|
|
|
|
অভিযোগ গেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে |
শৌনককে শেষ বিদায়, মেটেনি রাজ্য-সিআরপি দ্বন্দ্ব |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হাওড়া ও নয়াদিল্লি |
মধ্য হাওড়ার দেশপ্রাণ শাসমল রোডে যখন সিআরপিএফের বিশাল কনভয়টা ঢুকল, চার দিকে তখন থিকথিক করছে ভিড়। আর সেই ভিড়টা যেন মানতেই পারছিল না এই মৃত্যুকে। মরদেহ আনা নিয়ে রাজ্য সরকার এবং সিআরপিএফের প্রবল টানাপোড়েনের মধ্যেই রবিবার চেনা-অচেনা মানুষের চোখের জলে বিদায় নিলেন ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী হামলায় নিহত সিআরপিএফের সহকারী কম্যান্ডান্ট শৌনক দাস। |
|
হাওড়ার বাড়িতে শৌনক দাসের কফিনবন্দি দেহ।—নিজস্ব চিত্র |
রবিবার দুপুরে গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছয় শৌনকবাবুর দেহ। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী উর্মি এবং দুই মেয়ে সুমীরণ (৮) এবং সুহানি (৬) দাস। ওঁদের তিন জনকে জয়নারায়ণবাবু আনন্দ দত্ত লেনের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার জন্য নিহত বাঙালি অফিসারের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় স্ট্র্যান্ড রোডে সিআরপিএফের শিবিরে। সেখানে সঙ্গে ছিলেন শৌনকবাবুর মামা-সহ অন্য আত্মীয়রা। গান স্যালুটের সময় উপস্থিত ছিলেন সিআরপিএফের রাজ্য স্তরের ৩ জন ডিআইজি। সিআরপিএফের ৫টি কনভয়-সহ শৌনকবাবুর শবদেহবাহী গাড়ি এ বার রওনা দেয় মধ্য হাওড়ায় তাঁর আদি বাড়ি, দেশপ্রাণ শাসমল রোডের উদ্দেশে। সেখানে তখন এতটাই ভিড় যে, কিছু ক্ষণের জন্য ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। শৌনকবাবুর দেহ পৌঁছনো মাত্র কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর বোন সুমনা দাস। তিনি বলেন, “দাদা খুবই সাহসী ছিল। যে কেউ সমস্যায় পড়লেই দাদা ঝাঁপিয়ে পড়ত। বীরের মতোই তার মৃত্যু হয়েছে।”
সন্ধে ছ’টা নাগাদ শৌনকের দেহ শেষ বারের মতো আসে জয়নারায়ণবাবু আনন্দ দত্ত লেনের বাড়িতে। বর্তমানে সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকতেন শৌনকবাবু। সেখানেই ফুলের মালা দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের দুই মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরূপ রায়। শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন হাওড়ার উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শিবপুর শশ্মানে শৌনকবাবুর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
তবে শৌনকবাবুর দেহ আনা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং সিআরপিএফের মধ্যে শনিবার সন্ধে থেকেই যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল, তা এখনও মেটেনি। এই ব্যাপারে এ বার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অভিযোগও জানাল রাজ্য সরকার।
রবিবার হাওড়ায় উপনির্বাচন ছিল। তাই রাজ্য সরকার চেয়েছিল ট্রেনে হাওড়ায় নয়, বরং বিমানে কলকাতা পাঠানো হোক শৌনকবাবুর দেহ। তাঁর দেহ হাওড়ায় পৌঁছলে নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রয়োজনে শৌনকবাবুর দেহ সপরিবার বিমানে আনার খরচ বহন করতেও রাজি ছিল রাজ্য। বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফোন করা হয় ছত্তীসগঢ় সরকার এবং সিআরপিএফের কার্যালয়ে। কিন্তু সেই প্রস্তাবে শেষমেশ রাজি হয়নি সিআরপিএফ। রবিবার দুপুরে তাই ট্রেনেই শহরে পৌঁছয় নিহত অফিসারের দেহ।
