|
|
|
|
|
খাদ্য বিল ঘিরে জটিলতা,
অর্ডিন্যান্সের জল্পনা
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
|
লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে কাল মন্ত্রিসভার বৈঠকেই অর্ডিন্যান্স আনতে পারে মনমোহন সিংহ সরকার। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আজ সন্ধেয় সনিয়া-মনমোহনের উপস্থিতিতে ইউপিএ শরিক দলের নেতাদের সমন্বয় বৈঠকের পর গভীর রাতে এমন সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে কংগ্রেস সূত্রে। যদিও বৈঠকের পর সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথ সাংবাদিকদের সামনে দাবি করেছিলেন, বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে খাদ্য সুরক্ষা বিলের প্রসঙ্গ ছিল না। সমন্বয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে মাওবাদী সমস্যা প্রসঙ্গে। এ-ও বলা হয়েছিল, মাওবাদী সমস্যা মোকাবিলার জন্য সর্বদল বৈঠক ডাকার কথা ভাবছে সরকার।
দু’দিন আগে দলের কোর গ্রুপের বৈঠকের পর কংগ্রেস নেতৃত্বই জানিয়েছিলেন, খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে ইউপিএ-র সমন্বয় বৈঠক হবে সোমবার। এবং ওই বিল পাশ করাতে সরকার সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকবে কি না, তা-ও নির্ধারিত হবে ওই বৈঠকে। অথচ কমলনাথ আজ যখন জানান, বৈঠকে খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে আলোচনা হয়নি, তখন স্বাভাবিক ভাবেই ধন্দ তৈরি হয়। প্রশ্ন ওঠে, খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে এত হইচই করেও রাতারাতি কেন সমন্বয় কমিটির বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে পরিবর্তন করল সরকার? তা হলে কি খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে ইউপিএ-র মধ্যেই মতানৈক্য রয়েছে? নাকি বিরোধীদের বিভ্রান্ত করতে চাইছে সরকার?
এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমলনাথ বলেছিলেন, “খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ করানোর জন্য সব বিকল্প পথই খোলা রয়েছে। মাওবাদী সমস্যাকে ছোট করে দেখছেন কেন? এত জন রাজনৈতিক নেতাকে মাওবাদীরা নৃশংস ভাবে খুন করল, সেটা কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নাকি!”
এর পরেই গভীর রাতে কংগ্রেস তথা সরকারের একটি সূত্রে বলা হয় যে, কাল মন্ত্রিসভার বৈঠকেই খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে অর্ডিন্যান্স আনা হতে পারে। কারণ কংগ্রেস জল মেপে দেখেছে যে, বিশেষ অধিবেশন ডাকার পথও কম সমস্যাসঙ্কুল নয়। বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ থেকে শুরু করে সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট আজ সমস্বরে বলেছেন, বিশেষ অধিবেশন না ডেকে সরকার সংসদের বাদল অধিবেশন এগিয়ে দিক। অথচ বাদল অধিবেশনের জন্য সরকার এখনই প্রস্তুত নয়। তা ছাড়া খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশের জন্য বিরোধী দলগুলিও বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়ে কৃতিত্ব নিতে চাইছে। কিন্তু অর্ডিন্যান্স জারি করে দিলে, সেই আশঙ্কা থাকে না।
কিন্তু খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করার ব্যাপারে এর আগে ক্রেতাসুরক্ষা বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, স্বয়ং কে ভি টমাস আপত্তি তুলেছিলেন। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশেরও একই মত ছিল। তাঁদের বক্তব্য ছিল, সরকার যে বিলটি সংসদে পেশ করেছে, তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ কিছু রাজ্যের উদ্বেগ রয়েছে। তারা আশঙ্কা করছে, এ জন্য রাজ্যগুলির খরচের বোঝা বাড়বে। এ দিনও ফেসবুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “খাদ্য সুরক্ষার প্রশ্নে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। কিন্তু ইউপিএ ২-এর হাতে বিষয়টির যে ভাবে রাজনীতিকরণ হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। আমার গোড়া থেকে বলে আসছি, খাদ্য সুরক্ষার জন্য জরুরি পরিকাঠামো গড়ে তোলার আর্থিক দায়ভার কেন্দ্রকে নিতে হবে... প্রকল্প রূপায়ণ এবং সুরক্ষাপ্রাপকদের তালিকা তৈরির দায়িত্ব রাজ্যকে দিতে হবে... ।”
এই অবস্থায় জয়রামদের বক্তব্য ছিল, বিলটি সংসদে আলোচনা না করে একেবারে অর্ডিন্যান্স জারি করলে তা উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়ার সামিল হবে। তা ছাড়া নতুন বিলে ৬০টি সংশোধন আনা হয়েছে। এক বার অর্ডিন্যান্স জারি করে তার পর সেটি সংসদে পাশ করাতে বেগ পেতে হতে পারে। কিন্তু এর পাল্টা যুক্তিও অনেকে দিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, খাদ্য সুরক্ষার বিষয়টি রাজনৈতিক ভাবে এতটাই স্পর্শকাতর যে, কোনও দলই সংসদে অর্ডিন্যান্স রুখে দেওয়ার ঝুঁকি নেবে না। তার চেয়ে বরং সরকারই ঝুঁকি নিক! লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য খাদ্য সুরক্ষা বিলই বড় অস্ত্র হতে পারে।
শেষ পর্যন্ত সরকার কাল সেই ঝুঁকি নেবে কি না, এখন সেটাই দেখার। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেস মুখপাত্র শাকিল আহমেদ বলেন, “দ্বিতীয় ইউপিএ জমানায় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প রূপায়ণ যে হবেই, তা নিয়ে কারও মনে সংশয় থাকা উচিত নয়। প্রয়োজনে প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করে খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প
রূপায়ণ করা হবে।” তাঁর কথায়, “নেতৃত্বের প্রশ্নে যখন প্রধান বিরোধী দলে গৃহযুদ্ধ চলছে, তখন কংগ্রেস লড়াই করছে মানুষের মুখে অন্ন সংস্থানের জন্য। জাতীয় স্তরে দুই প্রধান দলের মধ্যে এই বৈপরীত্য দেশ নিশ্চয়ই বিচার করবে।”
|
পুরনো খবর: বিশেষ অধিবেশনে আপত্তি নেই বিজেপির |
|
|
|
|
|