পশ্চিমবঙ্গের কোথায় কোথায় নতুন বিমানবন্দর গড়া সম্ভব, তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গঠন করলেন ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া)। কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বেদপ্রকাশ অগ্রবাল জানিয়েছেন, কমিটি খুব শিগগিরই রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট জমা দেবে। তার পরে ঠিক হবে, প্রস্তাবিত বিমানবন্দরগুলির পিছনে কত টাকা ঢালা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় আসার পর থেকে বলে আসছেন, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তিনি বিমান যোগাযোগ স্থাপন করতে চান। সেই মতো কোচবিহারে বিমান চলাচল শুরুও হয়েছিল। কিন্তু এক দিকে যাত্রীর ঘাটতি, অন্য দিকে নিয়মিত উড়ানের অভাবে তা কিছু দিন পরে বন্ধ হয়ে যায়। তবে সম্প্রতি মহাকরণে বিভিন্ন বিমানসংস্থার সঙ্গে আয়োজিত এক বৈঠকে মমতা রাজ্যে আরও বেশি বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তায় ফের জোর দিয়েছেন।
তার পরেই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে কমিটি গঠনের এই ঘোষণা। মহাকরণের বৈঠকে কর্তৃপক্ষের তরফে স্বয়ং চেয়ারম্যান বেদপ্রকাশ উপস্থিত ছিলেন। রবিবার তিনি বলেন, “বিমান ওঠা-নামা সম্ভব, এমন প্রায় ২৯টি এয়ারস্ট্রিপ (ছোট রানওয়ে) পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। অধিকাংশের সংস্কার প্রয়োজন। কমিটি-সদস্যেরা সেগুলোর হাল খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবেন।” সূত্রের খবর: শুধু রানওয়ে সংস্কার নয়, ওখানে উড়ান চালানোর বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতাও যাচাই করবে কমিটি। অর্থাৎ কোনও বিমানসংস্থা প্রস্তাবে আগ্রহী হবে কি না, কেমন যাত্রী মিলতে পারে, এ সবেরও ইঙ্গিত থাকবে রিপোর্টে।
আর তার ভিত্তিতেই স্থির হবে বিনিয়োগের বিষয়টি। যেখানে বিমান চালিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে লাভ করা সম্ভব, সেখানেই বিমানবন্দর প্রকল্পে লগ্নি করা হবে বলে কর্তৃপক্ষ-সূত্রে জানানো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এই মূহূর্তে শুধু কলকাতা ও বাগডোগরায় নিয়মিত যাত্রী-উড়ান চালু। বাগডোগরায় যাতে রাতে বিমান উঠতে-নামতে পারে, তার চেষ্টা চলছে। কলাইকুন্ডা-পানাগড়-ব্যারাকপুর-হাসিমারায় শুধু ফৌজি বিমান ওঠা-নামা করে।
এ দিকে কলকাতার উপকণ্ঠে বেহালায় একটা বড় রানওয়ে পড়ে রয়েছে। বিমানবন্দর-সূত্রের খবর: কোচবিহার ও বেহালায় বিমান ওঠা-নামার পরিকাঠামো বহাল করতে খুব বেশি টাকার দরকার নেই। আপাতত কোচবিহারে রানওয়ের দৈর্ঘ্য বাড়ানো হচ্ছে, বেহালায় চলছে পাঁচিল তোলার কাজ। বেহালায় মূলত হেলিকপ্টার পরিষেবা ও কোচবিহারে ছোট বিমান পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। অন্ডালে একটি বেসরকারি বিমানবন্দর তৈরি হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছে, মালদহ ও বালুরঘাটেও নিয়মিত বিমান চলাচল করুক। ওই দু’শহরেও দু’টো পুরনো এয়ারস্ট্রিপ রয়েছে। “আসানসোল, বহরমপুর, বিষ্ণুপুর, ধুবুলিয়া, শালবনি-সহ আরও কিছু জায়গায় ছোট ছোট এয়ারস্ট্রিপ পড়ে রয়েছে। সেগুলো সারিয়ে-সুরিয়ে ছোট বিমান বা হেলিকপ্টার চালানো যেতে পারে। তবে তার আগে কয়েকটা ব্যাপার খতিয়ে দেখা দরকার। যেমন, আশপাশে জনবসতি কী রকম, উঁচু আবাসন রয়েছে কি না ইত্যাদি।” বলেন বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের রিজিওনাল এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর শুদ্ধসত্ত্ব ভাদুড়ি, যিনি নিজে
কমিটিতে রয়েছেন।
কিন্তু রাজ্যে শিল্পায়নের গতিতে তো কার্যত ভাটার টান! এ অবস্থায় ছোট ছোট শহরে বিমান বা কপ্টার চালাতে কেউ উৎসাহ দেখাবে?
শুদ্ধসত্ত্ববাবুর কথায়, “মহারাষ্ট্রের ছোটখাটো অনেক শহরে ছোট বিমান ও হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু হয়েছে।” এ রাজ্যেও তা হতে পারে বলে বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের একাংশ আশাবাদী। রাজ্য সরকার অবশ্য এই মুহূর্তে শিল্পের প্রসঙ্গ এড়িয়ে পর্যটনে জোর দিতে চাইছে। মহাকরণের একাংশের দাবি: পশ্চিমবঙ্গে পর্যটনের উন্নয়ন যে গতিতে হচ্ছে, তাতে অচিরে হলদিয়া-দিঘা-তাজপুর-শান্তিনিকেতন বা সুন্দরবনের মতো এলাকায় ছোট বিমান বা হেলিকপ্টার পরিষেবার চাহিদা তৈরি হবে।
বিমানসংস্থাগুলোর কী বক্তব্য?
একটি বিমানসংস্থার এক কর্তার মন্তব্য, “আগে তো বেহালা চালু হোক! দেখা যাক, সেটা কতটা সফল হচ্ছে। তার পরে বালুরঘাট-মালদহ ইত্যাদির কথা ভাবা যাবে।” |