সিআরপিএফের পক্ষ থেকে এ দিন বলা হয়েছে,এই ধরনের মৃত্যুতে সাধারণত ট্রেনেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দেহ পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রেও সেই নিয়মই মানা হয়েছে। তাদের আরও যুক্তি, ময়না-তদন্তের পর শনিবার যে সময়ে শৌনকবাবুর দেহ পরিবারের হাতে আসে, তখন আর কলকাতার শেষ বিমান ধরা সম্ভব ছিল না। কারণ শনিবার রায়পুর থেকে কলকাতায় আসার একটিই বিমান ছিল বিকেল চারটে পঞ্চাশে।.আর রবিবার সরাসরি নয়, রায়পুর থেকে দিল্লি হয়ে কলকাতায় আসার উড়ান ছিল। তাতে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যেত। |
|
নিহত সিআরপিএফ অফিসার শৌনক দাসের শোকার্ত পরিজন। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র |
তাই দেরি না করে গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসেই পরিবারের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয় শৌনকবাবুর দেহ। যাতে দুপুরের মধ্যে দেহ নিয়ে হাওড়ার বাড়িতে পৌঁছে যেতে পারেন শৌনকবাবুর পরিবারের লোকজন।
আর এতেই আপত্তি ছিল রাজ্য সরকারের। কারণ, ট্রেনে যে সময় শৌনকবাবুর দেহ পৌঁছনোর কথা, তখন হাওড়ায় উপনির্বাচন চলছে। রাজ্য সরকার তাই প্রথম থেকেই চেষ্টা করছিল, যাতে এই পরিস্থিতি এড়ানো যায়। তাই শনিবার থেকেই দফায় দফায় ছত্তীসগঢ় সরকার এবং সিআরপিএফ কর্তৃপক্ষকে ফোন করে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর সচিব গৌতম সান্যাল। তিনি ছত্তীসগঢ় সরকারকে জানিয়েছিলেন, নির্বাচনের আবহে হাওড়ায় ওই মৃতদেহ আনা হলে বাড়তি উত্তেজনা তৈরি হতে পারে। শৌনকবাবুর পরিবার বিড়ম্বনায় পড়তে পারে। বিষয়টি অমানবিকও বটে। তাই শৌনকবাবুর গোটা পরিবারকেই উড়িয়ে আনা হোক। যাবতীয় খরচ বহন করবে রাজ্যই। গৌতমবাবু প্রথমে ফোন করে এই অনুরোধ করেন ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আমন সিংহকে। ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ এই বিষয়টিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই ছিলেন। সেই মতো আমন সিংহের তরফ থেকে কথা বলা হয় সিআরপিএফের সঙ্গে। কিন্তু সিআরপিএফের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বিষয়টিতে আপত্তি জানান। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জানানো হয়, নিয়ম মতো সব জওয়ানের দেহই যখন ট্রেনে যায়, তখন এ ক্ষেত্রে তা পরিবর্তনের প্রশ্ন নেই। পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক বার ফোনে কথা বললেও তাদের অনুরোধ রাখা হয়নি বলেই রাজ্যের অভিযোগ।
তবে সিআরপিএফের তরফে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই অভিযোগ একেবারেই অমূলক। সব অফিসার বা জওয়ানের মৃত্যুর পরেই চেষ্টা করা হয়, যত দ্রুত সম্ভব তাঁর দেহ পরিবারের কাছে অথবা তাঁর শহরে পাঠাতে। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সিআরপিএফের ওই কর্তাই বললেন, “শনিবার একটিই উড়ান ছিল বিকেল চারটে পঞ্চাশে। কিন্তু ময়না-তদন্তের পর সেটি ধরা সম্ভব ছিল না। এ দিন অবশ্য দিল্লি বা মুম্বই হয়ে দেহ কলকাতায় পাঠানো যেত, কিন্তু তাতে সন্ধে হয়ে যেত। তাই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
|
পুরনো খবর: ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী হানায় হত বাঙালি অফিসার |
|
|
|
|
|