|
|
|
|
জল-কাদায় ভোগান্তি |
বৃষ্টি নামতেই নাকাল দুই শহর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বুধবার দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবারও তাই। টানা বৃষ্টিতে মেদিনীপুর-খড়্গপুর দুই শহরেরই নাজেহাল দশা। নিকাশি নালার জল রাস্তা দিয়ে বইছে। বিভিন্ন জায়গায় জলও জমে গিয়েছে। এই অবস্থায় পথে যাতায়াত রীতিমতো ভোগান্তি।
আপাতত আবহাওয়া পাল্টানোর সম্ভাবনা নেই। মেদিনীপুর কলেজের এন সি রাণা আকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানানো হয়েছে, গত দু’দিন মেদিনীপুরে প্রায় ১৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রের অধিকর্তা সত্যব্রত রায় বলেন, “বৃষ্টি কমতে পারে। তবে শুক্রবারও আকাশ মেঘলা থাকার সম্ভাবনা বেশি।” বৃহস্পতিবার যে ভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়েছে, শুক্রবার তা হবে না বলেই ওই কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে। |
|
জমা জল ঠেলে পথ চলা মেদিনীপুর শহরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
নিম্মচাপের বৃষ্টিতে যদি দুই শহরের রাস্তাগুলোর এই হাল হয়, তাহলে বর্ষা এলে কী হবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। সংশয়ে শহরবাসী। সমস্যা মানছেন পুর- কর্তৃপক্ষও। খড়্গপুরের পুরপ্রধান তুষার চৌধুরী বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব শহরের বড় নালাগুলো পরিষ্কার করা হবে। আবর্জনা জমে একাংশ নালার মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলেই বেশ কিছু রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে পড়ছে।” পুরপ্রধানের দাবি, “দু’দিন আগেই বড় নালাগুলো পরিষ্কার করা নিয়ে বৈঠক করি। সেখানে ঠিক হয়েছিল, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাফাইয়ের কাজ শুরু হবে। কিন্তু, টানা বৃষ্টিতে কাজ শুরু করা যায়নি।” মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসুরও বক্তব্য, “টানা বৃষ্টির জন্য কিছু এলাকায় জল জমেছে। ওই সব এলাকার নিকাশি নালাগুলো পরিষ্কার করা হবে।”
বৃহস্পতিবার দিনভর মেদিনীপুর শহরের এলআইসি মোড়ে রাস্তা ছিল জলমগ্ন। জল পেরিয়েই যাতায়াত করতে হয়েছে পথচলতি মানুষকে। কেরানিতলা, পঞ্চুরচক, রাজাবাজার, স্কুলবাজার প্রভৃতি এলাকায় নর্দমার জল রাস্তায় উঠে এসেছিল। একই পরিস্থিতি রেলশহর খড়্গপুরে। বাসস্ট্যান্ড চত্বরে দিনভর জল দাঁড়িয়ে ছিল। পুরাতনবাজার, ইন্দা, খরিদা প্রভৃতি এলাকায় নিকাশি নালার জল রাস্তা উঠে পথচলতি মানুষকে দুর্ভোগে ফেলেছে। মেদিনীপুর জেলার সদর শহর। অন্যদিকে, রেলশহরের গুরুত্বও কম নয়। দুই শহরেই নতুন বসতি গড়ে উঠছে। জনসংখ্যা বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে আবর্জনা। মাঝেমধ্যে রাস্তার ধারে ধারে আবর্জনার স্তূপ চোখে পড়ে। এই সব আবর্জনা নিয়মতি পরিষ্কার হয় না বলেও অভিযোগ। ফলে, দূষণ ছড়ায়। দুই শহরের বেশ কিছু এলাকায় আবর্জনা ফেলার ভ্যাট আছে। সেখানে আবর্জনা জমে। তবে সব ভ্যাটের চারদিক ঘেরা নয়। ফলে আবর্জনা রাস্তায় নেমে আসে। সামান্য বৃষ্টিতেই তা নালায় পড়ে মুখ বন্ধ হয়ে যায়। সমস্যা বাড়ে।
দুই শহরেই পুর-কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু, ইদানীং অনেকে বাড়ির রাবিশ, অন্য পরিত্যক্ত জিনিসপত্র ভ্যাটে এনে ফেলছেন। তাতেই ভর্তি হয়ে যাচ্ছে ভ্যাট। আবর্জনা রাস্তায় নেমে আসছে। মেদিনীপুর পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, “ভ্যাট ঠিক মতো পরিষ্কার হচ্ছে কিনা দেখতে নজরদারি চলে। এ ক্ষেত্রে শহরবাসীকেও সচেতন হতে হবে।”
বৃষ্টি বিপর্যস্ত শহরে মাথায় হাত ফল ব্যবসায়ীদের। আম-লিচুর দাম দ্রুত পড়তে শুরু করেছে। দু’দিন আগেও যে আমের দাম ছিল প্রতি কিলোগ্রাম ৩০-৩৫ টাকা, বৃহস্পতিবার তা ১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক ফল বিক্রেতার কথায়, “কেনা দামের থেকেও অনেক কমে ফল বিক্রি করতে হচ্ছে। উপায়ও নেই। টানা বৃষ্টির মধ্যে আম-লিচু বেশি দিন পড়ে থাকলে পচে যাবে। তখন তো পুরোই ক্ষতি।” মেদিনীপুর শহরের এলআইসি মোড়ে ফলের দোকান রয়েছে ভাস্কর রায়, রণজিৎ বিশ্বাসদের। তাঁরা বুঝেই উঠতে পারছেন না, এই অবস্থায় কী করবেন। দু’দিন আগেও যে লিচু কিলো প্রতি ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, বৃহস্পতিবার তা ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রণজিৎবাবুর কথায়, “দাম পড়েছে। সেই সঙ্গে খদ্দেরও কমেছে। টানা বৃষ্টি চলায় লোকজনও সে ভাবে বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না।” |
|
|
|
|
|