|
|
|
|
শৌনকের দেহ পৌঁছতে দেরি, ক্ষুব্ধ সিআরপি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদীদের গুলিতে নিহত শৌনক দাসের মৃতদেহ তাঁর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া নিয়ে সিআরপিএফ এ বার পাল্টা অভিযোগ তুলল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অভিযোগ, রবিবার হাওড়ায় উপনির্বাচনের কারণ দেখিয়ে রাজ্য সরকার শৌনকবাবুর মৃতদেহ বিমানে রায়পুর থেকে কলকাতায় নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের জন্য কোনও নিহত জওয়ানের দেহ তাঁর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যাবে না, এমন কোনও নিয়ম নেই। ট্রেনে রবিবার দুপুরেই শৌনকবাবুর দেহ কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছিল কিন্তু রাজ্য সরকারের ‘অস্বাভাবিক অনুরোধ’ রাখতে গিয়ে সন্ধে ছ’টার আগে হাওড়ার বাড়িতে সেই দেহ নিয়ে যাওয়া যায়নি। অথচ স্ট্র্যান্ড রোডের সিআরপি শিবিরে শৌনকবাবুকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল বেলা সাড়ে তিনটের মধ্যেই।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানিয়েছিল, তারা রবিবার বিমানে করে দেহ আনতে চায়। সিআরপি কর্তারা সেই অনুরোধ না মানায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অভিযোগও জানিয়েছে রাজ্য সরকার। সিআরপি এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানিয়েছে, তারা কোনও ভুল করেনি। কারণ বাহিনীর কর্তারা চেয়েছিলেন যত দ্রুত সম্ভব শৌনকবাবুর দেহ হাওড়ার বাড়িতে পৌঁছে দিতে। কিন্তু দুপুরেই দেহ কলকাতায় পৌঁছে যাওয়া সত্ত্বেও সন্ধের আগে তা বাড়িতে নিয়ে যেতে না দেওয়ায় বাহিনীতে শৌনকবাবুর সহকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, জওয়ানরা বাড়ি থেকে অনেক দূরে মাওবাদী দমনের কঠিন লড়াই করছেন। কী পরিস্থিতিতে ও কী মানসিক অবস্থা নিয়ে তাঁদের কাজ করতে হয় সে কথা মাথায় রেখে কিছুটা সহমর্মিতা আশা করা যেতেই পারে। কিন্তু তার বদলে নিহত জওয়ানের দেহ দ্রুত বাড়িতে নিতে না দিয়ে আটকে রাখাটা
চূড়ান্ত অবমাননাকর।
শৌনক দাস |
শনিবার ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে মৃত্যু হয় অ্যাসিস্ট্যান্ট কম্যান্ডান্ট শৌনকের। গরমের ছুটি কাটাতে তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়েও ছত্তীসগঢ়ে গিয়েছিলেন। শনিবার রাতেই ১১ টা ৩৫ মিনিটের গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসে তাঁদের তুলে দেওয়া হয়। সিআরপি-র বক্তব্য, রবিবার দুপুরে শৌনকবাবুর দেহ পাঠানো হলে ১৮ ঘণ্টা তাঁর স্ত্রী-মেয়েদের মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে রায়পুরে বসে থাকতে হত। এর পর রবিবারের বিমানে পাঠালে হাওড়ার বাড়ি পৌঁছতে কম করে রাত আটটা বেজে যেত। অথচ ট্রেনে তাঁরা কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছিলেন দুপুরেই। তা ছাড়া বিমানে সকলের টিকিটও মেলেনি। স্ত্রী-কন্যাদের শৌনকবাবুর দেহ থেকে আলাদা করতেও চাননি সিআরপি কর্তারা। ট্রেন ছাড়ার কিছু আগে, রাত ১০ টা ১৭ মিনিটে মহাকরণ থেকে স্বরাষ্ট্র দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি বৈভব শ্রীবাস্তব সিআরপি-র ডিআইজি-কে ফোন করেন। তাঁদের মধ্যে সাত বার কথা হয়। রাজ্য সরকারের তরফে বিমানের টিকিটের মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের অনুরোধে ছত্তীসগঢ়ের সরকারি মুখপাত্র সিআরপি-র আইজি জুলফিকার হাসানের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু বিষয়টা বুঝতে পেরে তিনিও আর জোরাজুরি করেননি। রাত ১১টা ২ মিনিটে হাসানকে ফোন করে পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দেহ রবিবারের বিমানেই পাঠাতে হবে। কারণ হাওড়ায় উপনির্বাচন রয়েছে। কিন্তু টিকিটের বন্দোবস্ত করার কথা বললেও কোনও টিকিট পাঠানো হয়নি। এই পরিস্থিতিতে রাতের ট্রেনেই শৌনকবাবুর দেহ ও তাঁর পরিবারকে তুলে দেওয়া হয়। সঙ্গে একজন ডিআইজি, শৌনকবাবুর সহকর্মী ইনস্পেক্টর-সহ তিন জন সিআরপি কর্মীও ছিলেন। সিআরপি-র কর্তাদের যুক্তি, “দেহ ও স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে বাহিনীর কয়েক জনের
থাকাটা জরুরি ছিল। সেই নিয়মই অনুসরণ করা হয়েছে।”
সিআরপিএফের তরফে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানানো হয়েছে, নিহত জওয়ানের দেহ বাড়িতে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে তাঁর পদ বা বিমান না ট্রেন এ সব দেখা হয় না। কী ভাবে তাড়াতাড়ি দেহ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে, সেটাই একমাত্র বিবেচ্য থাকে। গত বছর সিআরপি জওয়ান মহাদেব মিঞ্জ সুকমায় নিহত হয়েছিলেন। তাঁর দেহ রায়পুর থেকে বিমানেই বাগডোগরা পাঠানো হয়েছিল। তার পর দেহ গাড়িতে করে জলপাইগুড়িতে তাঁর নাগরাকাটার বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। |
পুরনো খবর: শৌনককে শেষ বিদায়, মেটেনি রাজ্য-সিআরপি দ্বন্দ্ব |
|
|
|
|
|