ব্লক অফিসের সামনে ম্যারাপ বেঁধে তৈরি হয়েছে শিবির। তৃণমূলের পতাকা লাগানো সেই শিবিরে সব সময় হাজির শ’খানেক লোক। মনোনয়ন তোলা-জমার কাজে যেতে হলে শিবির পেরোনো ছাড়া গতি নেই। আর তা করতে গেলেই পড়তে হচ্ছে বাধার মুখে, বারাবনিতে এমনই অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। তাদের আরও অভিযোগ, ব্লক অফিসের একশো মিটারের মধ্যে এই শিবির থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। যদিও একশো মিটারের মধ্যে এমন কোনও শিবির রয়েছে, তা তাঁদের জানা নেই বলে দাবি বারাবনির বিডিও উজ্জ্বল বিশ্বাসের।
বারাবনির সিপিএম নেতৃত্ব জানান, মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দিতে পারার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে তাঁরা স্বস্তিতে। শনিবার আসানাসোলে মহকুমাশাসকের অফিসে একপ্রস্থ মনোনয়ন জমাও দিয়েছেন তাঁদের প্রার্থীরা। সে দিনই নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনে ফ্যাক্স পাঠিয়েছেন তাঁরা। |
বাঁ দিকে, জেমারিতে ভাঙচুর সিপিএম পার্টি অফিস।
ডান দিকে, পাণ্ডবেশ্বরে অফিস
ভাঙচুরের অভিযোগে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ তৃণমূলের।—নিজস্ব চিত্র। |
তাদের প্রার্থী ও কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তৃণমূলের হুমকি চলছেই, শিল্পাঞ্চলে এমনই অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, লাউদোহাসর্বত্রই এই ঘটনা ঘটছে বলে তাদের অভিযোগ।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিবেক হোমচৌধুরীর দাবি, রানিগঞ্জের আমকোলা, অমৃতনগর, হারাভাঙা, কাঁকরডাঙা-সহ নানা এলাকায় তাঁদের প্রার্থীদের বাড়িতে চড়াও হচ্ছে তৃণমূল। তিনি অভিযোগ করেন, আমকোলায় তাঁদের এক নেতার ছেলেকে মারধর করা হয়েছে। আমকোলা কোলিয়ারির শ্রমিক সংগঠন সিএমএসআইয়ের এক নেতাকেও রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়েছে বলে তাঁর নালিশ। হারাভাঙার বাড়িতে চড়াও হয়ে লুঠ, অমৃতনগরের দলের অফিস ভাঙচুর হয়েছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। বিবেকবাবুর অভিযোগ, “বারবার অভিযোগ করলেও দুষ্কৃতীরা ধরা পড়ছে না।” তবে বাধা পেরিয়ে রানিগঞ্জের পাঁচটি পঞ্চায়েতের মোট ৭৪টি আসনের ৫৬টিতে এবং পঞ্চায়েত সমিতির ১৬টি আসনের মধ্যে ১১টিতে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে বলে সিপিএমের দাবি।
পাণ্ডবেশ্বরে মুচিপাড়ায় সিপিএমের বিরুদ্ধে অফিস ভাঙচুরের অভিযোগে রবিবার সকালে প্রায় এক ঘণ্টা ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে তৃণমূল। দলের ব্লক সভাপতি নরেন চক্রবর্তীর দাবি, শনিবার রাতে মুচিপাড়ায় তাঁদের মোটর ট্রান্সপোর্ট ইউনিয়নের অফিসটি ভাঙচুর করে সিপিএমের লোকজন। পুলিশ কাউকে ধরেনি। যদিও সিপিএমের দামোদর জোনাল কমিটির সম্পাদক তুফান মণ্ডলের পাল্টা দাবি, কার্যালয়টি সিটুর ছিল। মাস দেড়েক আগে তৃণমূল সেটি দখল করে।
সিপিএমের অজয় জোনাল সম্পাদক মনোজ দত্ত অভিযোগ করেন, রবিবার সকালে হিজলগড়া পঞ্চায়েতে তাঁদের প্রার্থী কাজী মহম্মদের ছেলেকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়েছে তৃণমূল। শনিবার বিকেলে রাখাকুড়া সংসদের তাদের প্রার্থী রহিম মাজির বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। শনিবার সত্তর এবং তালতোড়ে তিন প্রার্থীকে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখে তৃণমূল কর্মীরা। তালতোড় মোড়ে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা শিবির তৈরি করেছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। বারবার পুলিশ ও কমিশনকে প্রতিকারের দাবি জানিয়েও সমাধান হচ্ছে না বলে তাদের দাবি। তৃণমূলের জামুড়িয়া ব্লক সভাপতি পূর্ণশশী রায়, রানিগঞ্জ ব্লক সভাপতি সেনাপতি মণ্ডলদের বক্তব্য, “মনোনয়নের তিন দিন বাকি থাকতেই সিপিএম দাবি করছে, ওরা ৭৫ শতাংশ আসনে প্রার্থী দিয়ে ফেলেছে। তাতেই পরিষ্কার, আমাদের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা”
দুর্গাপুর লাগোয়া জেমুয়া পঞ্চায়েত এলাকায় প্রার্থী ও তাঁদের পরিবারের লোকজনকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার। নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন তিনি। তৃণমূল যদিও তা মানেনি।
৩০ মে জেমুয়া পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থীরা দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লক অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে যান। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূল নেতা-কর্মীরা তাদের প্রার্থীদের হেনস্থা করে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। আরও অভিযোগ, পর দিন তাদের প্রার্থী আভা মণ্ডলকে ফোনে গালিগালাজ করা হয় ও হুমকি দেওয়া হয়। সে দিনই কালিগঞ্জ গ্রামে সিপিএম প্রার্থী ও প্রস্তাবকদের বাড়িতে তৃণমূলের লোকজন চড়াও হন। অমলবাবু বলেন, “উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে সব ক’টি বিষয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে জানিয়েছি।”
সিপিএমের জেমুয়া-বিধাননগর লোকাল সম্পাদক পঙ্কজ রায়সরকার জানান, তিনিও আলাদা ভাবে নির্বাচন কমিশনারকে অভিযোগ পাঠিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিধানসভা ভোটের পর থেকে এলাকার কৃষকসভার অফিসটিতে কয়েক বার হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। তাই অফিসটি বন্ধ পড়ে রয়েছে। তৃণমূলের দুর্গাপুরের ৩ নম্বর ব্লক সভাপতি সুনীল চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “সিপিএমের মিথ্যা অভিযোগের জবাব মানুষ পঞ্চায়েত ভোটে দেবেন।” |