পরস্পরকে নিশানা করে তাল ঠুকছেন সারদা কেলেঙ্কারির দুই মূল অভিযুক্ত!
ফুলেফেঁপে ওঠা ব্যবসার ভরাডুবির জন্য অন্য কয়েক জনের সঙ্গে সংস্থার একটি অফিসের কর্তা অরিন্দম দাস ওরফে বুম্বার দিকে আঙুল তুলেছেন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে এ বার সারদা-প্রধানেরই মুখোমুখি বসতে চাইলেন বুম্বা।
জেরার মুখে তিনি তদন্তকারীদের বলেছেন, সুদীপ্তকে পুলিশি হেফাজতে তাঁর মুখোমুখি বসানো হোক। তা হলেই সারদা-কর্তার জালিয়াতি ধরা পড়বে। সিবিআই তদন্তের দাবিও তুলেছেন বুম্বা।
সারদার বারুইপুরের ডিভিশনাল ম্যানেজার বুম্বা রবিবার সকালে ইএম বাইপাসের কাছে পুলিশের জালে পা দেন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ আমানতকারীর সঙ্গে প্রতারণা করার মামলা আছেন। পুলিশি জেরায় বুম্বার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন সারদা-কর্তা সুদীপ্তও। তাঁর অভিযোগ, বুম্বা আমানতকারীদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সারদার বহু জমি নিজের নামে করে নিয়েছেন। সারদার অফিসে বসেই নিজের একটি অর্থ লগ্নি সংস্থা চালাতেন তিনি। সারদার কম্পিউটরের পাসওয়ার্ড জালিয়াতি করে বুম্বা কয়েক কোটি টাকা জমা না-দিয়ে আমানতকারীদের নকল সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন বলেও সুদীপ্ত জানিয়েছিলেন পুলিশকে।
পুলিশি সূত্রের খবর, সুদীপ্তের সব অভিযোগই জেরায় অস্বীকার করেছেন বুম্বা। শুধু তা-ই নয়, সত্যি কথা জানাতে পুলিশি হেফাজতেই সুদীপ্তের মুখোমুখি হতে চেয়েছেন তিনি। জেলার এক পুলিশকর্তা জানান, প্রয়োজন হলে দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতেই পারে।
ঠিক কী বলেছেন বুম্বা?
তদন্তকারীরা জানান, সারদার টাকা অনলাইনের মাধ্যমে জমা হত। তার এন্ট্রি রাখা হত কম্পিউটারে। সে-ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড জালিয়াতির কোনও প্রশ্নই ওঠে না বলে বুম্বার দাবি। জেরায় তিনি পুলিশকে জানান, ২০১১-’১২ এবং ২০১২-’১৩ আর্থিক বছরে বারুইপুর অফিস থেকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা সারদার হেড অফিসে জমা দেওয়া হয়। সেই লেনদেনের সমস্ত হিসেবও তাঁরা কাছে আছে বলে তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছেন বুম্বা। তবে সংস্থার কয়েক জন এজেন্টের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ করেছেন তিনি। বুম্বা পুলিশকে জানান, ওই এজেন্টরা আমানতকারীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে নিয়ে সারদার
অফিসে জমা দেননি। |
কীর্তির খতিয়ান |
• অটোচালক থেকে রাতারাতি কোটিপতি।
• টালির বাড়ি দু’বছরে চারতলা অট্টালিকা, চানঘরে এসি।
• সারদার ২৪০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ।
• বাইপাসে সারদার ১৮ বিঘা জমি হাতানোর অভিযোগ।
• সারদার অফিসেই নিজের লগ্নি কারবারের অভিযোগ।
• রাজনৈতিক প্রভাবের জন্য তাঁকে ভয় পেতেন সারদা-কর্তা। |
|
বুম্বার বিরুদ্ধে সই এবং জমি জালিয়াতির অভিযোগও তুলেছিলেন সুদীপ্ত। কিন্তু বুম্বা পুলিশকে জানিয়েছেন, দক্ষিণ ২৫ পরগনায় সূর্যপুর এবং ইএম বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় সারদার জমি কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতেন সুদীপ্তের ঘনিষ্ঠ এক পুলিশকর্তা। এ ব্যাপারে তিনি কোনও ভাবেই যুক্ত নন বলে পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছেন বুম্বা।
সুদীপ্তের অভিযোগ অস্বীকার করলেও শাসক দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি বুম্বা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। ওই অভিযুক্ত জেরায় জানান, শাসক দলের স্থানীয় কয়েক জন নেতাকে তিনি টাকা দিয়েছেন। তবে ওই টাকা দেওয়ার বিষয়টি সুদীপ্ত জানতেন বলেই বুম্বার দাবি।
কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি সারদা গোষ্ঠীর কাছ থেকে নিয়মিত টাকা পেতেন, তার তালিকা তৈরি করছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। সুদীপ্ত তাঁদের জানান, সমাজের বিভিন্ন স্তরের নানা ব্যক্তি চাপ দিয়ে তাঁর কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই সব লোককে ডাকা হতে পারে।
বিধাননগর পুলিশ এ দিন সারদার অন্যতম কর্ত্রী দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের দু’টো গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে। তদন্তকারীরা জানান, ঢাকুরিয়া এলাকা থেকে গাড়ি দু’টি বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেগুলো দেবযানী নিজেই ব্যবহার করতেন। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সুদীপ্ত ওই গাড়িগুলি দেবযানীকে উপহার দিয়েছিলেন। |