ব্যবসা লাটে ওঠার জন্য এ বার দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেন খোদ সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন!
লালবাজারের গোয়েন্দারা জানান, সুদীপ্তের দাবি, সারদা গোষ্ঠীর যাবতীয় কর্মসূচি রূপায়ণের দায়িত্ব ছিল দেবযানীর উপরে। তাই ব্যবসায় যা যা গলদ হয়েছে, তার দায় দেবযানীরই।
গোয়েন্দা কর্তাদের বক্তব্য, দেবযানীর উপরে দায় চাপিয়ে পার পেতেই সুদীপ্তর এই কৌশল, যদিও তাতে বিশেষ লাভ হবে না। তবে তিনি যে ভাবে দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর দিকে আঙুল তুলেছেন, তাতে কিছুটা বিস্মিত তদন্তকারীরা। গোয়েন্দাদের একাংশের মতে, দেবযানী সুদীপ্তের বিরুদ্ধে বহু তথ্য তদন্তকারীদের জানিয়েছেন। কোন কোন নেতা সারদা গোষ্ঠীর কাছ থেকে নিয়মিত টাকা পেতেন, তা-ও গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন তিনি। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, ক’দিন আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের জেরার মুখে দেবযানী সাফ জানিয়েছিলেন, সারদা-কেলেঙ্কারির তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে গেলে তবেই সব সত্য জানা যাবে! পুলিশের বক্তব্য, দেবযানী ক্রমশ বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে বুঝেই এখন তাঁর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে পাল্টা চাল দিতে চাইছেন সুদীপ্ত।
এর মধ্যেই ঢাকুরিয়ায় সারদার পর্যটন সংস্থার অফিসের কম্পিউটার ঘাঁটতে গিয়ে রীতিমতো চমকে গিয়েছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। তদন্তকারীদের সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকুরিয়ার ওই অফিসে হানা দিয়ে ২৫টি কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত ১২টি কম্পিউটার ঘেঁটেছে পুলিশ। তাতে দেখা গিয়েছে, সংস্থার শুরু থেকে এ পর্যন্ত কোনও আমানতকারীকেই বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়নি। পুলিশের সন্দেহ, পর্যটন সংস্থার আমানত অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলেছিলেন সুদীপ্ত। ওই ব্যবসার টাকা কোথায় গেল, তা জানতে ওই সংস্থার নামে থাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি খতিয়ে দেখবেন তদন্তকারীরা। গোয়েন্দারা অবশ্য জানিয়েছেন, পর্যটন ব্যবসায় জালিয়াতির কথা জেরায় মানতে চাননি সুদীপ্ত। তদন্তকারীরা জানান, সারদা কর্তার দাবি, তিনি সরাসরি পর্যটন ব্যবসা চালাতেন না। তাঁর সংস্থার হয়ে অন্য সংস্থা এই কাজ করত। তদন্তকারীরা বলছেন, সুদীপ্ত যে সংস্থাটির মাধ্যমে পর্যটন ব্যবসা চালানোর কথা বলেছেন, সেটি বিমান বা রেলের টিকিট, হোটেল বুকিংয়ের কাজ করে। ওই সংস্থাটি সারদার সঙ্গে আদৌ জড়িত ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখবেন তদন্তকারীরা।
লালবাজারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জেরায় মাঝেমধ্যেই মেজাজ হারাচ্ছেন সারদা কর্তা। অনেক প্রশ্নের উত্তরেই তিনি বলছেন, এই প্রশ্নের জবাব তিনি বিধাননগর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশকে জানিয়েছেন। এক গোয়েন্দাকর্তার কথায়, “পুলিশের জালে জড়িয়ে যাচ্ছেন বুঝতে পেরেই মেজাজ হারাচ্ছেন সারদা কর্তা।”
সম্প্রতি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মাতঙ্গ সিংহকে জেরা করে বিধাননগরের গোয়েন্দারা জেনেছেন, চ্যানেল বিক্রি বাবদ তাঁর কাছে সুদীপ্ত ২৮ কোটি টাকা পান। কলকাতার আরও কুড়ি জন ব্যবসায়ীর কাছে সারদা গোষ্ঠী অন্তত ৫০ কোটি টাকা পায় বলে গোয়েন্দাদের দাবি। বিধাননগরের এক পুলিশকর্তা রবিবার বলেন, “সুদীপ্ত যাঁদের কাছে টাকা পান বলে দাবি করছেন, তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাঁদের জেরার জন্য ডাকা হবে।” |