেকে
হাত গুটিয়ে নেননি। বুম্বার বক্তব্য, আমানতকারীদের টাকার অধিকাংশই গিয়েছে সংবাদমাধ্যমের ব্যবসায়।
ব্যবসার ভরাডুবির জন্য বুম্বার দিকে তর্জনী তুলেছেন সারদা-প্রধান। বুম্বার বিরুদ্ধে সুদীপ্তের মূল অভিযোগ, আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা তুলে তা সারদার অফিসে জমা দেননি তিনি। পুলিশের কাছে বুম্বা বলেছেন, সারদা-কর্ণধারের এই অভিযোগ ঠিক নয়। প্রমাণ হিসেবে তদন্তকারীদের কাছে সুদীপ্তের সই করা বেশ কিছু রসিদ পেশ করেছেন তিনি। বুম্বা পুলিশকে জানিয়েছেন, গত দু’বছরে তিনি প্রায় ১৫০ কোটি টাকা তুলে দিয়েছেন সুদীপ্তের হাতে। টাকা দিয়ে সারদা-প্রধানের কাছ থেকে রসিদও নিয়েছেন। তদন্তকারীরা জানান, বুম্বার রসিদগুলি সংগ্রহ করা হয়েছে। রসিদের সই সুদীপ্তেরই কি না, তা জানতে হস্তলিপি বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
তাঁর বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগের জবাব দিতে সুদীপ্তের মুখোমুখি বসতে চেয়েছেন বুম্বা। তাঁদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হবে কি না, তদন্তকারীরা এ দিন সেই বিষয়ে কিছু জানাতে চাননি।
লালবাজারের গোয়েন্দারা এ দিন সুদীপ্ত ও দেবযানীকে দফায় দফায় জেরা করেছেন। গোয়েন্দারা জানান, ঢাকুরিয়ায় সারদার ‘ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস’-এর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে দেবযানীর অ্যাকাউন্টে প্রচুর টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেই টাকা কোথায় গিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেবযানী অবশ্য এই টাকা সরিয়ে ফেলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
|