|
|
|
|
|
|
|
সাজগোজ... |
|
লগন |
একদিন চড়া রোদ, তো তার পরদিন মেঘ-বৃষ্টি, ভ্যাপসা গরম। এ দিকে ভরপুর বিয়ের লগ্ন।
হালকা সাজই হতে পারে আপনার
ট্রাম্প কার্ড। কী ভাবে? লিখছেন সুচন্দ্রা ঘটক |
হালকা মেক-আপ, অল্প গয়নার সাজও তাক লাগিয়ে দিতে পারে। জানতে হয় শুধু কৌশলটা।
বিয়েবাড়ি মানে মোটেই ভারী সিল্ক, জরি-চুমকির জাঁকজমক নয়। ট্র্যাডিশনাল লুক তৈরি করতে ব্যবহার করা যায় শিফন, জর্জেট, সুতিও।
দিন কয়েক বাদেই বেস্ট-ফ্রেন্ডের বিয়ে? সাজে আপস মোটেই নয়। কিন্তু ভ্যাপসা গরমে জমজমাট সাজেও যাতে স্বস্তিতে থাকা যায়, খেয়াল থাকুক সে দিকেও। ডিজাইনার থেকে মেক-আপ আর্টিস্ট, সকলেরই টিপস্ এ মরসুমে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে হবে হালকার উপরেই। শিফন শাড়ি, লেহেঙ্গাতেও নিজেকে করে তোলা যায় রীতিমতো গর্জাস।
ভিনটেজ লুক-এ মোহময়ী
ভাই-বোন বা প্রিয় বন্ধুর বিয়ের দিনে পরে নেওয়া যায় বিশাল ঘের দেওয়া একটা জর্জেটের লেহেঙ্গা। সম্পর্কটাই তো জমাটি সাজের। সকলের নজর কাড়তে কোমর পর্যন্ত নামার আগেই শেষ হয়ে যাক না চোলিটা। বেশ ওয়েদার-ফ্রেন্ডলিও তো হবে।
ডিজাইনার অভিষেক দত্তের মতে, এ সময় লেহেঙ্গার রং হিসেবে বেশ খুলবে কোরাল পিঙ্ক বা সি গ্রিন। সঙ্গে থাক কানে অথবা গলায় বড়সড় একটা পাথর সেটিং গয়না। তন্বীর এই ফুরফুরে সাজেই মাত হয়ে যাক বন্ধুর দেওর থেকে দাদার বন্ধু, সক্কলে।
সোনার গয়না বাদ যাক
বাড়ির বৌ যতই অল্পবয়সি হোন না কেন, সাজে থাকতে হবে গাম্ভীর্য। তাই বলে গুচ্ছের গয়না আর ভারী ভারী শাড়ি নয়। একটু সেক্সিও দেখাতে হবে যে। সব দিক বজায় রেখে বেছে নেওয়া যায় কেতাদুরস্ত ড্রেপড্ শাড়ি কিংবা লেহেঙ্গা শাড়ি। তা যদি হয় হালকা রঙের শিফনে তৈরি, কথাই নেই। ডিজাইনার চন্দ্রাণী সিংহ ফ্লোরার মত, ভারী সোনার গয়নাগুলো তুলে রাখাই ভাল। হোক না একটু এক্সপেরিমেন্ট নকল গয়না দিয়ে। কুন্দন, পোলকি কত রকমে যে মেতেছে বাজার।
লিনেন কুর্তায় জাঁকজমক
