মে মাসেই যেন বন্যার ভ্রূকুটি বাঁকুড়ায়! সৌজন্যে নিম্নচাপের ভারী বর্ষা।
নাগাড়ে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় জেলার জনজীবন ভালই বিপর্যস্ত হয়েছে। বেশি প্রভাব পড়েছে খাতড়া ও বিষ্ণুপুর মহকুমার কয়েকটি ব্লকে। নদীতে জল বেড়ে ব্যাহত হয়েছে যান চলাচল। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সিমলাপাল, রাইপুর, হিরবাঁধ, জয়পুর, সোনামুখী ব্লকে শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। ভৈরববাঁকি ও শিলাবতী নদীতে জল বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকে যানচলাচল বন্ধ থাকে বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাস্তায়। দুর্ভোগে পড়েন বহু মানুষ। নদী ছাপিয়ে জল জমেছে বহু এলাকায়।
গত বছর সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিতে জল বেড়ে গিয়ে রাইপুর ব্লকের ভৈরববাঁকি নদীর কজওয়েতে হড়পা বানে ভেসে যায় একটি যাত্রিবাহী বাস। ঘটনায় প্রাণ যায় ন’জন যাত্রীর। নদীর কজওয়েটিকে ভেঙে পাকা সেতু বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু, আজও সেই কাজ শুরু হয়নি। তবে, দুর্ঘটনা এড়াতে এ দিন কজওয়েতে যান চলাচল নিষিদ্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। মোতায়েন করা হয় পুলিশও। ফুলকুসমার বাসিন্দা প্রহ্লাদ মল্লিক, অমর মুর্মুদের ক্ষোভ, “ফি বছর বর্ষাতেই ভৈরববাঁকির কজওয়ে ডুবে যায়। যানচলাচল বন্ধ থাকে। সমস্যায় পড়ি আমরা। দুর্ঘটনার পর ভেবেছিলাম কজওয়েটি ভেঙে দ্রুত সেতু গড়া হবে। আমাদের সমস্যা কিছুটা কমবে। কিন্তু কিছুই হল না।” |
সিমলাপালে শিলাবতীতে বানের ফলে কজওয়েটি জলের তলায় চলে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সিমলাপালের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সারেঙ্গা ও রাইপুর ব্লকের। সারেঙ্গার বাসিন্দা রঞ্জন রজক বলেন, “সকালে বাঁকুড়া যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলাম। বানের ফলে আটকে গেলাম।” বিক্রমপুরের বাসিন্দা কৌশিক সিংহবাবু বলেন, “সিমলাপাল ছাড়া আশেপাশে এটিএম নেই। সকালে টাকা তুলতে যাব বলে বেরিয়ে বানের জন্য আটকে পড়ি। টাকাই তুলতে পারলাম না।” অবিলম্বে কজওয়ে বদলে সেতু বানানোর দাবি তুলেছেন সিমলাপালের বাসিন্দা উত্তম সিংহবাবুর মতো অনেকেই।
খাতড়া মহকুমাশাসক শুভেন্দু বসু বলেন, “বৃষ্টির কারণেই নদীতে জল বেড়ে যানচলাচল দিনভর সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে, আশা করছি রাতের মধ্যেই জল নেমে যাবে।” ভৈরববাঁকিতে সেতু গড়ার কাজ কেন শুরু হল না, সে বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, “এটা পূর্ত দফতর দেখছে। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।” বৃষ্টিতে যাঁদের ঘরবাড়ি ভেঙেছে, তাঁদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক বিজয় ভারতী। নিম্নচাপের বৃষ্টিতে গ্রীষ্মকালীন ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না বলেই জানিয়েছে কৃষি দফতর। বাঁকুড়ার উপ কৃষি অধিকর্তা অনন্ত নারায়ণ হাজরা বলেন, “এই বৃষ্টি গ্রীষ্মকালীন আমন চাষের সুবিধা করল।” |
বাঁকুড়া ডিএম বাংলোর কাছে ভেঙেছে গাছ। |
পুরুলিয়ায় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটা থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটা অবধি বৃষ্টি হয়েছে ১৪৩ মিলিমিটার। এ দিন বান্দোয়ান-পুরুলিয়া রাস্তায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। বোরো থানার বসন্তপুর গ্রামের কাছে একটি কালভার্ট সংস্কারের কাজ চলছিল। পাশের জমিতে সাময়িক রাস্তা বানানো হয়েছিল। বুধবার থেকে চলা বৃষ্টির জেরে ওই রাস্তাও জলের তলায় চলে যাওয়ায় বান্দোয়ান থেকে বোরো, মানবাজার হয়ে পুরুলিয়াগামী গাড়ি আটকে পড়ে। বিডিও (মানবাজার ২) পার্থ কর্মকার জানান, জল একটু কমে এলে দুপুরের পর থেকে গাড়ি যাতায়াত শুরু হয়েছে। পূর্ত (সড়ক) দফতরের মানবাজারের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সৌমেন্দু সরকার বলেন, “হঠাৎ টানা বৃষ্টি হবে বোঝা যায়নি। কর্মীরা বালিবস্তা ও পাথর ফেলে গাড়ি পারাপারের ব্যবস্থা করেছেন শনিবার থেকে অবস্থা স্বাভাবিক হবে।”
|