দিনভর তুমুল বৃষ্টির ও ঝোড়ো হাওয়ার জেরে বৃহস্পতিবার ব্যাহত হয়েছিল পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া। শুক্রবার একটু বেলার দিকে বৃষ্টি থামতেই আড়শা থেকে পাড়া, রঘুনাথপুর থেকে বলরামপুরব্লকে ব্লকে ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার ভিড়।
পুরুলিয়ার জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি আগেই জানিয়েছিলেন, কোথাও মনোনয়ন জমা করতে যাতে কাউকে অসুবিধায় না পড়তে হয়, তার জন্য প্রতিটি ব্লকে ‘হেল্পডেস্ক’ চালু থাকবে। বেশ কিছু জায়গায় এই ব্যবস্থা চালু থাকলেও কাশীপুরের কংগ্রেস নেতা বসন্ত পট্টনায়কের অভিযোগ, “এখনও অবধি কাশীপুর ব্লকে এমন ‘হেল্পডেস্ক’ চোখে পড়েনি। তবে আমরা মনোনয়ন পেশ করছি।” হুড়া ব্লকে কিন্তু মনোনয়ন পত্র জমা করতে এসে হেল্পডেস্কের সহায়তা পেয়েছেন প্রার্থীরা। মাগুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা, নির্দল প্রার্থী অরূপকুমার পরামানিকের কথায়, “ফর্ম পূরণে আমার সেরকম অভিজ্ঞতা নেই। ব্লকে হেল্পডেস্কের লোকজনই আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন কী ভাবে ফর্ম ভরতে হবে।” এ দিন মনোনয়ন জমা দেওয়া বামফ্রন্ট প্রার্থী, কামারডি গ্রামের মনোহর মাহাতো বলেন, “ওই ডেস্ক থেকে আমিও সহায়তা পেযেছি।”
মনোনয়ন পর্বে এখনও পর্যন্ত কোনও গণ্ডগোলের খবর নেই বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। মনোনয়ন সংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর জন্য কোনও ‘কন্ট্রোল রুম’ খোলা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের আধিকারিক শুভময় ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা নিবার্চনের ঠিক আগে অবশ্যই কন্ট্রোল রুম খুলব। কিন্তু এখন মনোনয়ন জমা পর্ব ব্লকে ব্লকে চলছে। তাই ব্লকেই অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি ব্লকে কমপ্লেন-রেজিস্টার রয়েছে। বিডিও-রাই তা দেখভাল করছেন। তেমন ঘটনা ঘটলে কেউ বিডিও-র কাছে গিয়ে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করবেন।” ঘটনা হল, এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।
ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সভাপতি নিশিকান্ত মেহেতা বলেন, “এখনও আমাদের কোন প্রার্থীকে কোনও ধরনের হুমকি দেওয়ার খবর নেই। তেমন হলে আমরা দলের কর্মীদের বলেছি, তাঁরা নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। নেতৃত্ব ব্লকে গিয়ে অভিযোগ জানাবে। প্রয়োজনে ফোনেও জানাতে পারি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণীন্দ্র গোপ বলেন, “অভিযোগ থাকলে আমরা বিডিও-র কাছে জানাব। জেলাশাসককেও দরকারে জানাব। প্রয়োজনে নিবার্চন কমিশনকে সরাসরি বলব।” জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রথীন্দ্রনাথ মাহাতো জানান, এখনও হুমকি সংক্রান্ত কোনও অভিযোগের কথা তিনি শোনেননি। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর জানিয়েছেন, প্রতি ব্লকেই পুলিশি নিরাপত্তা রয়েছে। এলাকাতেও পুলিশ টহল দিচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কমপ্লেন রেজিস্টারে যে অভিযোগ নথিবদ্ধ হবে, ব্লকের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে বিডিও-ই তার নিষ্পত্তি করবেন। একান্ত বিডিওদের পক্ষে অভিযোগের নিষ্পত্তি করা সম্ভব না হলে থানার ওসি-র কাছে পাঠানো হবে। কেউ যদি ব্লকে উপস্থিত হয়ে অভিযোগ জানাতে সমর্থ না হন? জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “তেমন পরিস্থিতি হলে তিনি ফোনে অভিযোগ জানাবেন। দরকারে এসএমএসও করতে পারেন। শীঘ্রই পর্যবেক্ষকদের মোবাইল নম্বর প্রকাশ করা হবে। সেই নম্বরেও অভিযোগ জানাতে পারেন।”
জয়পুরের বিডিও মেঘনা পাল বলেন, “কমপ্লেন রেজিস্টার রয়েছে। কেউ অভিযোগ জানাতে চাইলে এখানে অভিযোগ জানাতে পারেন।” একই কথা জানান বলরামপুরের বিডিও ভূপ্রভা বিশ্বাস। আড়শার বিডিও মাধব বিসাই জানিয়েছেন, তাঁরা অভিযোগ জমা দেওয়ার জন্য পৃথক বাক্সও রেখেছেন। তা ছাড়া পর্যবেক্ষক এখানে বিভিন্ন দলের বক্তব্য শোনার জন্য সময় দিচ্ছেন। আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কখন উনি দেখা করবেন। এখনও হুমকির কোন অভিযোগ নেই। পুরুলিয়া জেলা পর্যবেক্ষক এন চট্টোপাধ্যায় এ দিন অযোধ্যা পাহাড়ের দু’পাশের দুটি ব্লক আড়শা ও বাঘমুণ্ডির পরিস্থিতি সরেজমিন খতিয়ে দেখেন। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপারে বিডিও-দের কাছে বিশদে খোঁজ নেন পর্যবেক্ষক।
বস্তুত, শুক্রবার বৃষ্টি ধরতেই ব্লকে ব্লকে দেখা গিয়েছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ভিড়। প্রশাসন সূত্রের খবর, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে এ দিন ৪৬৭ জন, পঞ্চায়েত সমিতিতে ৫৮ জন এবং জেলা পরিষদে ২৬ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।
|
নিহতের স্ত্রী জমা দিলেন মনোনয়ন
নিজস্ব সংবাদদাতা • পুরুলিয়া |
মাওবাদীদের হাতে নিহত তৃণমূল নেতা রাজেন মাহাতোর স্ত্রী মণিকা মাহাতো শুক্রবার মনোনয়নপত্র জমা দিলেন। রাজেনবাবু তৃণমূলের ঘাটবেড়া-কেরোয়া অঞ্চল সভাপতি ছিলেন। ২০১০ সালের ২৯ জুলাই মাওবাদীরা কুমারডি মোড়ে তাঁকে গুলি করে খুন করেছিল। ঘটনার কিছু দিন আগে সিপিএমের হাত থেকে আস্থাভোটে ওই পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল। |