|
|
|
|
৪ জুন থেকে শুরু কাউন্সেলিং |
বি এডে ফি না বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অনড় বিশ্ববিদ্যালয়
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
অনেক টালাবহানার পরেও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেসরকারি কলেজ মালিকদের বিরোধ মিটল না। অবশ্য এর মধ্যেই বিএডের কাউন্সেলিংয়ের দিন ঘোষণা করে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগামী মঙ্গলবার থেকে কাউন্সেলিং শুরু হওয়ার কথা। চলবে ১৮ তারিখ পর্যন্ত। প্রথম দু’দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার ও বুধবার চাকুরিরত আবেদনকারীদের কাউন্সেলিং, বৃহস্পতিবার থেকে সাধারণ আবেদনকারীদের কাউন্সেলিং চলবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
যদিও কাউন্সেলিংয়ে যোগ দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বেসরকারি বিএড কলেজের মালিকেরা। এঁদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রও। কারণ, এ বার ফি বৃদ্ধির দাবিতে জোরদার আন্দোলনে নেমেছিলেন কলেজ মালিকেরা। যদি ফি বৃদ্ধি না করা হয় সে তা হলে ১০ শতাংশ ‘ম্যানেজমেন্ট কোটা’র দাবি করেছিলেন তাঁরা। তা নিয়ে উপাচার্যের নির্দেশে একটি কমিটিও তৈরি হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই কমিটি বেসরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর ‘ম্যানেজমেন্ট কোটা’ দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু সম্প্রতি এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকে তা মানা হয়নি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের কারণে চলতি শিক্ষাবর্ষে বিএডের ফি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও পরিবর্তন ঘটানো যাবে না। অর্থাৎ চলতি শিক্ষাবর্ষেও পুরনো ফি-ই বজায় থাকবে। পরের বছর ফি বৃদ্ধি বা ম্যানেজমেন্ট কোটার বিষয়টি ফের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকে তোলা হবে। অ্যাসোসিয়েশন অব সেল্ফ ফিনান্সিং বিএড কলেজেজ এর সম্পাদক অরুণাভ মণ্ডলের যুক্তি, “ফি-এর সঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সম্পর্ক কী? তেমন হলে নির্বাচনের পরেই ভর্তি করা হোক। তাতে এমন কিছু দেরি হবে না। আর কর্তৃপক্ষ যদি তা না মেনে নেন তা হলে আমরা কাউন্সেলিংয়ে যোগ দেব না।” বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তে বেজায় ক্ষুব্ধ রাজ্যের মন্ত্রী তথা বেসরকারি বিএড কলেজের মালিক সৌমেন মহাপাত্রও। তাঁর কথায়, “রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় লক্ষ লক্ষ টাকা ফি-তে পড়ানো হবে আর বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কয়েকগুন কম টাকায় পড়াতে বাধ্য করা হবে তা চলতে পারে না। ফি বাড়ানো না হলে আমরা কাউন্সেলিংয়ে যাব না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয় দেখি।” উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মেনেই কাউন্সেলিংয়ের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। আশা করব, ছাত্র স্বার্থে সমস্ত কলেজ সহযোগিতা করবে।”
শুধু তাই নয়, সম্প্রতি ডিপিআই থেকে এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সরকারি কলেজের সঙ্গে বেসরকারি কলেজেও চাকুরিরত আবেদনকারীদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই দাবিও মানতে রাজি হয়নি। সেই দাবিতে শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মারকলিপিও দেন। কারণ, বিএড না করতে পারলে মাইনে বৃদ্ধি হয় না। কেন তা কার্যকরী করা হল না? উপাচার্যের যুক্তি, “নির্দেশ পাওয়ার আগেই আমাদের এক্সিকিউটিভ কাউন্সেলিংয়ের বৈঠক হয়ে গিয়েছিল। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে তা কার্যকরী করা হবে।”
২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ন্তগত বেসরকারি কলেজগুলি ফি বৃদ্ধির দাবি সোচ্চার হতে থাকে। তখন শিক্ষার্থী পিছু ৩৫ হাজার টাকা ফি ধার্য করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১২-১৩ শিক্ষবর্ষেও ফের ফি বৃদ্ধির দাবিতে কলেজগুলি সোচ্চার হওয়ায় তা বাড়িয়ে শিক্ষার্থী পিছু ৪৩ হাজার টাকা করা হয়। চলতি আর্থিক বছরে বেসরকারি কলেজগুলি দাবি করে, নূন্যতম ফি ৬১ হাজার টাকা করতে হবে, অথবা ১০ শতাংশ ম্যানেজমেন্ট কোটা অর্থাৎ কলেজের নিজেদের খুশি মতো ফি-তে ছাত্র ভর্তি করতে দিতে হবে। কিন্তু তাতেই বাদ সাধে কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের সাফ কথা, “কাউন্সেলিংয়ে না গেলে যদি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কলেজের অনুমোদন বাতিল করে তো করুক। কারণ, ফি বৃদ্ধি না করলে মাইনে দিতে পারব না। কলেজ বন্ধ করে দেব। তখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে না পারা ছাত্রদের দায়িত্ব নেবে?” এটা যে সম্ভব নয় তা মানছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশই। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত ২৩টি কলেজের মধ্যে ১৭টি কলেজই বেসরকারি। মাত্র ৬টি কলেজ সরকারি। যেখানে মাত্র ৬০০ আসন রয়েছে। বাকি ১৭টি কলেজ মিলিয়ে রয়েছে ১৮০০ আসন। বেসরকারি কলেজগুলি কাউন্সেলিংয়ে না এলে এই শিক্ষার্থীদের কী হবে? এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অবশ্য সদুত্তর নেই। |
|
|
|
|
|