|
|
|
|
জল নামতেই শুরু বাঁধ সারাই, ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ডেবরা |
জল নামতে শুরু করেছে ডেবরা-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের প্লাবিত এলাকা থেকে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। বাঁধ মেরামতও শুরু হয়েছে। সেচ দফতরের সুপারিনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার সুবীর লাহা বলেন, “জল নামতে শুরু করেছে। রবিবার সকাল থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, দিন দশেকের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।” |
দুর্যোগে বিপর্যস্ত |
জলের তোড়ে ভেঙেছে মাটির বাড়ি, ডেবরার মাড়তলায়। |
জল নামলেও ডেবরার বিস্তীর্ণ এলাকায় এখন শুধুই বিপর্যয়ের ছবি। আশ্রয় হারিয়ে বহু মানুষই রাস্তায় নেমে এসেছেন। যেমন, পাইকপাড়ি গ্রামের বনিতা শী। জলের তোড়ে ধসে গিয়েছে বনিতাদেবীদের তিনতলা মাটির বাড়ি। গৃহস্থালির সরঞ্জামও বের করা হয়নি। বনিতাদেবীর কথায়, “জলের তোড়ে বাড়িটাই ধসে গেল। জানি না এরপর কী হবে।” এই বধূর দুই মেয়ে। এক জনের বয়স সাত, অন্য জন সবে চোদ্দ মাস। বনিতাদেবী স্বামী কার্তিক সী বলছিলেন, “সকাল থেকে নদীতে জল বাড়তে শুরু করেছিল। তবে এ ভাবে যে পুরো বাড়িটাই ভেঙে পড়বে, ভাবিনি।” আপাতত, বাড়ির অদূরে রাস্তার উপর অস্থায়ী ছাউনির নীচে দিন কাটছে এই পরিবারের। ত্রাণ মেলেনি? কিছুটা ক্ষোভের সঙ্গেই কার্তিকবাবু বলছিলেন, “মিলেছে তো। কয়েকটা জলের প্যাকেট, আড়াইশো গ্রাম মতো চিঁড়ে-গুড়। শুধু ত্রিপলটাই যা পাইনি!” |
|
|
সদর ব্লকের পাথরায় কংসাবতীর জলে
ডুবে যাওয়া বালির লরি তোলা হচ্ছে। |
এখনও নামেনি জল।
ডেবরায় বিপর্যস্ত গেরস্থালি । |
|
দেড় বছরের মেয়েকে নিয়ে ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন কুসুম মাহালি। বাড়ি টাবাগেড়িয়ায়। গ্রামে জল ঢোকার পর স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে যে শিবির খোলা হয়েছে। কুসুমদেবী বলছিলেন, “আগে কখনও এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়িনি। হঠাত্ই দেখি, বাড়ির মধ্যে জল ঢুকছে। ভাগ্যিস তখম দুপুর। এটা রাতে হলে কী যে হত, ভাবলেই শিউরে উঠছি।” কুসুমদেবীর স্বামী পিন্টু মাহালি মুম্বইয়ের সোনার কাজ করেন। ক’দিন আগে ফিরেছেন। তিনি বলেন, “শুক্রবার দুপুরে বাড়ির দালানে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। হঠাত্ই দেখি জলের স্রোত ঢুকছে।” ত্রাণ মেলেনি? তাঁর কথায়, “চিঁড়ে-গুড়, কিছুটা চাল পেয়েছি। রান্না করে খাচ্ছি। জানি না এ ভাবে কতদিন চালাতে হবে।” |
|
|
সদর ব্লকের কুলদায় কলাইচণ্ডী খালের
বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা। |
জলের পাউচ বিলি করা হচ্ছে ডেবরায়।
রবিবারের নিজস্ব চিত্র। |
|
গত বুধ এবং বৃহস্পতিবারের টানা বৃষ্টিতেই এই পরিস্থিতি। জলের তোড়ে ডেবরার একের পর এক গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্লকের রাইপুর, ট্যাবাগেড়িয়া, মোকারিমপুর এবং গোপালপুর- চারটি জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে। নদীর জল ঢুকে সত্যপুর, ভরতপুর, গোলগ্রাম- এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সাতটি মৌজা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির মুখে পড়েছে কেশপুর, খড়্গপুর ২, মেদিনীপুর সদর প্রভৃতি ব্লক। সাধারণত, ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া হলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। অতিবৃষ্টির ফলেই বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকে যায়। সে ক্ষেত্রে জল ছাড়ার আগাম সতর্কবার্তা থাকে। এ ক্ষেত্রে কোনও বার্তা ছিল না। ফলে, পরিস্থিতি জটিল হয়। প্রশাসনের বক্তব্য, ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া হলেই সতর্কবার্তা আসে। এ ক্ষেত্রে জল ছাড়া হয়নি। অতিরিক্ত বৃষ্টিতেই সমস্যা হয়েছে। |
|
|
কংসাবতীর জল ঢুকেছে
দাসপুরের বালিপোতা গ্রামে। |
জলমগ্ন তমলুকে
রূপনারায়ণ তীরবর্তী এলাকাও। |
|
সেচ দফতর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিনভর মুকুটমণিপুরে ৪১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ভৈরববাঁকিতে ২২২ মিলিমিটার, তারাফেনিতে ১৯৭ মিলিমিটার, ঝাড়গ্রামে ১৪০ মিলিমিটার, মেদিনীপুরে ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। উঁচু জায়গার জল কংবাবতীতে এসে মেশে। তাতেই নদী ফুলেফেঁপে ওঠে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এই দুর্যোগে ১৯,৪৪৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০৫৮টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১,৮১০টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসেব এখনও চলছে। শনিবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) রজতকুমার সাইনি, বিডিও মালবিকা খাটুয়া, বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতি। ত্রাণ অপ্রতুল বলে অবশ্য মানতে নারাজ প্রশাসন। তাদের বক্তব্য, গোলগ্রাম এবং সত্যপুর, এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতেই ৩২০টি ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও ত্রিপল বিলি হবে।
|
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল, কিংশুক আইচ, রামপ্রসাদ সাউ। |
পুরনো খবর: বৃষ্টি নামতেই নাকাল দুই শহর |
|
|
|
|
|