বর-কনের দাদা বা ভাইয়ের সাজ কিন্তু মোটেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্যাচপ্যাচে গরম বলে সাজকে উপেক্ষা করলে চলে নাকি? ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তের কাছে রয়েছে রকমারি টিপস্। হালকা কোনও ধুতি থেকে শুরু করে রঙিন চুড়িদার দিয়ে র-সিল্কের আচকান। সুতির উপরে সুতোর কাজ করা শেরওয়ানিতেও সাজছেন আধুনিক বাঙালি পুরুষ। ছেলেদের জন্য এখন আর কোনও রঙের বাধা নেই। লাল, সবুজ, মেরুনে সেজে ওঠা যায় সহজেই। আরও ফুরফুরে থাকতে পরে নেওয়া যায় যে কোনও রঙের লিনেন-কুর্তা। চন্দেরি কাপড়ের কুর্তাতেও দেখাতে পারে বেশ কন্টেম্পোরারি। কুর্তার উপর গলিয়ে নেওয়া হোক সুতির জওহর কোট। থাকুক হাল্কা জরির কাজ। বললেন অভিষেক। আধুনিক কাটের কোনও সুতির কুর্তার সঙ্গে ইনফর্মাল প্যান্টসেও ঘুরে আসা যায় বন্ধুর বিয়ে থেকে। |
|
শাড়ির বদলে জর্জেটের প্যালাজো বেয়াইদের মেরুন ধুতি
কলিগের বিয়েতে সব ধরনের সাজ না চললেও এখন অবশ্য অতিরিক্ত ফর্মালিটির যুগ শেষ। ধুতি-জওহর কোটের ভিনটেজ সাজে বসেরাও দিব্যি যাচ্ছেন সহকর্মীর বিয়ের আসরে। অফিস ফেরত তেমন কোনও বিয়েবাড়ি ঘুরে আসতে মহিলারা বেছে নিচ্ছেন জর্জেটের পালাজো প্যান্টস্। পুরনো শারারার মতো দেখতে বড় ঘের দেওয়া এই প্যান্টের উপরে হাঁটু ঝুলের একটা টপ আর শিফনের দোপাট্টা। সঙ্গে হালকা ওজনের গয়না। ব্যক্তিত্বের প্রকাশ এর চেয়ে বেশি আর কীসেই বা হতে পারে! ভিনটেজ লুক মানেই তো সব সময়ে একরাশ গয়না আর ভারী সিল্ক নয়। বাঙালি বাড়ির পাত্র-পাত্রীদের বাবা-মায়েরাও এখন রীতিমতো ফ্যাশন কনশাস। এই মরসুমে শাশুড়িদের সাজে টুইস্ট এনেছেন শহরের ডিজাইনারেরা। চন্দ্রাণী জানালেন, লাইট ওয়েট জর্জেটের উপরে হাল্কা সুতো বা জরির কাজ করা শাড়ি বেশ চলছে মা-শাশুড়ি সার্কিটে। জর্জেটের বেস অবশ্য সাদা, পিচ, অফ-ওয়াইট, গ্রে রঙের মধ্যেই ঘোরাফেরা করে। সাহসী হলে বেছে নেন হাল্কা গোলাপি রং।
বাবা-শ্বশুরদের পোশাক তৈরিতেও রঙের বিশেষ গুরুত্ব থাকে, জানালেন শর্বরী। এমন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাদা বা তসর রঙের দিকেই এখনও ঝোঁকেন পুরুষেরা। তবে পালাবদলও হচ্ছে, মত শর্বরীর। জানালেন, বাবারাও মাঝেমধ্যে মেয়ের বিয়েতে মেরুন ধুতি বা নীল পাঞ্জাবি পরার ঝুঁকি নিচ্ছেন।
|
ঠোঁট, চোখ, চুল |
মেক-আপ যত হালকা, এ মরসুমে তাঁকেই দেখাবে বেশি সুন্দরী। শুধু অতিথি নয়, এ কথা খেয়াল রাখবেন কনেরাও।
