সোমবার ফের পড়েছে শেয়ার বাজার। এ দিন সেনসেক্সের পতন হয়েছে ১১২ পয়েন্ট। সূচক নেমে এসেছে ১৫,৩৭৯.৩৪ অঙ্কে। যা গত ২৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে নীচে। ২০০৯ সালের অগস্টের পর সেনসেক্স এত নীচে নামেনি। এই নিয়ে গত চারটি লেনদেনে টানা পড়ছে বাজার। ওই ক’দিনে সূচক পড়েছে ৬২৩ অঙ্ক। পাশাপাশি, দু’দিন বাড়ার পর দিনের শেষে ডলারে টাকার দাম পড়েছে ১৬ পয়সা। বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির শেয়ার বিক্রি এবং আমদানিকারীদের ডলারের চাহিদা বাড়ার জেরেই টাকার এই পতন বলে বাজার সূত্রের খবর। বাজার বন্ধের সময়ে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৫২.৮৬/৮৭ টাকা।
শেয়ার বাজারের পতনে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন, সেনসেক্স কি গত মন্দার মতোই ফের ৮ হাজারের ঘরে নেমে আসবে? বিশেষজ্ঞদের একটা অংশ অন্তত তাই মনে করছেন। অবস্থার পরিবর্তন না-হলে বাজার যে ক্রমশ তলানির দিকেই যেতে থাকবে, সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশই একমত। এ নিয়ে প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে-র মন্তব্য: “সেনসেক্স ফের ৮ হাজারের ঘরে যাবে কি না, বলতে পারব না। তবে কোনও সন্দেহ নেই যে, ইউরোপে ঋণ সঙ্কটের জেরে বিশ্ব জোড়া সমস্যার পাশাপাশি দেশের আর্থিক হালও ২০০৮-এর মন্দার সময়ের থেকে খারাপ অবস্থায়।” এর জন্যই ভারতের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সমস্যা হতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা। মন্তব্যের ব্যাখ্যায় অজিতবাবু বলেন, “২০০৮ সালের তুলনায় বর্তমান আর্থিক অবস্থার তথ্যগুলি মিলিয়ে দেখলেই প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে।” অজিতবাবুর মতো বাজার বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ২০০৮ সালে বাজার মূলত পড়েছিল মন্দার আতঙ্কে। কিন্তু সে সময়ে বাজারের মৌলিক উপাদানগুলি ছিল অনেক মজবুত। দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল অনেক বেশি। মূল্যবৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। ডলারে টাকার দাম ছিল অনেক ভাল জায়গায়। শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার এতটা তলানিতে নামেনি। এখন দেশের আর্থিক অবস্থাই সমস্যার মধ্যে পড়েছে।
সেনসেক্সের ৮ হাজারের ঘরে নামা নিয়ে কিন্তু কোনও সংশয় নেই আর্থিক সংস্থা ফিনশোর গোষ্ঠীর সিইও লক্ষ্মণ শ্রীনিবাসনের। তিনি বলেন, “অবস্থার পরিবর্তন না -হলে সূচক যে গত মন্দার সময়ের মতো ৮ হাজারের ঘরে নামবে, তাতে সন্দেহ নেই।” কত দিনের মধ্যে ওই অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে? শ্রীনিবাসন বলেন, “মাস ছয়েকের মধ্যেই সূচক ৮ হাজারে নামতে পারে। আমার ধারণা, বাজেটের আগেই তা ১২ হাজারে নেমে যাবে।” এই অবস্থার জন্য বিশেষজ্ঞরা কেন্দ্র ও রাজনৈতিক দলগুলিকেও দায়ী করছেন। অজিতবাবু ও শ্রীনিবাসন উভয়েই মনে করেন, “কেন্দ্রের আর্থিক নীতি এখন সম্পূর্ণ দিশাহীন। ক্রমাগত সুদ বাড়িয়ে শিল্পোৎপাদনকে সমস্যার মুখে ফেলা হয়েছে। বিলগ্নিকরণ পরিকল্পনাও শিকেয়।” পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলির বিরোধিতায় আর্থিক সংস্কারও থমকে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। |