স্বর্ণযুগের স্বর্ণমুদ্রা মিলল মুর্শিদাবাদের রাস্তায়
‘স্বর্ণযুগে’র স্বর্ণমুদ্রা।
মুর্শিদাবাদের গণকর ও উমরপুর এলাকায় রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে গ্রামবাসীরাই সম্প্রতি খুঁজে পেয়েছেন গুপ্তযুগের অন্তত শ’দেড়েক স্বর্ণমুদ্রা। সেগুলি এখনও প্রশাসনের হাতে পৌঁছয়নি। তবে কয়েকজন গ্রামবাসীর কাছ থেকে পাওয়া মুদ্রার ছবি ও বিবরণ শুনে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই মুদ্রাগুলি চতুর্থ ও পঞ্চম শতকের গুপ্ত রাজাদের আমলের।
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের প্রাক্তন অধিকর্তা গৌতম সেনগুপ্ত বলেন, “মুদ্রাগুলি গুপ্তযুগের। এক সঙ্গে বেশ কয়েকটি এই ধরনের মুদ্রা উদ্ধার হওয়ার বিশেষ ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে।”
কী সেই তাৎপর্য? গৌতমবাবুর কথায়, “অনেক দিন ধরেই বাঙালি ইতিহাসবিদদের একটি অংশ অনুমান করেছেন, এই অঞ্চলটি সম্ভবত গুপ্তদের আদি ভূমি। তাঁদের এই অনুমানের ভিত্তি হল চৈনিক পরিব্রাজকদের বিবরণ। সে কারণেই এখন এই অঞ্চলের নতুন করে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।”
মুর্শিদাবাদ থেকে পাওয়া স্বর্ণমুদ্রা। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
রাজ্য প্রত্ন দফতরের উপ-অধিকর্তা অমল রায় জানান, এই এলাকার কাছেই ষষ্ঠ শতাব্দীতে শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ। বড়ঞার ঢেকাতেও পাওয়া গিয়েছে কাছাকাছি সময়ের প্রত্ন নিদর্শন। তিনি বলেন, “এ বার এই মুদ্রাগুলিও পাওয়ার পরে তাই ভাগীরথীর ধারে ওই এলাকা গুপ্তযুগের একটি বড় নগর বা বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল বলে অনুমান করা যায়।” তাঁর কথায়, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে মুদ্রাগুলি প্রথম চন্দ্রগুপ্ত, সমুদ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলের। তাই দীর্ঘকাল ধরেই এই মুদ্রাগুলি এই এলাকায় প্রচলিত ছিল। সেক্ষেত্রে এই এলাকায় গুপ্তযুগের প্রভাবও যে অনেকদিন ধরেই ছিল, তা-ও বলা যায়।”
আহিরণে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পশ্চিম দিকে চার লেনের রাস্তা তৈরি করতে মাটি ফেলেছে একটি ঠিকাদারি সংস্থা। গণকর ও উমরপুর থেকে যন্ত্রে মাটি কেটে এনে সেই মাটি ফেলা হয়েছিল। সেই মাটিই ফেলে রাস্তাও তৈরি করা হয়েছে। তবে পিচ এখনও পড়েনি। সেই মাটির রাস্তায় বৃষ্টি হয়ে কাদা হয়ে গিয়েছে। সেখান থেকেই গত কয়েকদিন থেকে এই স্বণর্র্মুদ্রা পাওয়া যাচ্ছে। ওই ঠিকাদার সংস্থার এক অধিকর্তা রজনীকান্ত মহাপাত্র বলেন, “রাস্তা তৈরির জন্য গণকর থেকে যে কালচে মাটি এবং উমরপুর থেকে যে এঁটেল মাটি আনা হয়েছিল তা থেকেই ওই স্বর্ণমুদ্রাগুলি পেয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।”
মুদ্রাগুলিতে উৎকীর্ণ ধনুকপাণি রাজার বিপরীতে রয়েছেন যে নারী, তিনি মহিষীও হতে পারেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক সুরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, “এই ধরনের রাজা-রানি উৎকীর্ণ করা মুদ্রা প্রথম চন্দ্রগুপ্তের আমলেই হওয়া সম্ভব। এখানে ‘চন্দ্র’ কথাটাও রয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে ‘শ্রীবিক্রমঃ’ কথাটাও উৎকীর্ণ রয়েছে। তা থেকে আবার মনে হয় এই মুদ্রা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের। তবে সেই ক্ষেত্রে গুপ্তযুগের মুদ্রা সম্ভারে এটি একটি নতুন সংযোজন।” উপবিষ্ট অবস্থাতেও লক্ষ্মীর প্রতিকৃতি গুপ্তযুগের মুদ্রায় প্রচুর মিলেছে। হাতে ধ্বজা বা রাজদণ্ড ধরা রাজার প্রতিকৃতি দেওয়া মুদ্রাগুলির সমুদ্রগুপ্তের সময় থেকে প্রচলন শুরু হয়। সুরেশবাবু বলেন, “ওই মুদ্রাগুলির একটিতে পরিষ্কার লেখা রয়েছে ‘কাচ’ বলে গুপ্ত রাজার নাম। কাচকে কেউ কেউ সমুদ্রগুপ্তের সঙ্গে অভিন্ন মনে করেন। সমুদ্রগুপ্তের আর একটি পরিচয় ‘সর্বরাজোচ্ছেত্তা’-ও ওই মুদ্রায় উৎকীর্ণ রয়েছে। তাতে মনে হচ্ছে মুদ্রা সমুদ্রগুপ্তেরই হতে পারে।”
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের রূপেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ভারতীয় ইতিহাসে গুপ্তযুগ সার্বিক ভাবেই সমৃদ্ধ যুগ ছিল। কেউ কেউ স্বর্ণযুগও বলেন। তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এবং চলতেও থাকবে। কিন্তু সেই গুপ্তযুগের বিস্তারের প্রমাণ বাংলার মাটিতেও মেলা অত্যন্ত গৌরবের কথা।” তিনি জানান, কুমারগুপ্ত, বুধগুপ্ত, বৈন্যগুপ্ত, দামোদরগুপ্তের মতো রাজাদের প্রভাব এই অঞ্চলে ছিল। সমুদ্রগুপ্তের ইলাহাবাদ প্রশস্তি শিলালিপি থেকেও জানা যায়, এই অঞ্চল গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল।
এলাকাতে পুলিশ পিকেট বসেছে শুক্রবার দুপুর থেকে। জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “মোটামুটি শ’দেড়েক স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গিয়েছে। তার খোঁজ চলছে। সব কটি’ই উদ্ধার করতে আমরা সচেষ্ট।” শনিবারই এলাকাতে যাচ্ছেন রাজ্য প্রত্ন দফতরের আধিকারিকেরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.