ব্লক অফিসের সামনে ম্যারাপ বেঁধে তৈরি হয়েছে শিবির। তৃণমূলের পতাকা লাগানো সেই শিবিরে সব সময় হাজির শ’খানেক লোক। মনোনয়ন তোলা-জমার কাজে যেতে হলে শিবির পেরোনো ছাড়া গতি নেই। আর তা করতে গেলেই পড়তে হচ্ছে বাধার মুখে, বারাবনিতে এমনই অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। তাদের আরও অভিযোগ, ব্লক অফিসের একশো মিটারের মধ্যে এই শিবির থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। যদিও একশো মিটারের মধ্যে এমন কোনও শিবির রয়েছে, তা তাঁদের জানা নেই বলে দাবি বারাবনির বিডিও উজ্জ্বল বিশ্বাসের।
বারাবনির সিপিএম নেতৃত্ব জানান, মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দিতে পারার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে তাঁরা স্বস্তিতে। শনিবার আসানাসোলে মহকুমাশাসকের অফিসে একপ্রস্থ মনোনয়ন জমাও দিয়েছেন তাঁদের প্রার্থীরা। সে দিনই নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনে ফ্যাক্স পাঠিয়েছেন তাঁরা। |
বারাবনি ব্লক অফিসের সামনে সেই শিবির। ছবি: শৈলেন সরকার। |
বারাবনিতে আটটি পঞ্চায়েতে মোট আসন ৯২টি। গতবার তা ছিল ৭৯। পঞ্চায়েত সমিতিতে আসন ২১টি, যা গতবার ছিল ১৯। মোট ১০৬ টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোটদাতা প্রায় ৮৪ হাজার। মনোনয়নের প্রক্রিয়া শুরুর আগের রাত থেকেই অশান্তি শুরু হয় বারাবনির নানা এলাকায়। এক সিপিএম নেতার বাড়িতে বোমাবাজি ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বৃহস্পতিবার ব্লক অফিসের কাছেই জামগ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য মনোনয়ন তুলে ফেরার পথে ওই শিবিরের সামনেই তাদের এক নেতাকে মারধরের অভিযোগ করেছে সিপিএম। দলের বারাবনি জোনাল সম্পাদক অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, এ সব রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি বারাবনির বিডিও-কেও জানানো হয়। কিন্তু ব্লক প্রশাসনের হেলদোল নেই।
বারাবনিতে গিয়ে দেখা যায়, ব্লক অফিসের অদূরে রয়েছে ওই অস্থায়ী শিবির। বিরোধীদের অভিযোগ, তাদের প্রার্থীদের ব্লক অফিসে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে ওই শিবিরে থাকা লোকজন। শনিবার তাদের কয়েক জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময়ে ওই শিবির থেকে অস্ত্র নিয়ে তাঁদের তাড়া করা হয় বলেও অভিযোগ সিপিএমের। তাঁরা শেষে মহকুমাশাসকের অফিসে মনোনয়ন জমা দেন। শিবির করার কথা স্বীকার করেছে তৃণমূল। তবে দলের ব্লক নেতা পাপ্পু উপাধ্যায়ের দাবি, “আমাদের প্রার্থীদের মনোনয়নের কাজের সুবিধার্থে শিবির করা হয়েছে। অন্য কাউকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না।”
ব্লক অফিসের একশো মিটারের মধ্যে পর্যাপ্ত সশস্ত্র বাহিনী রাখা ও অবাঞ্ছিত জমায়েত না করার যে নির্দেশ নির্বাচন কমিশন দিয়েছে, মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরুর দিন থেকেই বারাবনিতে তা মানা হয়নি বলে অভিযোগ করছেন সিপিএম নেতারা। এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্লক অফিসে দু’তিনজন রাইফেলধারী পুলিশ থাকলেও বাকিদের হাতে শুধু লাঠি। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, পর্যাপ্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনছে।
কেন্দ্রের একশো মিটারের মধ্যে রাস্তার পাশে তৃণমূলের অস্থায়ী শিবির রয়েছে কী ভাবে, সে প্রশ্নে বারাবনির বিডিও উজ্জ্বলবাবুর দাবি, এ সব কিছুই তাঁর জানা নেই। সিপিএমের যদিও দাবি, বিষয়টি তাঁরা একাধিক বার বিডিও-কে জানিয়েছেন। বিডিও-র বক্তব্য, “যা বলার মহকুমাশাসক বলবেন।” মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বলেন, “প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে এক জন এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।” |