|
|
|
|
শীলার বিরুদ্ধে অরবিন্দের জেহাদ, ভাবনায় বিজেপি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
দিল্লির ভোট-যুদ্ধে বিজেপি-কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ এনে অরবিন্দ কেজরিওয়াল এ বার শীলা দীক্ষিতের সঙ্গে সম্মুখ সমরে। নভেম্বর নাগাদ বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা দিল্লিতে। আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ আজ ঘোষণা করেছেন, ওই নির্বাচনে তিনি মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে লড়বেন। দিল্লিতে আজ তাঁর হুঙ্কার, “শীলা দীক্ষিত যে কেন্দ্রেই দাঁড়ান না কেন আমাকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখতে পাবেন।”
গত পনেরো বছর ধরে দিল্লির মসনদ রয়েছে শীলার দখলে। অরবিন্দের অভিযোগ, পরপর তিন বার শীলার বিরুদ্ধে দুর্বল প্রার্থী দিয়ে তাঁকে জেতার পথ করে দিয়েছে বিজেপি। এটা নির্বাচনী ফিক্সিং ছাড়া কিছু নয়। এর ফলে মানুষও আর বিশ্বাস করেন না যে, তিন-তিনবার পরাজিত বিজেপি-র পক্ষে দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেসকে দিল্লি থেকে উৎখাত করা আদৌ সম্ভব। এবং সে কারণেই ‘দুর্নীতির মুখ’ শীলার বিরুদ্ধে ঝাঁপাতে চান অরবিন্দ।
বিজেপি-র কিন্তু সন্দেহ, প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোট যাতে ভাগ হয়, সেই অঙ্ক মাথায় রেখেই অরবিন্দের আম আদমি পার্টির সঙ্গে বোঝাপড়া হয়েছে কংগ্রেসের। এই সূত্রে শীলার ছেলে সন্দীপ দীক্ষিতের সঙ্গে অরবিন্দের সুসম্পর্কের কথাও ভাবাচ্ছে বিজেপি নেতাদের। তাঁরা এটা স্বীকার করেন যে, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বেশ কিছু উন্নতি ঘটিয়ে শীলা দিল্লির ভোল পাল্টে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও প্রচুর। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও যথেষ্ট অবনতি হয়েছে তাঁর জমানায়। বিশেষ করে রাজধানীর বুকে মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে দিল্লি প্রশাসন যে ব্যর্থ হয়েছে, একের পর এক ধর্ষণের ঘটনাই তার প্রমাণ।
কংগ্রেস শিবিরও মানে, প্রশাসনের ব্যর্থতার ছিদ্রপথ দিয়েই রাজধানীর বুকে ক্রমশ সক্রিয় হয়েছে নাগরিক সমাজ। প্রথমে অণ্ণা হজারের নেতৃত্বে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজ নিজেদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও ক্রমশ গণধর্ষণের মতো ঘটনাগুলির ক্ষেত্রেও সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে সাধারণ মানুষ।
অণ্ণার ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে আম আদমি পার্টি গড়ার সময় থেকেই অরবিন্দরাও তাই দিল্লিকে তাঁদের পাখির চোখ বানিয়েছেন। গত ছয়-আট মাস ধরে বিদ্যুতের বাড়তি বিল নিয়ে লাগাতার আন্দোলন করে গিয়েছেন তিনি। সরব হয়েছে পানীয় জলের প্রশ্নেও। দিল্লিতে পরপর ধর্ষণের ঘটনায় মানুষের ক্ষোভের যে প্রকাশ চোখে পড়েছে তাঁর পিছনে আম আদমি পার্টির ইন্ধন আছে বলে বারবার রিপোর্ট দিয়েছে গোয়েন্দা বিভাগও।
এর আগেও দিল্লি নির্বাচনে লড়ার কথা ঘোষণা করেছিল আম আদমি পার্টি। আজ দিল্লি সরকারের খোদ সেনাপতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে রাখলেন অরবিন্দ। তাঁর দল নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসবেন, এমন চিন্তা কেউ করছেন না। কারণ, এ পর্যন্ত দিল্লির নির্দিষ্ট কিছু এলাকাতেই শুধু প্রভাব তৈরি করতে পেরেছে আম আদমি পার্টি। কিন্তু রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকেরই প্রশ্ন, কেজরিওয়ালের দল সব কেন্দ্রে প্রার্থী দিলে আখেরে লাভ কার?
কংগ্রেসের থেকেও বেশি ভয় পাচ্ছে বিজেপি। দল মনে করছে, কংগ্রেস নেতাদের দুর্নীতি ও শীলা সরকারের নানা ব্যর্থতার কারণে একটা প্রতিষ্ঠান বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে সেই ভোট বিজেপি-র ঘরে আসা উচিত। কিন্তু অরবিন্দরা নির্বাচনে লড়লে সেই বিরোধী ভোট ভাগ হবে। পশ্চিমবঙ্গে এত দিন যে ভাবে কংগ্রেস-তৃণমূলে বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ার কারণে রাজ্যপাট ধরে রাখতে সুবিধে হয়েছিল বামফ্রন্টের। বিজেপি-র অভিযোগ, বিরোধী ভোট ভাগের লক্ষ্যেই অরবিন্দকে খাড়া করেছে কংগ্রেস শিবির। গোটা লড়াইটাই সাজানো। বিজেপি-র এই ‘গট আপ’ তত্ত্বকে খারিজ করেই অরবিন্দ আজ পাল্টা ভোট-ময়দানে ‘ফিক্সিং’-এর অভিযোগ এনেছেন। তাঁর অভিযোগ, “প্রতি বার শীলার বিরুদ্ধে দুর্বল প্রার্থী দেয় বিজেপি। তাদের দ্বিচারিতা সম্পর্কে মানুষ ওয়াকিবহাল।” শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে অরবিন্দের যুদ্ধ ঘোষণাকে এ দিন সমর্থন জানিয়েছেন প্রশান্তভূষণ। তবে অরবিন্দ যে ভাবে ভোটের মাস ছয় আগে থেকেই শীলা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি বা নিরাপত্তার প্রশ্নে সুর চড়াচ্ছেন, তাতে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে কংগ্রেস। আম আদমি পার্টির প্রভাব গোটা দিল্লিতে না থাকলেও শীলার বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়লে প্রচারের আলোয় থাকবেন অরবিন্দ। সে ক্ষেত্রে উজ্জীবিত হবে ক্যাডারেরা। এতে অরবিন্দের দল চেনা অঙ্কও গুলিয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা দানা বাঁধছে কংগ্রেস শিবিরে। |
|
|
|
|
|