যেন একের পর এক বুলেট এসে লাগছে গায়ে। ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে শরীরটা। রাস্তা-ঘাটে, অফিসে, ক্লাবে, শপিং মলে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কে, বন্ধুদের আড্ডায়... সর্বত্র ক্রিকেটের ঝুড়ি-ঝুড়ি বদনাম শুনছি আর টের পাচ্ছি ক্রিকেটারদের প্রতি আমজনতার অবিশ্বাস কতটা দানা বেঁধেছে। এবং তখনই এমনটাই গায়ে গুলি খাওয়ার মতো ভয়ঙ্কর উপলব্ধি হচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে এ সব বন্ধ করো। আর সহ্য করতে পারছি না!
ফিক্সিং-কেলেঙ্কারি নিয়ে সারা দেশ জুড়ে এই ছিছিক্কার কবে বন্ধ হবে জানি না। বিশ্বাস করুন, ক্রিকেটের গায়ে এই কলঙ্কের পাঁক মাখানোটা আর দেখতে পারছি না। যা বটে, তার চেয়ে অনেক বেশি রটছে। যা নয়, সবাই তা-ই বলতে শুরু করেছে। আসলে ঠিক কতটা সত্যি, কতটা সত্যি নয়, তা ঠিক মতো জানি না বলেই অস্বস্তিটা আরও বাড়ছে।
কোনও ব্যক্তি তো আর ক্রিকেট খেলাটার উর্ধ্বে নয়। এখানে ক্রিকেটাররাই আসল। সারা বছর ধরে যাঁরা ক্রিকেটারদের মাথায় তুলে রাখেন, সেই অগুনতি ক্রিকেটপ্রেমীরাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই মানুষগুলো যখন ঠকছেন, খেলাটার প্রতি তাঁদের বিশ্বাস যখন একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে, তখন তো ক্রিকেটের সঙ্গে সরাসরি জড়িত প্রতিটি মানুষেরই উচিত যার যার নিজস্ব দায়িত্বটুকু পালন করে ক্রিকেটকে ঝাঁঝরা হওয়া থেকে বাঁচানো। |
শুক্রবার সকালেই যখন খবর পেলাম, সচিন তেন্ডুলকর অবশেষে বিবৃতি দিয়ে ব্যাপারটা নিয়ে তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছে, তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। এই প্রথম ভারতীয় দলের কোনও বর্তমান ক্রিকেটার এ ভাবে বিষয়টা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাল। আর নামটা যখন সচিন তেন্ডুলকর, যাকে গোটা দেশ ক্রিকেটের ঈশ্বর বলে মানে, তখন নিশ্চয়ই আমার মতো সারা দেশের ক্রিকেটভক্তরাই আস্বস্ত হয়েছেন।
আরও একটা খবরেও শুক্রবারের স্যাঁতস্যাঁতে সকালে চাঙ্গা হলাম। হ্যাঁ, সিদ্ধার্থ ত্রিবেদীর বিবৃতি দেওয়ার কথাই বলছি। শুনলাম ও পুলিশের কাছে গিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এটাই বলতে যে, ওকে কেউ নাকি স্পট ফিক্সিংয়ে জড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ও সেই ফাঁদে পা দেয়নি। সিদ্ধার্থের এই দায়িত্বজ্ঞান, কর্তব্যবোধ দেখে ভাল লাগছে। ওকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি। এই তো দিন দশেক আগেই বাবা হয়েছে ছেলেটা। সে দিনই মুম্বই এয়ারপোর্টে দেখা হয়েছিল। যতটুকু মিশেছি, তাতে মনে হয়েছে, ও খুব শক্ত মনের ছেলে। তাই ওর এই পদক্ষেপে আমি খুব একটা অবাক হইনি। আমার বিশ্বাস, গত কয়েক দিন ধরেই ও ছটফট করছিল। শেষ পর্যন্ত আর থাকতে না পেরেই এমন একটা পদক্ষেপ করল। ক্রিকেটের এই কলঙ্কমোচনে যার যতটুকু করা দরকার, ততটুকু তো তাকে করতেই হবে।
আজ আমার নিজের যদি এ ভাবে পুলিশের কাছে কিছু বলার থাকত, আমিও পিছপা হতাম না। কিন্তু বিশ্বাস করুন, তেমন কিছু কোনও দিনই চোখে পড়েনি আমার। সামান্যতম সন্দেহজনক কিছু দেখে থাকলেও তা এসিএসইউ কর্তাদের জানিয়েছি। কী করেই বা বুঝব যে, আমাদের পুণে ওয়ারিয়র্সের বিরুদ্ধে ম্যাচেই এমন একটা জঘন্য কান্ড ঘটিয়েছিল শ্রীসন্তরা? কেউই কি বুঝেছিল? মনে হয় না।
তবে ক্রিকেটার, কর্তা, সাপোর্ট স্টাফ সবার কাছে আমার একান্ত অনুরোধ, যে ভাবে সাহায্য করতে পারেন, প্লিজ করুন। দ্বিধা করবেন না। ক্রিকেটের এই বিপদের দিনে ক্রিকেটকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন। ক্রিকেটের যাবতীয় নোংরা আবর্জনা ঝেঁটিয়ে দূর করার সেরা সময় এটাই। যেমন এগিয়ে এসেছে সচিন, সিদ্ধার্থ। সৌরভ, রাহুল, লক্ষ্মণদেরও ধন্যবাদ। ওরা তো আগেই মুখ খুলেছে।
শিরকে-জাগদালের মতো বোর্ডের অন্যতম শীর্ষ কর্তাদের পদত্যাগ এই সমস্যার সমাধান কি না, জানি না। সত্যিই আইসিসি বিসিসিআই-কে ফিক্সিংয়ের ব্যাপারে সাবধান করেছিল কি না, তাও জানা নেই। বোর্ড সভাপতির ইস্তফার দাবিতেও অনেকে সরব। কিন্তু ভয় হচ্ছে, আসল সমস্যা দূরে সরিয়ে রেখে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়ে যায়নি তো? আমার আশঙ্কা যদি সত্যি হয়, তা হলে কিন্তু ক্রিকেটের আব্রু বাঁচানো যাবে না। ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বেসর্বারা, দয়া করে এই কথাটা মাথায় রাখবেন। ক্রিকেট না থাকলে কিন্তু আমরা কেউই থাকব না।
|
অথঃ সিদ্ধার্থ কথা |
পুরো নাম: সিদ্ধার্থ কিশোরকুমার ত্রিবেদী
বয়স: ৩০ বছর ২৬৯ দিন
জন্ম: আমদাবাদ
কর্মস্থল: এয়ার ইন্ডিয়া
রঞ্জি টিম: গুজরাত ও সৌরাষ্ট্র
আইপিএল দল: রাজস্থান রয়্যালস
বিশেষজ্ঞ: ডানহাতি মিডিয়াম পেসার
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে: ৭৮ ম্যাচে ২৬০ উইকেট
টি-টোয়েন্টিতে: ৯৯ ম্যাচে ৯৯ উইকেট
এ বারের আইপিএলে: ১৭ ম্যাচে ১২ উইকেট |
|