কুড়িতে বুড়ি। বাংলায় প্রচলিত এই কথাটি খুবই খাটে সেনসেক্সের ব্যাপারে। এক বার কুড়ি হাজার ছুঁলেই যেন তেজ হারিয়ে ফেলে। বেশ কয়েক বার ঘটল এই ঘটনা। ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার পর বারবার বাজার ভেঙে যাওয়ায় হতাশ ছোট লগ্নিকারীরা। ক্রমশই ক্ষীণ হচ্ছে বাজারের প্রতি আস্থা। নতুন করে ইক্যুইটিতে প্রবেশ করছেন কম মানুষ।
২০০৮-’০৯ থেকে শুরু করে ২০১২-’১৩। পাঁচ বছরের এই লম্বা সময় ধরে কখনওই বাজারে জোরালো আশা এবং নিশ্চয়তার পরিবেশ দেখা যায়নি। প্রথম ২/৩ বছর ছিল আন্তর্জাতিক মন্দা। শেষের দু’বছর ভারতীয় অর্থনীতিতে মন্দা। উৎপাদন হ্রাস, চড়া মূল্যবৃদ্ধি, উঁচু সুদের হার, রফতানি কমে আসা, চলতি খাতে লেনদেনে ঘাটতি ইত্যাদি কারণ কখনওই সূচককে একটি গণ্ডি পেরোতে দেয়নি। |
সুদ কমবে এই আশায় কয়েক বার সূচক উঠেছে ঠিকই, কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দরাজ হাতে সুদ না-কমানোয় এবং বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি সুদ হ্রাসের সুবিধা শিল্পের হাতে তুলে দিতে নারাজ হওয়ায় বারবার হতাশ হয়েছে বাজার। ১৭ জুন আর এক দফা সুদ কমার সম্ভাবনা যখন বেশ জোরালো হচ্ছিল যে-আশার ফানুসে চেপে সেনসেক্স আবার কুড়ি হাজার ছাড়িয়েছিলতাতে আবার ছিদ্র দেখা দিয়েছে ডুব্বুরি সুব্বারাওয়ের একটি ছোট্ট উক্তিতে। তাঁর মতে, বাজার দর আবার বেড়ে উঠবে না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। অর্থাৎ সুদ কমছেই, এটা আর ধরে নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে আবার হতাশ বাজার। মূলত এরই জেরে সূচক শুক্রবার এক দিনে নামে ৪৫৫ পয়েন্ট। এই পতনে অবশ্য ইন্ধন জুগিয়েছে চতুর্থ তিন মাসে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার ৪.৮ শতাংশে নেমে আসার খবর ও বিশ্ব বাজারের দুর্বলতা।
আর্থিক বৃদ্ধির পরিসংখ্যানে বাজার যতটা না হতাশ, তার থেকে বেশি আতঙ্কিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে। সুদ কমছেই এমন নিশ্চয়তা নেই, অন্য দিকে ডলারের দাম পৌঁছে গিয়েছে ৫৭ টাকার দোরগোড়ায়। এতে অনেকটা বেড়ে উঠবে আমদানি বিল।
শেষ পর্বে কিছু খারাপ কোম্পানি ফলাফলও এসেছে। আশার কথা একটাই, সময় মতো আসছে স্বাভাবিক বর্ষা। এ দেশের অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব অনেক। ইনফোসিসের নতুন করে ‘নারায়ণ পুজো’ আস্থা ফেরাতে পারে অগ্রণী এই প্রযুক্তি কোম্পানির প্রতি। অর্থনীতির সঙ্কট কাটাতে এমনই একটি ‘মূর্তি’ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন ।
অবশেষে গরিবদের কথা ভাবতে শুরু করেছে সরকার, সেবি এবং আরবিআই। গত সপ্তাহে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ‘বাজার থেকে টাকা তুলছে’ এমন সব কোম্পানি সম্পর্কে সাবধান করেছে মানুষকে। বলা হয়েছে, একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফসি) আমানত সংগ্রহের অনুমতি পেয়েছে কি না, তা দেখে নিতে হবে আরবিআই ওয়েবসাইট www.rbi.org.in-এ। কোনও কোম্পানি যদি বাজারের তুলনায় উঁচু হারে সুদের প্রতিশ্রুতি দেয়, তবে সাবধান হতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী, এনবিএফসি সর্বাধিক ১২.৫০% সুদ দিতে পারে। বলা হয়েছে, টাকা জমা দেওয়ার পর সব তথ্য-সংবলিত জমার রসিদ যেন সংগ্রহ করা হয়। কোনও অভিযোগ থাকলে তা জানাতে হবে স্থানীয় থানা অথবা রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিজ-এর দফতরে।
|