যাবতীয় কসমেটিক্স হোক ম্যাট ফিনিশ। বলেন মেক-আপ বিশেষজ্ঞ অনিরুদ্ধ চাকলাদার। গ্লসি হবে মেক-আপ সরঞ্জাম, ততই থাকে বিপদের আশঙ্কা। অতিরিক্ত ব্লাশার, আই-শ্যাডো না ব্যবহার করলেই ভাল। অল্প ফাউন্ডেশন আর কমপ্যাক্টেই সম্পূর্ণ হতে পারে সাজ। কাজল, মাসকারাও হোক স্মাজ ফ্রি এবং ওয়াটারপ্রুফ। খোলা চুল নয়, নানা কায়দায় খোঁপা করে তা সাজিয়ে তোলা যায় মরসুমি ফুল দিয়ে। |
|
কনের সাজ
আবহাওয়া যাই-ই থাকুক বিয়ের দিনে বেনারসিটা মাস্ট। তবে লাল রঙের সুতি বা শিফনের উপরে ঝলমলে আধুনিক বেনারসিতে সাজ হয় হটকে। গরমের কথা ভেবে সাজতে চাইলে কিনে ফেলা যায় হালকা গোলাপি বা পিচ রঙের উপরে ম্যাট জরির কাজ করা বেনারসি। সঙ্গে পুরনো দিনের ডিজাইনের ভারী গয়না। কুন্দনের নেকলেস, বড় ঝুমকো, সোনার কান, হাজার তারা হার সবই চলছে।
রিসেপশনের দিনটায় আজকাল সাদার দিকে ঝুঁকছেন বহু আধুনিকাই। চন্দ্রাণী জানালেন, সাদার উপরে সাদা সুতোর কাজের লেহেঙ্গা এই মরসুমে অনেক বাঙালি কনেই বেছে নিচ্ছেন বৌভাতের সন্ধ্যার সাজ হিসেবে। অভিষেকের মতে আবার বাঙালি কনের সাজ হিসেবে লেহেঙ্গা শাড়িটা আরও বেশি মানানসই। হালকা রঙের নেট বা জর্জেটে তৈরি এই ধরনের শাড়ি যেমন এক দিকে ধরে রাখে ট্র্যাডিশন, অন্য দিকে বিয়ের একঘেয়ে সাজে আনে আধুনিকতার ছোঁয়া।
ওড়নাতেও থাকতে পারে নতুনত্বের ছোঁয়া। গরমে আর বেনারসি দোপাট্টায় মাথা ঢাকতে চান না আধুনিকারা। তাই ডিজাইনারদের ঘরেই তৈরি হচ্ছে নেট বা জর্জেট দিয়ে তৈরি নিত্য-নতুন কায়দার ওড়না। যা পরে শাড়ি হিসেবেও পরতে পারবেন নববিবাহিতা তরুণীরা। এই জিনিসের ক্ষেত্রে অবশ্য লাল, মেরুন, কমলা, বেগুনি, ম্যাজেন্টার মতো উজ্জ্বল রং-ই চলছে বেশি। ভারী সিল্ক, ভেলভেট কিন্তু এই মরসুমে এক্কেবারে ‘নো নো’, টিপস্ অভিষেকের।
|
উপহারে বদল |
• আত্মীয় হলে প্রথাগত উপহার দেওয়াই স্বাভাবিক। তার মানেই সোনা-রুপো? এখন কিন্তু অনেকেই অন্য গয়নার দিকে ঝুঁকছেন। তার মধ্যে জনপ্রিয় ‘সুতোয় বাঁধা আদিবাসী গয়না’। রঙিন সুতোয় বাঁধা হালকা লকেট। দাম সাড়ে তিন থেকে চার হাজারের মধ্যে পড়বে।
• হাউজিং বা পাড়াপড়শির ক্ষেত্রে একটু দামি বুটিকের শাড়িই এখন বেশ চলছে বিয়ের বাজারে। কিংবা নামীদামি কোনও দোকানের শাড়িও অনায়াসেই দেওয়া যেতে পারে। এমনকী বিয়ের ক্ষেত্রে গিফ্ট কার্ডও চলতে পারে। সেটা গয়নার দোকানের হোক কী কোনও বুটিকের। সে ক্ষেত্রে আর উপহার কেনার চাপ নিজের উপর থাকল না। যাকে দেওয়া হবে, সে-ই পছন্দ মতো উপহার কিনে নিতে পারবে।
