একটি সেবামূলক সংস্থার তরফে কলকাতায় কাজ করতে এসে যৌন নিগ্রহের শিকার হলেন আয়ারল্যান্ডের ২১ বছরের এক বিদেশিনি। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার রাতে কালীঘাট এলাকা থেকে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার পার্ক স্ট্রিটের এক নৈশ ক্লাব থেকে সুজয় মিত্র নামের এক যুবক ওই বিদেশিনিকে নিয়ে কালীঘাটের একটি বাড়িতে যান। সেখানেই তাঁর উপরে যৌন নিগ্রহ চালানো হয় বলে অভিযোগ। শনিবার পার্ক স্ট্রিট থানায় এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আয়ারল্যান্ডের ওই তরুণী। পরে ওই অভিযোগটি পাঠিয়ে দেওয়া হয় কালীঘাট থানায়। শনিবার দুপুরে ওই তরুণীর মেডিক্যাল পরীক্ষাও হয়। রাতে পুলিশ সুজয়কে গ্রেফতার করে।
রবিবার ধৃতকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হলে বুধবার পর্যন্ত তাঁকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। ধৃতের আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য জানান, “এক বিদেশিনিকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগে কালীঘাট থানার পুলিশ সুজয় মিত্রকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে।” |
অভিযুক্ত সুজয় মিত্রকে হাজির করা হচ্ছে আলিপুর আদালতে। |
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে পার্ক স্ট্রিটে এক ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। প্রশ্ন ওঠে রাতের শহরে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়েও। ওই ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করা হলেও মূল অভিযুক্ত এখনও পলাতক। কাকতালীয় ভাবে এ বারেও ঘটনার সূত্রপাত সেই পার্ক স্ট্রিট এলাকার ওই নৈশ ক্লাব থেকেই।
এ দিন ওই তরুণী বলেন, “এমন একটা ঘটনা যে এ শহরে ঘটতে পারে, তা আমার কল্পনারও বাইরে। তবে এটাকে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই ভাবতে চাই আমি। কলকাতার প্রতি আমার ধারণা এই একটা ঘটনায় বদলে যাবে না। তবে অপরাধী যাতে শাস্তি পায়, সে জন্য আমি প্রাণপণ চেষ্টা চালাব।”
পুলিশ জানিয়েছে, গত শুক্রবার ছিল ওই তরুণীর জন্মদিন। পুলিশের কাছে তিনি জানিয়েছেন, জন্মদিন উপলক্ষে বন্ধুদের জন্য পার্ক স্ট্রিটের ওই নৈশ ক্লাবে পার্টির আয়োজন করেছিলেন তিনি। তরুণী জানান, শুক্রবার রাতে পার্টির আগে এক বন্ধুর সঙ্গে কেনাকাটার জন্য তিনি নিউ মার্কেট এলাকায় যান। সেখানেই ওই বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয় অভিযুক্ত সুজয়ের সঙ্গে। তিনি সুজয়কেও ওই পার্টিতে আসার আমন্ত্রণ জানান।
বিদেশিনির বয়ান থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, আলাপের পরে সুজয় তাঁদের একটি ট্যাক্সি করে ওই ক্লাবে নিয়ে যান। অভিযোগ, পার্টি শেষে ভোর তিনটে নাগাদ ওই তরুণী কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়লে সুজয় তাঁকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে চান। বাড়ি গিয়ে ভাল ‘মিউজিক’ শোনানোর কথাও বলেন। ওই তরুণী সুজয়ের কথায় রাজি হয়ে তাঁর সঙ্গে একটি ট্যাক্সিতে ওঠেন। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে তরুণী জানিয়েছেন, কালীঘাটের একটি বাড়িতে তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন সুজয়। কিন্তু তিনি তখন এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যে, তাঁর সব কিছু মনে নেই। ভোরবেলা কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরে তিনি বুঝতে পারেন, সুজয় তাঁর উপরে যৌন অত্যাচার চালিয়েছেন। শনিবার সকালে সুজয়ের বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি চলে যান মধ্য কলকাতার এক হোটেলে। কলকাতায় এসে গত সপ্তাহখানেক সেখানেই আছেন তিনি। |
কালীঘাটের এই বাড়িতেই ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ। |
পুলিশ সূত্রে খবর, হোটেলে ফেরার পরে ওই তরুণী তাঁর এক পরিচিতের মাধ্যমে কথা বলেন কলকাতা পুলিশের এক প্রাক্তন কর্তার সঙ্গে। ওই কর্তার পরামর্শ অনুযায়ী তিনি অন্য এক বিদেশিনিকে সঙ্গে নিয়ে পার্ক স্ট্রিট থানায় যান। সেখানে নিজের অভিযোগ জানান। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা এ দিন বলেন, “পার্ক স্ট্রিট থানায় ওই তরুণী প্রথমে তাঁর অভিযোগ জমা দেওয়ার পরে থেকে আমরা জানতে পারি ঘটনাটি ঘটেছে কালীঘাট থানা এলাকায়। তখন আমরাই গাড়ির ব্যবস্থা করে অভিযোগপত্র-সহ অভিযোগকারিণীকে কালীঘাট থানায় পাঠিয়ে দিই।”
পুলিশ জানায়, অভিযোগ জমা দিলেও অভিযুক্ত সম্পর্কে কিছুই জানতেন না ওই তরুণী। শনিবার রাতে পুলিশ তাঁকে সঙ্গে নিয়ে হানা দেয় সুজয়ের এসপি মুখার্জি রোডের বাড়িতে। সেখানেই সুজয়কে ওই তরুণী শনাক্ত করলে বছর ৩৪-এর ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়।
এক অপরিচিতের কথায় এতটা বিশ্বাস করে কী ভাবে তাঁর বাড়ি চলে গেলেন ওই বিদেশিনি? এক তদন্তকারী অফিসার এ দিন বলেন, “হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ার সূত্রে সুজয় দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। সেই সূত্রে বিদেশি আদবকায়দাও ভালই রপ্ত আছে তাঁর। কথায় ভুলিয়ে ওই তরুণীকে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।”
আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা ওই তরুণী সেবামূলক সংস্থার কাজে এর আগেও কলকাতায় এসেছেন। এই দফায় গত মে মাসের প্রথম দিকে তিনি দিল্লি আসেন। সেখান থেকে দার্জিলিং হয়ে তৃতীয় সপ্তাহে কলকাতা পৌঁছন। এ মাসের মাঝামাঝি তাঁর এ দেশ ছাড়ার কথা ছিল। |