উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
উদাসীন প্রশাসন
এ ভাবেই পড়াশোনা
ভাঙাচোরা বাড়ি। টিনের চালে বেশ কয়েকটি গর্ত দিয়ে ভিতরে আসছে রোদ-বৃষ্টি। আলগা হয়ে গিয়েছে টিনের জোড়াগুলিও। ফলে বর্ষায় পড়াশুনোর সামগ্রী ও খাবার বাঁচাতে বার বার সেগুলিকে এ দিক ও দিক সরাতে হয়। দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে এ ভাবেই বছর ছয়েক ধরে চলছে কেন্দ্রীয় সরকারের সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের (আইসিডিএস) ৭৮ ও ৮০ নম্বর ইউনিট দু’টি।
১০ নম্বর ওয়ার্ডের লিচুবাগান প্রাথমিক স্কুলের পরিত্যক্ত বাড়িতে বর্তমানে চলছে ৭৮ ও ৮০ নম্বর আইসিডিএস স্কুল দু’টি। স্কুলের কর্মীরা জানালেন, গত বছর এবং এ বছর একবার করে টিনের চাল উড়ে গিয়েছিল। তাই পড়ুয়াদের বিপদ থেকে বাঁচাতে বারান্দায় চট পেতে বসাতে হয়। জোরে হাওয়া বইলে ফের চাল উড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ছুটি দিতে হয় পড়ুয়াদের। এ ভাবেই বছর ছয়েক ধরে চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয় দু’টি।
এক তলা টিনের চালের নীচে দু’টি ঘরের একটিতে শিশুদের বসার ব্যবস্থা। পাশের ছোট ঘরটিতে চলে তাদের জন্য রান্নার কাজ। খুদে পড়ুয়াদের বসার ঘরটির (প্রায় ১২০ বর্গফুটের) দেওয়ালেও ফাটল ধরেছে। টিনের চালে মরচে ধরে গর্ত হয়ে গিয়েছে। ফলে বৃষ্টির জল ভিতরে পড়ে। রোদে টিন গরম হয়ে গিয়ে পড়ুয়া ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দুঃসহ অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের অভিযোগ, ঘরে বিদ্যুতের সংযোগ নেই। গরমে শিশুদের বারান্দায় মাদুর পেতে বসাতে হয়। কিন্তু সেখানেও কার্নিসে ফাটল ধরেছে। পাশের টিনের চালটিকে কোনও মতে বাঁশের খুঁটির সাহায্যে ঠেকা দিয়ে রাখা রয়েছে। একটু জোরে হাওয়া বইলে গোটা স্কুল বাড়ির টিনের চাল বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে।
আরও অভিযোগ, স্কুলের কয়েক গজের মধ্যেই রয়েছে একটি আবর্জনা ফেলার জায়গা। সেখানে আবর্জনার পাশাপাশি পশুর মৃতদেহও ফেলা হয়। ওই আবর্জনা পচে গেলে দুর্গন্ধে স্কুলের মধ্যে থাকাই দুরূহ হয়ে ওঠে। পুরসভার পক্ষ থেকে স্কুলের কাছে একটি শৌচাগার তৈরি করা হলেও সেটি চালু হয়নি আজও। ফলে আইসিডিএস কেন্দ্রের শিশু ও মহিলাকর্মীদের খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। এক শিশুর অভিভাবক সুধা গোলদার বললেন, “বিদ্যুৎ না থাকায় খুবই সমস্যা হয়। স্কুলে পাখা নেই, জল নেই, স্কুলবাড়িটিও ভাঙাচোরা। আমরা যথেষ্ট ভয়ে থাকি।”
৭৮ ও ৮০ নম্বর আইসিডিএস কেন্দ্রে ৩ থেকে ৬ বছরের প্রায় ২৫ জন শিশু রয়েছে। ৩ বছরের কমবয়সী শিশু রয়েছে প্রায় ২৪ জন। ৭৮ নম্বর আইসিডিএস কেন্দ্রের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সীমা পালচৌধুরী বলেন, “বার দুয়েক স্কুলবাড়ির টিনের চাল উড়ে গিয়েছে। সেটা নিজেদের টাকায় কোনওমতে মেরামত করতে হয়েছে। তার উপরে স্কুলের পাশে ওভারহেড জলাধার তৈরির সময়ে কাঠের পাটাতন পড়ে গিয়ে চালের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। জানালার গ্রিল চুরি হয়ে গিয়েছে। খুবই দুরবস্থার মধ্যে রয়েছি।” ৮০ নম্বর কেন্দ্রের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বুলা রাজবংশী বললেন, জোরে বৃষ্টি হলে চাল দিয়ে জল পড়ে। আবার জলের ঝাপটায় বারান্দাতেও বসা যায় না। স্কুল ছুটি দিয়ে দিতে হয়। চাল মেরামতির কোনও ব্যবস্থা হয়নি আজও।”
দক্ষিণ দমদম পুরসভার পুরপ্রধান তৃণমূলের অঞ্জনা রক্ষিত বললেন, “বিষয়টি জানতাম না। খবর নিয়ে দেখছি দ্রুত কী করা যায়।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.