• অফিস কলিগকে দিব্যি একটু দামি ওয়াইনের বোতল দিতে পারেন। ওয়াইন গ্লাস বা টাম্বলার দিলে ব্যাপারটা আরও ক্লাসি হবে।
• সম্পর্ক যদি বন্ধুস্থানীয় হয়, তা হলে ‘কাজের জিনিস’ দিতেই পারেন। কাজের জিনিস বলতে যেটা তারা ব্যবহারও করতে পারবে আবার বাড়ি শিফ্ট করার সময় সঙ্গেও নিয়ে যেতে পারবে। এই ধরনের উপহারের তালিকায় আসছে ওয়্যারলেস মোডেম থেকে এসএলআর ক্যামেরা।
• গিফ্ট যা-ই হোক না কেন, তাতে নিজস্বতা না থাকলে আর কী হল? তার জন্যই পার্সোনালাইজড গিফ্ট। ক্রিস্টাল বলের মধ্যে নবদম্পতির ছবি, কিংবা নব দম্পতিকে দেওয়া ইম্পোর্টেড হাতঘড়িতে তাঁদের নাম লেখা সব কিছুই চলতে পারে গিফটে। |
অরিজিত্ চক্রবর্তী |
|
বর-বেশ
ট্র্যাডিশনাল পোশাক ছাড়া কি আর বিয়ে করা যায়? তবে পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি, আচকান যা-ই পরুন না কেন বিশেষ দিনটায়, তাতে যেন সুতির কাপড়ের একটা লাইনিং থাকে। আবহাওয়া যেমনই থাকুক, ট্র্যাডিশনাল সাজে আর ভয় পেতে হবে না তা হলে। টিপস্ দিলেন ডিজাইনার শর্বরী দত্ত। ডিজাইনার আরও বলেন, বিয়ের পোশাকের জন্য কটন ব্লেন্ড সিল্ক বাছলেও হতে পারে ভ্যাপসা গরমটাকে আয়ত্তে আনা যায়।
তেমন গরম থাকলে পাঞ্জাবিটা খুব জমকালো পরা যায় না ঠিকই। তাতে ভেস্তে যাবে না বিয়ের সাজ। শর্বরীর মতে, একটা জমজমে ধুতি অন্য মাত্রা দিতে পারে গোটা লুকটায়। আধুনিক হালকা রঙের পাঞ্জাবির সঙ্গে বরেরা বেছে নিচ্ছেন শান্তিপুরী কাজ করা চওড়া পাড়ের রঙিন ধুতি। বাঙালি বিয়েতে হিট এখন জরির চওড়া পাড় দেওয়া দক্ষিণী ফ্যাশনের ধুতিও। সাজ এক্কেবারে হটকে করে তুলতে এক্সপেরিমেন্ট করা যায় সরু সম্বলপুরি পাড় দেওয়া ওড়িশার ধুতি অথবা অসমের সুতির ধুতিতেও।
বিয়ে-বৌভাতের সন্ধ্যা দু’টো ছাড়া অন্য অনুষ্ঠানের দিনগুলোয় একটু আধুনিক কায়দার কুর্তার সঙ্গে পরে নেওয়া যায় কোনও ধোতি প্যান্টও। মত অভিষেকের। সর্বক্ষণ যে ঠিক করে ধুতি সামলাতে পারেন না জেন-ওয়াই পাত্রেরা!
|
মডেল: শ্রাবন্তী
ছবি: দেবাশিস মিত্র
মেকআপ ও হেয়ার স্টাইল: নবীন দাস
পোশাক সৌজন্যে: মালবেরিজ্
স্টাইলিং: অজপা মুখোপাধ্যায় |
|
|
|
|
|