আদালতের রায়ে তাঁরা সশ্রম কারাদণ্ড প্রাপ্ত কয়েদি। ফলে গারদের ভিতরে হাড়ভাঙা খাটুনিই তাঁদের দস্তুর। বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের বরাবরের ওই নিয়ম শুক্রবার ভেঙে ফেললেন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিরাই।
তাদের ধুসর জীবনে শুক্রবার থেকে নেমে এল রঙের খেলা। এ দিন বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ঘরের মেঝেয় সতরঞ্জি বিছিয়ে ইজেলে তুলি দিয়ে তাঁরা আঁকলেন নানান রঙের ছবি। কাগজের ক্যানভাসের সঙ্গেই তাঁদের মনের ক্যানভাসেও এ দিন রং শুধু রং। তাঁদের কথা বার্তায় তাই স্পষ্ট।
শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ওই ছবি আঁকার ক্লাস চলবে আজ, শনিবার দুপুর পর্যন্ত। একদা যে হাতে ‘অন্যায়’ হয়েছিল বলে তাঁরা আজ জেলবন্দি সেই হাতেই শুক্রবার তারা তুলে নিলেন রঙতুলি। তাদের হাতে ওই রঙতুলি তুলে দিলেন বৌবাজার বিষ্ফোরণ ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রসিদ খান। রসিদের ওই দলে রয়েছেন হ্যাপি সিং, দিলীপ লেট ও বাপি বাউড়ির মতো ১৬ জন কয়েদি। বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে থাকা সাজাপ্রাপ্ত আবাসিকদের তাঁরা শুক্রবার সকাল থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া
শুরু করেন। |
বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের সুপার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এখানের ৯ জন মহিলা আর ৭ জন পুরুষ আসামিকে রঙতুলি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিয়ে আলিপুরের ওই দলটি চলে যাবে উত্তরবঙ্গে। সেখানে তিনটি সংশোধনাগারের আবাসিকদের প্রথম পর্বের অঙ্কন প্রশিক্ষণ কর্মশালা চলবে ৯ জুন পর্যন্ত।” তারপর কার কোন দিকে ঝোঁক তা জানার পর ফের শুরু হবে পরবর্তী পর্যায়ের অঙ্কন প্রশিক্ষণ শিবর।
আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ১১ জন আবাসিক, আলিপুর মহিলা বিশেষ সংশোধনাগারের ৫ জন আবাসিক ও সাজার মেয়াদ উর্ত্তীণ হওয়া আরও ২ জন মিলে মোট ১৮ জনের একটি দল গড়েছে রাজ্য কারা দফতর। সংশোধনাগারের ভিতরে তাঁদের ২০০৭ সাল থেকে আঁকার প্রশিক্ষণ দিয়েছে কলকাতার চিত্রশিল্প সংস্থা ‘প্রাইড টু হারমনি ফাউন্ডেশন’। ওই সংস্থার শিল্পী তথা কর্মকর্তা চিত্ত দে বলেন, “রসিদ খান-সহ ১৮ জনের ওই দলটি নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বহরমপুরে এসেছে। সঙ্গে এসেছেন কারা বিভাগের ডি আই জি রণবীর কুমার।” রঙতুলির পসরা নিয়ে বাস বোঝাই কয়েদিদের সফরসঙ্গী রণবীর কুমার শুক্রবার সকালে বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে আঁকার কর্মশালার উদ্বোধন করেন রসিদ খানদের আঁকা ছবির একটি ফোল্ডার প্রকাশ করে। ‘প্রাইড টু হারমনি ফাউন্ডেশন’-এর কর্মকর্তা চিত্ত দে বলেন, “হাত দিয়ে ছবি আঁকা হয় না। আঁকা হয় মন দিয়ে। আমরা কেবল তাঁদের রঙতুলির ব্যবহার, ক্যানভাস এ সব সর্ম্পকে সচেতন করি। তাঁরা নিজেদের মতো আঁকে। সেখানে থকে তাঁদের মধ্যে অঙ্কন শিল্পের কোন দিকে কার কি রকম ঝোঁক রয়েছে তা অনুধাবন করার চেষ্টা করি। পরে তাঁদের সাহ্যয্য করা হয়।” ওই উদ্যোগের শুরু ২০০৭ সালে। আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ও আলিপুর মহিলা বিশেষ সংশোধনাগারে ৬ বছর ধরে ছবি আঁকার ওই কমর্শালা থেকে কৃতী শিল্পীর জন্ম হয়েছে বলে কারা দফতরের দাবি। ওই কৃতীদের দিয়ে রাজ্যের অন্য জেলা ও মহকুমার সংশোধনাগার গুলিতে ছবি আঁকার কমর্শালা করার কথা ভাবা হয়। |